সংক্রমণ দমাতে যে ক্ষমতা চায় পুলিশ !!
২০১৮ সালের সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইনের সংশোধনীর প্রস্তাব করেছে পুলিশ। প্রস্তাব অনুযায়ী, সংক্রমণে আক্রান্ত ব্যক্তি যদি সরকারি আদেশ অমান্য করে রোগটি নির্মূলে সাহায্য না করে তাহলে তাকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করার ক্ষমতা চেয়েছে পুলিশ। সম্প্রতি পুলিশের পক্ষ থেকে আইনের কয়েকটি ধারা সংশোধন করার একটি প্রস্তাব গেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সেখান থেকে অনুমোদনের ভিত্তিতে এটি আইন মন্ত্রণালয়ে যাবে। তবে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত আইনটি সংশোধন হবে কি-না, এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি।
পুলিশ সদরদফতরের দায়িত্বশীল এক কর্মকার্তা আইন সংশোধনের প্রস্তাবের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদের পক্ষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠিটি পাঠিয়েছেন পুলিশ সদরদফতরের এআইজি (পরিকল্পনা এবং গবেষণা) মো. আব্দুর রাজ্জাক।
জরিমানা করার পাশাপাশি জনগণের উদ্দেশে সরকারের দেওয়া সব বিধিনিষেধ কার্যকর, কোয়ারেন্টাইনসহ সংক্রমণ রোগ প্রতিরোধে পরিচালিত কার্যক্রমে সক্ষমতা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। আইনটি সংক্রমণ রোগ প্রতিরোধের হলেও সংশোধনীর প্রস্তাবে অধিকাংশ জায়গায় ‘করোনাভাইরাস’ সংক্রমণের রেফারেন্স দেওয়া হয়েছে।
সংশোধনী প্রস্তাবের মন্তব্য অংশে বলা হয়েছে, ‘করোনার সময় লকডাউন-কোয়ারেন্টাইনসহ নানা সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে পুলিশ ও র্যাব। তবে তাদের অভিযান চালানোর কোনো ক্ষমতা নেই। তাই মাঠপর্যায়ে অনেকসময় অনেক ধরনের কাজ করতে পুলিশকে আইনগত জটিলতা ও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। তাই আমরা আইন সংশোধনের প্রস্তাবে পুলিশকে সংক্রমণ রোগ প্রতিরোধ সংক্রান্ত অভিযানের সক্ষমতা বাড়ানো ও সরাসরি জরিমানা করার ক্ষমতা চাওয়া হয়েছে।’
আইনের নতুন কিছু ধারা সংযোজনের প্রস্তাব দিয়েছে পুলিশ সদরদফতর। প্রস্তাবনার মধ্যে রয়েছে- পুলিশ কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনে বাধা ও নির্দেশ পালনে অসম্মতি প্রদানের অপরাধ এবং দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে বাধা দিলে বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা। এছাড়াও যদি কোনো ব্যক্তি এ আইনের (সংক্রামক রোগ আইন-২০১৮) অধীন কোনো অপরাধ করলে অনূর্ধ্ব ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। কোনো ব্যক্তি যদি জরিমানার টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান, তাহলে পুলিশ কর্মকর্তা একটি লিখিত অভিযোগসহ ওই ব্যক্তিকে যথাযথ এখতিয়ার সম্পন্ন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করতে পারবেন।
এই আইনে অপরাধ ও জেল-জরিমানা
এ আইনের ২৪ ধারায় ১-এ বলা আছে, যদি কোনো ব্যক্তি সংক্রামক জীবাণুর বিস্তার ঘটান বা বিস্তারে সহায়তা করেন অথবা রোগ শরীরে আছে জানা সত্ত্বেও অপর কোনো ব্যক্তি সংক্রমিত ব্যক্তি বা স্থাপনার সংস্পর্শে আসার সময় সংক্রমণ ঝুঁকির বিষয়টি তার কাছে গোপন করেন তাহলে ওই ব্যক্তির এ কাজটি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। ২-এ বলা আছে, যদি কোনো ব্যক্তি উপধারা (১) এর অধীন কোনো অপরাধ করেন, তাহলে তিনি অনূর্ধ্ব ৬ (ছয়) মাস কারাদণ্ডে বা অনূর্ধ্ব এক (এক) লাখ টাকা অর্থদণ্ডে অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
২৫ ধারার ১-এর (ক) বলা আছে যদি কোনো ব্যক্তি মহাপরিচালক, সিভিল সার্জন বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার ওপর অর্পিত কোনো দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে বাধা দেন বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন এবং (খ) সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলের উদ্দেশে মহাপরিচালক, সিভিল সার্জন বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কোনো নির্দেশ পালনে অসম্মতি জানান তাহলে এটি অপরাধ।
২-উপধারায় বলা আছে, যদি কোনো ব্যক্তি উপধারা ১-এর অধীন কোনো অপরাধ করেন তাহলে তিনি অনূর্ধ্ব তিন মাস কারাদণ্ডে বা অনূর্ধ্ব ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
২৬ ধারার ১-এ বলা আছে, যদি কোনো ব্যক্তি সংক্রামক রোগ সম্পর্কে সঠিক তথ্য জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা বা ভুল তথ্য প্রদান করেন তাহলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কাজ একটি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। ২-এ বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি উপধারা ১-এর অধীন কোনো অপরাধ করেন, তাহলে তিনি অনূর্ধ্ব দুই মাস কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব ২৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।২৭ ধারায় বলা আছে, এই আইনের অধীন কোনো অপরাধের অভিযোগ দায়ের, তদন্ত, বিচার ও আপিল নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধির বিধানাবলি প্রযোজ্য হবে।
এই আইনে অপরাধ করলে উক্ত ব্যক্তিদের জেল-জরিমানা করার এখতিয়ার নেই পুলিশের। যা একান্তই নির্দিষ্ট মহাপরিচালক ও সিভিল সার্জন করতে পারবেন বলে আইনে উল্লেখ রয়েছে। এই আইনের অধীনে পুলিশ জরিমানা করার ক্ষমতাটি চেয়েছে, যাতে করোনার লাগাম টানতে এবং মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে আইনশৃঙ্খলার এ বাহিনী আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।উল্লেখ্য, দেশে করোনার লাগাম টেনে ধরতে বুধবার (১৪ এপ্রিল) থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ জারি আরোপ করেছে সরকার। এ সময়ে মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে মাঠে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে পুলিশ বাহিনী।