রোজার মাধ্যমে তাকওয়া কিভাবে অর্জন হয় ??
সিয়াম সাধনার মাধ্যমে কলুষময় আত্মা ও ক্লেদাক্ত জীবনধারা থেকে বেরিয়ে আসার অপার সুযোগ মাহে রমজানুল মোবারক।রমজান এমন একটি মহা নেয়ামতের মাস, যে ব্যক্তি এ সময়কে আল্লাহর নির্দেশিত পথে ব্যবহার করবে সে ব্যক্তিই নাজাত পাবে। অর্জন করতে পারবে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি, হতে পারবে আল্লাহর প্রিয় বান্দা।
সুতরাং যে এ মাসটিকে আমল-ইবাদতে কাটাতে পারলো না সে যেন ধ্বংসই হয়ে গেল। আর যে এ মাসটিতে নিজ তাকওয়া বৃদ্ধি করতে নিরন্তর চেষ্টা চালাতে থাকে সে ব্যক্তিই আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে জাহান্নাম থেকে নাজাত লাভ করতে পারে।রোজা মুত্তাকির জন্য এক অফুরন্ত নেয়ামতস্বরূপ। কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে মুত্তাকি ক্ষুধা, পিপাসা, কাম, ক্রোধ, লোভ-লালসা পরিত্যাগ করে রোজা পালনে ব্রতী হন।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মাহে রমজানের রোজা পালন করতে গিয়ে রোজার সীমারেখা বুঝে নেবে এবং যে কর্তব্য রোজার ভেতর পালন করা বাঞ্ছনীয়, তা যথার্থভাবে পালন করে চলবে, তার এরূপ রোজা তার বিগত গুনাহের ক্ষমার কাফফারা হয়ে যাবে। (বায়হাকি : ১১৩৪)।
তাকওয়া অর্থ নিছক খোদাভীতিই নয়। বিশ্বপালনকর্তা হিসেবে আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার অনুভূতি নিয়ে যারাই দায়িত্ব পালন করে তারাই মুত্তাকী। তাকওয়া মানে খোদাভীতি, ভয় করা আল্লাহকে।রোজার মূল উদ্দেশ্য তাকওয়ার অধিকারী হওয়া এবং এরই আলোকে মানবজীবন পরিচালনার শক্তি লাভ করা।
কুরআন কারীমে আল্লাহ স্পষ্ট বলেছেন- রোজার মূল উদ্দেশ্য হল তাক্বওয়া হাসিল করা। রোজা পালন করলেই তাকওয়া বা মুত্তাকী হওয়া যায় না। মুত্তাকী হওয়ার জন্য মুত্তাকীর গুণাবলী অর্জন করতে হয়।আমাদের সমাজে মুত্তাকী বলতে বিশেষ পোশাকের মানুষকে মনে করা হয়। তাকওয়াকে বিচ্ছিন্ন কিছু মনে করা হয়। তাকওয়া গুটিকয়েক আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।
মুত্তাকী হতে হলে কুরআনের হেদায়েত পুরোপুরি অনুসরণ করতে হবে।হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, যারা হিদায়াতকে বর্জন করার ক্ষেত্রে আল্লাহর শক্তিকে ভয় করেন এবং তার নির্দেশকে সত্য প্রতিপন্ন করার কারণে রহমতের আশা ছাড়েন না তারাই মুত্তাকী।
মাসব্যাপী রোজা পালন করে যদি তাকওয়া অর্জন করা না যায় তাহলে এ রোজা অর্থহীন উপবাস ও নিছক আত্মপ্রবঞ্চনায় পর্যবসিত হয়। (মুসলিম: ২১৩৪)।এ প্রসঙ্গে হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন- যে ব্যক্তি বাজে কথা ও কাজ ত্যাগ করল না, তার পানাহার ত্যাগ নিছক উপবাস ছাড়া আর কিছু নয়’। (বুখারি : ১৮০৪)।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এ সম্পর্কে আরও এরশাদ করেন- শুধু পানাহার বর্জনের নাম রোজা নয়। রাজা হল অনর্থক ও অশ্লীল কথা-কাজ বর্জন করার নাম। কেউ তোমাকে গালি দিলে বা তোমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলে তুমি তার সঙ্গে তেমনটি না করে কেবল এটুকুই বল আমি রোজাদার’। (মুসলিম : ২৪১৬)।
হজরত রাসূলে কারীম এরশাদ করেন- অনেক রোজাদার এমন, যারা রোজা রেখে কেবল ক্ষুধা-তৃষ্ণায় কষ্ট পাওয়া ছাড়া আর কিছুই পায় না; আর যারা রাত জেগে নামাজ আদায় করে তাদের মধ্যেও এমন বহু লোক আছে, নামাজে দাঁড়িয়ে রাতজেগে কষ্ট করা ছাড়া যাদের আর কোনো লাভ হয় না। (ইবনু মাজাহ : ১৬৯০)।
রমজান মাসের রোজা পালনের মাধ্যমে তাকওয়া অর্জন করতে পারলেই মুত্তাকী হওয়া সম্ভব। মহান রাব্বুল আলামীনের কাছ থেকে জীবনের জানা-অজানা গোনাহের ক্ষমা লাভ করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালাতে হবে।
রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাসে তাকওয়া অর্জন করে জীবনের যাবতীয় গুনাহ আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে নিজেকে মুত্তাকী বান্দাহ হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে। তাহলেই মাহে রমজানের তাকওয়া অর্জন করা সম্ভব হবে। মহান আল্লাহ আমাদেরকে তাওফিক দান করুন। আমিন।লেখক: আলেম সাংবাদিক ও শিক্ষক
সূত্রঃ যুগান্তর