শেষ ইচ্ছে পূরণ করতে দেশে ক্যান্সার আ’ক্রান্ত সিঙ্গাপুর প্রবাসী !!
প্রা’ণঘাতী করোনাভা’ইরাসের ভয়াল ছোবলে সারাবিশ্ব যখন এলোমেলো ঠিক তখন ক্যান্সারের সঙ্গে যুদ্ধ শেষে দেশে ফিরেছেন সিঙ্গাপুর প্রবাসী জাহাজ শ্রমিক সিকদার রানা। শুক্রবার (২২ মে) রাত ১১টায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের একটি চার্টার্ড ফ্লাইটে বাংলাদেশে পৌঁছান নিরাময় অযোগ্য পাকস্থলীর ক্যান্সার আক্রান্ত রানা। গত এপ্রিল থেকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতাল চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।
বিমানবন্দর থেকে সরাসরি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সেন্টার ফর প্যালিয়েটিভ কেয়ারে (ডিপার্টমেন্ট অব প্যালিয়েটিভ মেডিসিন) নিয়ে আসা হয় রানাকে।সেন্টার ফর প্যালিয়েটিভ কেয়ারের মেডিকেল অফিসার ডা. রুবাইয়াৎ রহমান বলেন, আগামী ৩-৪ দিনের জন্য ভর্তি করা হয়েছে রানাকে। তারপর নারায়ণগঞ্জে তার পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হবে।
ন্যাশনাল ক্যান্সার সেন্টার সিঙ্গাপুরের ডিভিশন অব সাপোর্টিভ অ্যান্ড প্যালিয়েটিভ কেয়ারের সহযোগী অধ্যাপক সিনথিয়া গোর কাছে রানা জানতে পারেন, তিনি আর মাত্র কয়েক মাস (সর্বোচ্চ ৬ মাস) বাঁচবেন! পাকস্থলীর ক্যান্সারটি লাস্ট স্টেজে ধরা পড়ায় আর যেহেতু কোনো চিকিৎসা নেই, তাই নিজ দেশে ফেরার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেন রানা।
ডা. সিনথিয়া গোর কাছে তার শেষ ইচ্ছে ব্যক্ত করে রানা জানান, আমি আমার জীবনের শেষ কটা দিন পরিবারের সঙ্গেই কাটাতে চাই। মৃত্যু যদি হয়, নিজ দেশে নিজ পরিবারের সামনেই মরতে চাই। ছয় বছর বয়সী তার পুত্র সন্তান, স্ত্রী, মা আর ভাইদের কাছে গিয়ে জীবনের শেষ কটা দিন কাটাতে চান সিকদার রানা।কিন্তু কীভাবে দেশে ফিরবেন রানা? করোনার এই বৈশ্বিক দুর্যোগের সময় বন্ধ সব এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট। একমাত্র উপায়-এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের চার্টার্ড ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা। কিন্তু এজন্য তো অনেক টাকা দরকার।
ঠিক এই সময়ে রানার শেষ ইচ্ছে পূরণে এগিয়ে আসেন ডা. সিনথিয়া গো। তার ‘হেল্প সিকদার, ফুলফিল হিজ লাস্ট উইশ-হেল্প সেন্ড ইন হোম’ আহ্বানে এগিয়ে আসে মানবিক দাতব্য সংস্থা মাইগ্র্যান্ট ওয়ার্কার্স সেন্টার (এমডব্লিউসি)। দ্য মাইগ্র্যান্ট ওয়ার্কার্স অ্যাসিস্ট্যান্স ফান্ড (এমডব্লিউএএফ) বরাবরের মতো সিঙ্গাপুরে দুর্দশাগ্রস্ত ও ভুক্তভোগী অভিবাসী শ্রমিকদের মানবিক ও জরুরি সহায়তা তহবিল গঠনে করে ক্যাম্পেইনটি পরিচালনা করে (ওয়েব লিংক:www.giving.sg)।
‘এছাড়া অনেক সময় হাসপাতালের চাইতে বাসায় সেবা প্রদান অনেক বেশি কাম্য হয়ে পড়ে। এদের ভেতর আবার অনেকেই সম্পূর্ণ শয্যাশায়ী, বড় একটি ঘা, তীব্র ব্যথা অথবা শ্বাসকষ্ট নিয়ে বাসায় পড়ে আছে। বেশিরভাগই অর্ধচেতন অথবা অচেতন হয়ে শুধুমাত্র পরিবারের সীমিত অদক্ষ সেবা আর পরিচর্যার ওপর নির্ভরশীল।’
‘নিরাময় অযোগ্য রোগীর চিকিৎসা সেবাকে কেন্দ্র করে এই সব জটিলতাকে যতটা সম্ভব সহজ করার মাধ্যমে রোগী ও তার পরিবারের জীবন যাত্রার গুণগত মান বৃদ্ধিতে প্যালিয়েটিভ গৃহসেবার গুরুত্ব অপরিসীম। এই সেবার উদ্দেশ্য-রোগী ও তার পরিবারের সদস্যদের দৈনন্দিন কষ্টগুলোকে কমিয়ে আনা এবং জীবনের মান উন্নয়নে সহায়তা করা। একই সঙ্গে হোম কেয়ার প্রদানের সময় পরিবারের সদস্যদেরকে সেবা এবং পরিচর্যার মৌলিক দক্ষতাগুলো হাতে-কলমে শিখিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়’-যোগ করেন ডা. রুবাইয়াৎ রহমান।
সূত্র-জাগো নিউজ