দেশের খবর

শুধু হাঁসের ডিম বিক্রি করে মাসে আয় লক্ষাধিক টাকা, বেকার যুবকদের উদ্দেশ্যে যা বলেন !!

টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার ফাজিলহাটী ইউনিয়নের গাছপাড়া কামারনওগাঁ বিল। এ বিলের পানিকে পুঁজি করে কামারনওগাঁ গ্রামের আমিনুর রহমান গড়ে তুলেছেন একটি ভ্রাম্যমাণ হাঁসের খামার। বছর খানেক আগে ৩৫ হাজার টাকায় এক হাজার জিনডিং ও খাকী ক্যাম্পবেল প্রজাতির হাঁসের বাচ্চা কিনে খামার তৈরি করেন আমিনুর। খামারের বাচ্চাগুলো প্রথম তিন-চার মাস পালনের পর থেকে প্রতিদিন গড়ে ৩ থেকে সাড়ে ৩শ ডিম হচ্ছে এ খামারে।

প্রতি শতক ডিম ১১শ টাকা (৪৪ টাকা প্রতি হালি) দরে খামার থেকেই কিনে নিচ্ছে পাইকাররা। এতে প্রতিদিন সাড়ে তিনশ’ ডিম বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৮শ টাকায়। ওই ডিম বিক্রি থেকে তার প্রতি মাসে উপার্জন এখন এক লাখ ১৫ হাজার টাকা। ৫ মাস যাবৎ ধারাবাহিকভাবে সাড়ে তিনশ’ ডিম তুলছেন আমিনুর। কখনও কখনও খামার থেকে মাসে ৪’শ ডিমও পাচ্ছেন তিনি। তিনি এখন স্বাবলম্বী।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বর্তমানে গাছপাড়া কামারনওগাঁ বিলের পানি শুকিয়ে পুরোটাই এখন আবাদি জমিতে রূপ নিয়েছে। ক’দিন পর এসব জমিতে আবাদ হবে বোরো ধান। তবুও এ বিলের পাশেই ভ্রাম্যমাণ খামার তৈরি করে আমিনুর করছেন হাঁস চাষ। তবে বর্ষা মৌসুমে জমিগুলো জলাশয়ে পরিণত হয়।

যদিও বর্ষা মৌসুমে জলাশয়ে পরিণত হয় এ বিল। তবে এ শীতে বিলের বেশিরভাগ অংশের পানি শুকিয়ে গেছে। মাঝে মাঝে একটু একটু পানি রয়েছে। পাশের এক খণ্ড উঁচু জমির উপর একচালা একটি ঝুঁপড়ি থেকে আমিনুরের কয়েকবার আয়-আয় ডাক শুনে প্যাক-প্যাক আওয়াজ তুলে এক-এক করে চলে আসে দূরে ছড়িয়ে থাকা হাজার খানেক হাঁস। খাবারের সময় মূলত হাঁসগুলোকে কাছে ডাকেন আমিনুর। হাঁস পাহারা দেয়ার জন্য ঝুঁপড়ির এক কোণে শোবার জায়গাও বানিয়েছেন তিনি। ইচ্ছে, চেষ্টা আর অক্লান্ত পরিশ্রমে বিদেশ ফেরত আমিনুর এখন মাসে লাখ টাকা উপার্জন করছে হাঁসের খামার থেকে। ভ্রাম্যমাণ খামারটি একদিকে যেমন বদলে দিয়েছে আমিনুরের ভাগ্য, অন্যদিকে এলাকাবাসী পেয়েছে স্বাবলম্বী হওয়ার প্রেরণা।

হাঁসের খামার নির্মাণের আগ্রহ সম্পর্কে আমিনুর জানান, ১০/১২ বছর আগে গমের ব্যবসা করতেন তিনি। প্রতিদিনের লাভের টাকা থেকে একটি করে হাঁস কিনতেন। এভাবে হয় তার ১৬৫টি হাঁস। হাঁস পালনের লাভ তখন থেকেই বুঝতেন। দীর্ঘদিন হাঁস পালনের টাকায় সংসার চালিয়ে বিদেশে যাওয়ার খরচও জোগাড় করেছিলেন তিনি। উপার্জন বাড়াতে সৌদি আরব যান। সৌদি থেকে ফিরে আবার যান সিঙ্গাপুর। প্রবাসের চেয়ে হাঁস পালনেই বেশি উপার্জন হবে ভেবে দেশে ফিরে আসেন তিনি। দেশে ফিরে প্রথমে বেকার হয়ে পড়েন তিনি। এর ক’দিন পরই প্রায় বছর খানেক আগে ৩৫ হাজার টাকায় এক হাজার জিনডিং ও খাকী ক্যাম্পবেল প্রজাতির হাঁসের বাচ্চা কিনে তৈরি করেন ভ্রাম্যমাণ খামার। হাঁস রাখার জন্য তৈরি করেন ঘর। এ ঘর তৈরিতেও তেমন খরচ হয়নি। ভ্রাম্যমাণ খামার হওয়ায় সবসময় হাঁসগুলো থাকে জলাশয়ে। এর ফলে হাঁসের খাবার খরচ কম হয়।

এ কারণে প্রথমে কামারনওগাঁ সিকদারবাড়ি এলাকায় শশুর বাড়ি, এরপর নিজের বাড়ি অতঃপর কামারনওগাঁর বিলে আনা হয়েছে খামারের হাঁসগুলো। পানি থাকাবস্থায় হাঁসগুলো ওই বিলে থাকে। পানি শুকিয়ে গেলে হাঁসগুলোকে নেয়া হয় অন্যত্র। এ কারণে জলাশয় যেখানে আছে সেখানেই ভ্রাম্যমাণ এ খামারটিকে সরাতে হচ্ছে। এবার পার্শ্ববর্তী এলাসিন ইউনিয়নের সিংহরাগী এলাকায় ধলেম্বরী সংলগ্নে হাঁসগুলো সরানোর কথা ভাবছেন তিনি।জলাশয়ের অভাবে গত ৯ মাসে তিনবার জায়গা বদল করতে হয়েছে তাকে।

তিনি জানান, গত ৪/৫ মাসে খামারের ডিম বিক্রি হয়েছে ৫ লাখ টাকা। খরচ হয়েছে দুই লাখ টাকা। এখনও হাঁসগুলো নিয়মিত ডিম দিচ্ছে। এছাড়া এক হাজার হাঁসের দাম ৪শ টাকা দরে হলে বিক্রি হবে প্রায় ৪ লাখ টাকা। যার সবটুকুই থাকবে তার লভ্যাংশ। এ হিসেবে মাসে লাখের ওপর উপার্জন হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

আমিনুর রহমান আরও জানান, জলাশয়ে ঠিকমতো পানি থাকলে খাবার খরচ কমে যেত। এতে ডিমের দাম আরও কম হত। তবে পানি কমে যাওয়ায় অনেকটা সময় হাঁসগুলো বাড়িতে পালন করতে হয়। এরপরও তার ইচ্ছে চলতি বছরে ৩ হাজার বাচ্চা তার খামারে তুলবেন। বিদেশের চেয়েও এখন তার উপার্জন বেশি হচ্ছে। পার্শ্ববর্তী অনেকে প্রেরণা পেয়ে খামার করার কথা ভাবছেন।

বেকার যুবকদের উদ্দেশ্যে আমিনুর বলেন, হতাশার কিছু নেই। সঠিকভাবে শ্রম দিলে হাঁস পালনে বিদেশি টাকার চেয়েও বেশি উপার্জন করা সম্ভব। অনেকেই এখন তাকে দেখে হাঁস পালনের পরামর্শ নিতে আসছেন। তার দাবি প্রাণী সম্পদ বিভাগ কর্তৃপক্ষ নিয়মিত এসব খামার পরিদর্শন, বিনামূল্যে ভ্যাকসিন সরবরাহ, নিয়মিত পরামর্শ ও সহযোগিতা দিলে খামারিরা উপকৃত হতো। হাঁস পালন একটি লাভজনক প্রকল্প। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ খাতকে একটি সম্ভাবনাময় খাতে রূপ দেয়া সম্ভব বলেও মনে করেন তিনি।

হাঁসের বিষয়ে তিনি বলেন, উপজেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের আওতায় প্রথম ধাপে ১৭ দিন দ্বিতীয় ধাপে ২১ দিন প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তিনি। খামারের প্রাথমিক চিকিৎসা এখন নিজেই দিতে পারেন তিনি। ডিম দেয়ার সময় হাঁসের রোগ কম হয়। তবে এসময় ক্যালসিয়াম কমে যায় বলে জানান তিনি। ডিম দেয়া শুরু করলে হাঁসকে পিএল দিয়ে দেয়। ফলে চিকিৎসা খরচ অনেকটাই কমে এসেছে।

এছাড়াও তার খামারে গম ভাঙা, কুঁড়া আর ধান একত্র করে হাঁসের খাবার তৈরি করেন তিনি। বাজার থেকে কেনা কোনো খাবার (ফিড) তাদের খামারে দেয়া হয় না।

এ প্রসঙ্গে দেলদুয়ার উপজেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগের ভ্যাটেরিনারি সার্জন ডা. মোহাম্মদ আলী জানান, আমিনুরের হাঁসের খামারটি নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ। তবে হাঁসগুলোকে সুস্থ রাখার জন্য নিয়ম মাফিক ভ্যাকসিন এবং ডাক কলেরার টিকা সিডিউল অনুযায়ী দিতে হবে। সরকারের নির্ধারিত মূল্যে ভ্যাকসিনসহ, চিকিৎসা ও পরামর্শ সেবা দেয়া হচ্ছে।

J A Suhag

Local News: J A Suhag writes Local News articles for industries that want to see their Google search rankings surge. His articles have appeared in a number of sites. His articles focus on enlightening with informative Services sector needs. he holds the degree of Masters in Business and Marketing. Before he started writing, he experimented with various professions: computer programming, assistant marker, Digital marketing, and others. But his favorite job is writing that he is now doing full-time. Address: 44/8 - North Dhanmondi, Dhaka Email: [email protected]

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button