শুধু নিউজিল্যান্ড নয়, করোনামুক্ত আরও যে ৮ দেশ !!

করোনার হানায় বিপর্যস্ত বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ। গত ১০ দিনের মধ্যে নয়দিনই দৈনিক লক্ষাধিক রোগী শনাক্ত হয়েছেন। ইউরোপের কিছু দেশে উন্নতি হলেও বিশ্বব্যাপী মহামারি পরিস্থিতি দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে বলে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এমন বিপদের মধ্যেই চমক দেখিয়েছে নিউজিল্যান্ড। দেশ থেকে করোনাভা’ইরাস পুরোপুরি বিদায় করে দিয়েছে তারা। সেখানে আর একজনও করোনা রোগী নেই। ফলে তুলে নেয়া হচ্ছে সবধরনের নিষেধাজ্ঞাও। এ নিয়ে বিশ্ববাসীর প্রশংসায় ভাসছে দেশটি।

তবে এমন সাফল্য শুধু নিউজিল্যান্ডই নয়, দেখিয়েছে আরও আটটি দেশ। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের দেশগুলোও শক্ত হাতে বিদায় করেছে প্রা’ণঘা’তী করোনাকে। চলুন জেনে নেয়া যাক এ সম্পর্কে-

মন্টেনিগ্রো:

ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সবার শেষে করোনা পৌঁছেছিল মন্টেনিগ্রোতে। গত ১৭ মার্চ প্রথম করোনা সংক্রমণের খবর পাওয়া যায় ৬ লাখ ২২ হাজার জনসংখ্যার দেশটিতে। ধীরে ধীরে আ’ক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩২৪ জনে। তবে সেখানেই শেষ। সংক্রমণ শুরুর মাত্র ৬৮ দিনের মধ্যই নিজেদের করোনামুক্ত ঘোষণা করে দেশটি। আর এ সাফল্যের পেছনে কাজ করেছে কড়া লকডাউন দিয়ে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, সীমান্ত, জনসমাবেশ বন্ধ করার মতো ব্যবস্থাগুলো। করোনা বিদায় নিতেই অবশ্য তুলে নেয়া হয়েছে সব নিষেধাজ্ঞা।

ইরিত্রিয়া:

আফ্রিকার পূর্বাঞ্চলীয় দেশটিতে জনসংখ্যা ৬০ লাখের মতো। গত ২১ মার্চ নরওয়ে-ফেরত এক ব্যক্তির শরীরে প্রথমবারের মতো করোনাভা’ইরাস ধরা পড়ে সেখানে। এরপর সংক্রমণ কিছুটা ছড়ালেও মাত্র ৩৯ জনেই আটকে যায় তা। গত ১৫ মে করোনামুক্তির ঘোষণা দিয়েছে ইরিত্রিয়া। সংক্রমণ প্রতিরোধে তারাও লকডাউন করেছিল গোটা দেশ।

পাপুয়া নিউ গিনি:

দক্ষিণ-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশটিতে গত ২০ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। পরের চার সপ্তাহে সেখানে আ’ক্রান্ত হন আরও সাতজন। ৪ মে’র মধ্যেই অবশ্য সুস্থ হয়ে ওঠেন সবাই। এরপর আর কেউ আ’ক্রান্ত হননি। প্রায় ৮১ লাখ জনসংখ্যার দেশটি সংক্রমণ প্রতিরোধে নিয়েছিল কড়া ব্যবস্থা। রাত্রিকালীন কারফিউয়ের পাশাপাশি বন্ধ করে দেয়া হয় ইন্দোনেশিয়া সীমান্ত। এশিয়া থেকে পর্যটক প্রবেশ পুরোপুরি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। বন্ধ করে দেয়া হয় গণপরিবহন ও জমায়েত। দক্ষ ব্যবস্থাপনার ফলও পেয়েছে তারা হাতেনাতেই।

সিশেলস:

ভারত মহাসাগরীয় দেশটিতে করোনায় আ’ক্রান্ত হয়েছিল মাত্র ১১ জন। ইতোমধ্যেই সুস্থ হয়ে উঠেছেন সবাই। ৯৭ হাজার জনসংখ্যার এ দেশে প্রথম করোনা ধরা পড়ে ১৪ মার্চ। এরপর পরই প্রমোদতরি বন্ধের পাশাপাশি চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি, ইরান ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেয় তারা। এপ্রিলে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরও বাড়িয়েছে সিশেলস কর্তৃপক্ষ।

হলি সি:

ছোট্ট নগররাষ্ট্রটিতে মাত্র ১২ জন আ’ক্রান্ত হয়েছিলেন করোনায়। ৬ জুনের মধ্যে করোনা নেগেটিভ প্রমাণিত হয়েছেন সবাই। সংক্রমণ শুরুর পরপরই সব ধরনের পর্যটন নিষিদ্ধ করেছিল দেশটি। এমনকি পোপ ফ্রান্সিসের জনসমাবেশে উপস্থিতিও বন্ধ করে দেয়া হয়। শহরের বাসিন্দাদের ঘরে বসে কাজ করতে বলা হয়। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে প্রত্যেক বাড়ি দিনে দুইবেলা খাবার পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়।

সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস:

ক্যারিবিয়ান দেশটি করোনামুক্ত হয়েছে গত ১৯ মে। ২৪ মার্চ নিউইয়র্ক-ফেরত দুইজনের মাধ্যমে সেখানে প্রথম সংক্রমণ শুরু হয়। এর পরপরই বন্ধ করে দেয়া হয় বিমানবন্দর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অনাবশ্যক সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। জারি করা হয় কারফিউও। ফলে বিপদ বেশিদূর আগায়নি, মাত্র ১৫ জন আ’ক্রান্ত হয়েছিলেন ৫২ হাজার জনসংখ্যার দেশটিতে। ইতোমধ্যেই সুস্থ হয়ে উঠেছেন সবাই।

ফিজি:

প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যে অবস্থিত দেশটিতে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ১৯ মার্চ। সঙ্গে সঙ্গেই বন্ধ করে দেয়া হয় সবধরনের বিমান চলাচল। বাইরে থেকে আসা সবার জন্যই বাধ্যতামূলক করা হয় ১৫ দিনের কোয়ারেন্টাইন। দেশটিতে মোট ১৮ জন করোনায় আ’ক্রান্ত হয়েছিলেন। তাদের সবাই সুস্থ হয়ে ওঠার পর গত ২০ এপ্রিল নিজেদের করোনামুক্ত ঘোষণা করেছে ফিজি।

পূর্ব তিমুর:

দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশটি করোনা সংক্রমণ শুরুর দিকেই সতর্ক ব্যবস্থা নিয়েছিল। ফেব্রুয়ারিতেই তারা চীন থেকে বিদেশি নাগরিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে, বন্ধ করে দেয় ইন্দোনেশিয়া সীমান্ত। ২১ মার্চ সেখানে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এর পরপর বন্ধ করে দেয়া হয় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, নিষিদ্ধ করা হয় জনসমাবেশ, বিদেশফেরতদের বাধ্যতামূলক ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। দেশটিতে মোট ২৪ জন করোনায় আ’ক্রান্ত হয়েছিলেন। গত ১৫ মে তাদের শেষ রোগীটিও সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন।

সূত্র: নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *