রোহিঙ্গা শিবিরে বার বার অ’গ্নিকাণ্ড – উদঘাটন হয় না রহস্য !!
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরে অ’গ্নিকান্ড ও প্রাণহা’নীর ঘটনা নতুন নয়। গত ৩ বছরে অন্তত ১৫টি অ’গ্নিকান্ডের ঘটনায় ১২ হাজারের বেশি বাড়িঘর ভস্মিভুত হয়েছে। ২০১৮ সালে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে এক অ’গ্নিকান্ডে একই পরিবারের মা-সন্তানসহ ৪ জন মারা যায়। কিন্তু রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে কেন বারবার অ’গ্নিকান্ডের ঘটছে তা অজানাই রয়ে যাচ্ছে।
রোহিঙ্গা শিবিরে অ’গ্নিকান্ড ও প্রাণহা’নীর ঘটনা নতুন না হলেও চারদিন আগের অ’কান্ডের মত ভয়াবহ ঘটনা অতীতে ঘটেনি। এ ঘটনায় সরকারী হিসাবে ১১ জন মারা যাওয়ার কথা জানানো হয়েছে। এছাড়া এ ঘটনায় চারটি রোহিঙ্গা শিবিরের প্রায় ১০ হাজার বাড়িঘর ভস্মিভুত হয়ে ৪৫ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়। এ অ’গ্নিকান্ডের কারণ এখনও অজানা।
এরআগে এ বছরের ১৩ জানুয়ারি টেকনাফে নয়াপাড়ায় রোহিঙ্গা শিবিরে অ’গ্নিকান্ডে ৫৫২টি ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এ ঘটনায় ৩ হাজারের বেশি মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। এর চারদিন পর ১৭ জানুয়ারি উখিয়া পালংখালী শফিউল্লাহ কাটা ১৬ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুণ লেগে চারটি লার্নিং সেন্টার পুড়ে যায়।
পরে উখিয়া থেকে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুণ নিয়ন্ত্রণে আনে। এছাড়া গত ১৯ মার্চ উখিয়ার কুতুপালং ১৭ নং রোহিঙ্গা শিবিরের ৭৩ নাম্বার ব্লকে বিদেশী অর্থায়নে পরিচালিত সেভ দ্য চিলড্রেন হাসপাতালে এবং ১৭ মার্চ টেকনাফের জাদিমুরা রোহিঙ্গা শিবিরে অ’গ্নিকান্ডের ঘটনায় কয়েকটি বাড়ি ভস্মিভুত হয়। এনিয়ে গত আড়াই মাসে অন্তত ৫টি অ’গ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটল।
গেল বছরও অ’গ্নিকান্ডে প্রায় এক হাজার বাড়িঘর ভস্মিভুত হয়। এছাড়া হাসপাতাল, দোকানপাট, মসজিদ, স্কুলসহ আরো প্রতিষ্ঠান আগুনে পুড়ে যায়। গতবছর ১২ মে উখিয়ার লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা শিবিরের ভয়াবহ এক অ’গ্নি’কান্ডে প্রায় ৬০০ বসতি পুড়ে যায়। এর ৫দিনের মাথায় ১৭ মে কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে আগুনে পুড়ে ৩৬২টি বসতঘর ও ৩০টি দোকানপাট পুড়ে যায়। এসব ঘটনায় আরো অর্ধ-শতাধিক রোহিঙ্গা অ’গ্নিদগ্ধ হয়।
গত বছরের ৮ অক্টোবর কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরের সি-ব্লকে আগুণ লাগে অর্ধ শতাধিক বাড়িঘর পুড়ে যায়। একই বছরের এপ্রিল ২৬ কুতুপালং রেজিস্টার্ড রোহিঙ্গা শিবিরে অ’গ্নিকান্ডের ঘটনায় ১৪টি দোকান, ১ এপ্রিল টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চাকমারকুল (পুটিনবনিয়া) রোহিঙ্গা শিবিরে অ’গ্নিকান্ডে স্কুলসহ ১৫ টি বসতঘর ভস্মীভূত হয়।
২০১৯ সালেও রোহিঙ্গা শিবিরে বেশ কয়েকটি অ’গ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। তবে অতীতের সবচেয়ে মর্মান্তিক অ’গ্নিকান্ডের মধ্যে ২০১৮ সালের ১১ জানুয়ারির ঘটনাটি সবচেয়ে হৃদয় বিদারক। এদিন উখিয়ার কুতুপালং ট্রানজিট পয়েন্ট এলাকার রোহিঙ্গা আবদুর রহিমের তাবুতে আগুণ লেগে তার ঘুমন্ত স্ত্রী নুর হাবা (৩০), সন্তান আমিন শরীফ (৮), দিলশান বিবি (১২) ও আসমা বিবি (৫) অ’গ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যায়।
তবে কেন রোহিঙ্গা শিবিরে বারবার অ’গ্নিকান্ডের ঘটছে এবং তা কেন রোধ করা যাচ্ছে না- প্রসঙ্গে কক্সবাজারের অতিরিক্ত শরণাথী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শামসুদ্দোহা নয়ন বলেন, সোমবারের অ’গ্নিকান্ডের ঘটনা তদন্তে সরকার ৭ সদস্যর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছে। গত মঙ্গলবার থেকে এ কমিটি কাজ শুরু করেছে। এ কমিটি আগামী ২/৩ দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। আর এ তদন্ত কমিটির রিপোর্ট হাতে পেলে তাদের সুপারিশ অনুযায়ী ভবিষ্যৎ অ’গ্নিকান্ড রোধে আমরা ব্যবস্থা নেব।
কেন রোহিঙ্গা শিবিরে বারবার অ’গ্নিকান্ডের ঘটছে জানতে চাইলে কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কার্যালয়ের উপ- সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ বলেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে কয়েল, গ্যাসের চুলা অথবা সিলিন্ডার থেকে আগুণের সূত্রপাত হয়। কিন্তু রোহিঙ্গা শিবিরে ঘন বসতিপূর্ণ ও দূর্গম পাহাড়ী এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় এবং পানি সমস্যার কারণে দ্রুত আগুণ নিয়ন্ত্রণে আনতে সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া অ’গ্নিকান্ড রোধে জনগণকে সচেতন করতেও দমকলকর্মীরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালায়।
তবে কুতুপালং ইউপি সদস্য হেলালউদ্দিন রোহিঙ্গা শিবিরে অ’গ্নিকান্ড রোধে সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগ পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করেন। তিনি বলেন, গত ৩ বছরে রোহিঙ্গা শিবিরে থেকে উদ্ভুত আগুনে শুধু রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর পুড়েনি, স্থানীয়দের দোকানপাট-বাড়িঘরও পুড়েছে। অনেকেই সর্বশান্ত হয়েছে।
উল্লেখ্য ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে (আরাকান) কয়েকটি সেনাচৌকিতে হামলার অভিযোগে রোহিঙ্গাদের উপর নৃশংস দমনপীড়ন শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। এসময় প্রাণ বাঁচাতে ২৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে ৭ লাখ ৪০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা। জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের উপর সেদেশের সেনাবাহিনীর এ নিপীড়নের ঘটনাকে ‘জাতিগত নির্মূলের জন্য গণহত্যার পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ’ হিসাবে আখ্যায়িত করে। বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবির কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে নতুন-পুরাতন মিলে বর্তমানে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে।