শার্ট প্যান্ট টাই কি ইসলামে নিষিদ্ধ ?? জেনে নিন বিস্তারিত !!
ইসলামে পোশাকের নির্দিষ্ট নীতিমালা আছে। নীতিমালা অনুসরণ করে নিজস্ব সংস্কৃতির যেকোনো পোশাক পরিধান করার অবকাশ আছে। তবে সুন্নাহসম্মত পোশাক পরিধান করা উত্তম। স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (সা.) জামা, লুঙ্গি, চাদর ও পাগড়ি পরিধান করেছেন।
তিনি সালোয়ার কিনে অন্যদের হাদিয়া দেওয়ার বিষয়টিও প্রমাণিত। তাই মুসলমানদের উচিত সুন্নাহসম্মত পোশাক পরিধান করা। পশ্চিমাদের কৃষ্টি-কালচার ও সভ্যতা-সংস্কৃতি থেকে দূরে থাকা জরুরি। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে কোট-স্যুট ও প্যান্ট-শার্ট পশ্চিমাদের সংস্কৃতি থেকে আমাদের সংস্কৃতিতে ঢুকে পড়েছে। তাই কাফিরদের সাদৃশ্যপূর্ণ হওয়ায় মৌলিকভাবে এগুলো নিষিদ্ধ হওয়ারই কথা।
এ জন্য প্রথম দিকে ইসলামিক স্কলাররা এগুলো পরিধানকে মাকরুহ বলেছেন। যেমন—মুফতি কেফায়েত উল্লাহ (রহ.) লিখেছেন : ‘কোট-স্যুট এখনো ব্যাপকভাবে প্রচলিত হয়নি, বরং এগুলো খ্রিস্টান ও তাদের অনুসারীদের পোশাক। তাই এগুলোর মধ্যে সাদৃশ্যপূর্ণ হওয়ার নিষেধাজ্ঞা বিদ্যমান।’ (কেফায়াতুল মুফতি : ৯/১৫৯)
আল্লামা জাফর আহমদ থানভি (রহ.) লিখেছেন : ‘কোট-স্যুট ইত্যাদি পরিধান করা ইংরেজদের জাতিগত ঐতিহ্য। সুতরাং এটা পরিধান করা মাকরুহ। আর ইচ্ছাকৃত তাদের আদলে জীবন গঠনের নিয়তে এগুলো পরিধান করা হারাম।’ (এমদাদুল আহকাম : ৪/৩৪১)
মাওলানা ইউসুফ লুদয়ানুভি (রহ.) লিখেছেন : ‘প্যান্ট-শার্ট পরিধান করা মাকরুহে তাহরিমি।’ (আপ কে মাসায়েল : ৮/৩৭১)কিন্তু আজকাল মুসলমানদের মধ্যে কোট-স্যুট, প্যান্ট-শার্ট পরিধান করা ব্যাপকভাবে প্রচলিত। অধিক প্রচলনের কারণে এগুলোকে কাফিরদের ঐতিহ্যবাহী ও জাতিগত নিদর্শনমূলক পোশাক বলা কঠিন।
তাই মুফতি মাহমুদ হাসান গাংগুহি (রহ.) বলেছেন : ‘পাক-ভারত উপমহাদেশে কোট-স্যুট পরিধান করা হারাম নয়, তবে এটি নেককার ও ওলি-আউলিয়াদের পোশাক নয়। তাই এগুলো থেকে দূরে থাকা উচিত।’ (ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া : ১৯/২৬০)
স্মরণ রাখতে হবে, ব্যাপকভাবে প্যান্ট পরিধান করার প্রথা থাকলেও দুটি শর্তে তা পরিধান করা বৈধ। এক. টাখনুর নিচে প্যান্ট পরিধান করা যাবে না। দুই. প্যান্ট ঢিলেঢালা হতে হবে। আঁটসাঁট ও চিপা প্যান্ট পরিধান করা হারাম। কেননা এতে লজ্জাস্থান দৃশ্যমান থাকে।
ভারতবর্ষের আধুনিক যুগের আলেম আল্লামা তকি উসমানি (দা. বা.) লিখেছেন : ‘কেউ যদি গুরুত্বের সঙ্গে এ বিষয়টি আমলে নেয় যে তার প্যান্ট ঢিলেঢালা হবে এবং টাখনুর নিচে তা পরিধান করবে না, তাহলে এমন প্যান্ট পরিধান করা বৈধ। যদিও তা অনুত্তম।’ (ইসলাহি খুতুবাত : ৫/২৯৪)
নারীদের জন্য শার্ট-প্যান্ট পরিধানের বিধান
ওপরে প্যান্ট সম্পর্কে যে আলোচনা করা হলো, তা কেবল পুরুষদের জন্য প্রযোজ্য। প্রাচীন ও আধুনিক ইসলামী পণ্ডিতরা মনে করেন, নারীদের জন্য প্যান্ট পরিধান করা বৈধ নয়। কেননা প্রথমত, এটি কাফিরদের সাদৃশ্যপূর্ণ। দ্বিতীয়ত, এটি পুরুষদের সাদৃশ্যপূর্ণ পোশাক। হাদিস শরিফে এমন সাদৃশ্যপূর্ণ পোশাক পরিধানে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
তৃতীয়ত, প্যান্ট পুরুষদের তুলনায় নারীদের জন্য অধিক লজ্জাহীনতা, পর্দাহীনতা ও উলঙ্গপনার কারণ। এ জন্য নারীদের সর্বাবস্থায় এটি প্রত্যাখ্যান করা উচিত। আর বর্তমানে চুরি বা কুঞ্চিত পায়জামার প্রচলন ঘটেছে। এটা আর প্যান্টের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। এটা পরিধান করলেও নগ্নতা প্রকাশিত হয়।
নারী-পুরুষ একে অন্যের সাদৃশ্য অবলম্বনের বিরুদ্ধে ইসলামে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। তাই চালচলন, ফ্যাশন, পোশাক পরিধান ও সাধারণ অভ্যাসের ক্ষেত্রে একে-অন্যের সাদৃশ্যপূর্ণ হওয়া নিষিদ্ধ।
এ বিষয়ে এখানে কিছু হাদিস উল্লেখ করা হলো : ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) লানত করেছেন নারীদের বেশভূষা ধারণকারী পুরুষদের এবং পুরুষদের বেশভূষা ধারণকারী নারীদের।’ (বুখারি শরিফ, হাদিস : ৫৮৮৫)আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) এক নারীকে পুরুষদের মতো জুতা পরিধান করতে দেখে তাকে অভিশাপ দিয়েছেন।’ (শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৭৪১৮)
নারী-পুরুষের প্রাকৃতিক পার্থক্য ধরে রাখতে হবে জীবনের সব ক্ষেত্রে। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) নারী হতে আগ্রহী পুরুষদের এবং পুরুষ হতে আগ্রহী নারীদের অভিসম্পাত করেছেন এবং বলেছেন, এদের ঘর থেকে বের করে দাও।’ (বুখারি শরিফ, হাদিস : ৫৮৮৬)
নারী-পুরুষের সাদৃশ্যপূর্ণ হওয়ার বিষয়টি ইসলাম খুবই কঠোরভাবে দেখেছে। তাই রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন : ‘পুরুষের সাদৃশ্য অবলম্বনকারী নারীরা আমাদের দলভুক্ত নয়। নারীদের সাদৃশ্যপূর্ণ পুরুষরা আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৪৬২)মহান আল্লাহ আমাদের বোঝার তাওফিক দান করুন। আমিন।