সব বেচে টাকা পাঠাও, আমারে বাঁ’চাও – লিবিয়া থেকে মাকে ফোন যুবকের !!
যা আছে সব বিক্রি করে টাকা পাঠাও। আমি বাঁচতে চাই। আমারে বাঁচাও। ওরা প্রতিদিন মা’রধ’র করে। কারেন্টে শ’ক দেয়। মা আমি বাঁ’চতে চাই।’ বা’চাঁর জন্য মোবাইল ফোনে এমনই আকুতি করেছিল মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার ইশিবপুর ইউনিয়নের ২৩ বছরের যুবক সজিব বেপারী।কিন্তু বাঁচতে পারেননি। সবকিছু বিক্রি করে দালালের কাছে টাকা দেয়ার পরও সন্ত্রা’সীদের গু’লিতে প্রাণ হা’রায় সজিব। শুধু সজিব নয় এমন ১১ জন নিহ’ত হয়েছে মাদারীপুরের বিভিন্ন এলাকায়। আহ’ত হয়েছে আরও ৪জন।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্বপ্ন পূরণের আশায় স্থানীয় দালালদের আশ্বাসে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছিল মাদারীপুরের বেশ কিছু যুবক। কিন্তু সেই আশায় গুঁ’ড়েবালি। তাদেরকে লিবিয়া নেওয়ার পর দালালরা জি’ম্মি করে দ’ফায় দ’ফায় টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে না পারায় দ’ফায় দ’ফায় চলে নি’র্যা’তন। অনেকেই আবার দাবিকৃত টাকা দিয়েও রক্ষা পায়নি। স্থানীয় দালালদের কাছে টাকা দিলেও লিবিয়ায় অবস্থানরত মাফিদাদের কাছে টাকা না পৌঁছানোয় তাদের এক পর্যায়ে গু’লি করে হ’ত্যা করা হয়।
মৃ’তদেহ দেশে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি করেছেন নিহ’তদের পরিবার। আর দোষীদের শাস্তির দাবি করেছেন ভুক্তভোগি পরিবার। প্রশাসনও দালালদের শাস্তির আওতায় আনার চেষ্টা করছেন বলে দাবি করছেন।
জানা গেছে, দুই দিন আগে নির্ম’ম নি’র্যা’তনের করুণ আকুতি জানিয়েছিলেন সদর উপজেলার কুনিয়ার মনির আকন। তার কথা শুনে পরিবারও দালালদের দাবি করা ৭ লাখ টাকা সংগ্রহের চেষ্টা করছিল। কিন্তু এখন আর খোঁ’জ মিলছে না মনির আকনের।
বিষয়টি জানাজানি হলে পরিবারে নেমে আসে শো’কের ছায়া। কা’ন্নায় ভে’ঙ্গে পড়েন স্বজনরা। মনিরের স্ত্রী মেরিনা বেগমের দাবি, স্থানীয় দালাল নূর হোসেনের মাধ্যমে পাঁচ মাস আগে ইতালি যাওয়ার কথা বলে সাড়ে চার লাখ টাকা নিয়েছিল। এখন মৃ’ত্যুর সংবাদ গা-ঢাকা দিয়েছে নুর হোসেন। আমরা এর বিচার চাই।
এদিকে নিহ’ত সজিব বেপারী স্ত্রী নুরনাহার বেগম বার বার মুর্ছা যাচ্ছিলেন। কা’ন্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমার সন্তানের বয়স ৫ মাস। ও বাবার মুখটাও দেখেনি। সুখের আশায় দালালের প্রলোভনে পারি জমিয়েছিল লিবিয়া। সেখানে দালালরা তাকে জিম্মি করে। প্রথম দ’ফায় রেজাউল দালাল সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা নেয়। পরে জিম্মি করে আরো ৫ লক্ষ টাকা নেয়। এরপর মাফিয়ারা তাকে গু’লি করে হ’ত্যা করে। সব টাকা দিয়েছি ধা’র দেনা করে। এখন কেমন করে এই দেনা প’রিশোধ করবো।’
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশিসহ অভিবাসীদের মিজদা শহরের একটি জায়গায় টাকার জন্য জি’ম্মি করে রাখে মানবপাচারকারী চক্র। এ নিয়ে এক পর্যায়ে ওই চক্রের সঙ্গে মা’রামা’রি হয় অভিবাসী শ্রমিকদের। এতে এক মানবপাচারকারী মা’রা যায়। তারই প্র’তিশোধ হিসেবে ২৮ মে বৃহস্পতিবার রাত ৯টারদিকে ২৬ বাংলাদেশিসহ ৩০ অভিবাসী শ্রমিককে গু’লি করে হ’ত্যা করে মানবপাচারকারী চক্রের এক সদস্যের সহযোগী ও স্বজনরা।
নিহ’তরা হলেন সদর উপজেলার জাকির হোসেন, জুয়েল হোসেন, ফিরোজ ও শামীম, রাজৈর উপজেলার বিদ্যানন্দী গ্রামের জুয়েল হাওলাদার, একই গ্রামের মানিক হাওলাদার (২৮), টেকেরহাট এলাকার আসাদুল, মনির হোসেন ও আয়নাল মোল্লা, ইশিবপুর এলাকার সজীব ও শাহীন। আহ’তরা হলেন, সদরের ফিরোজ বেপারী, ইশিবপুরের সম্রাট খালাসী ও কদমবাড়ীর মো. আলী।মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম দোষীদের শাস্তির আশ্বাস দেন। তিনি মৃ’তদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান।-বিডি প্রতিদিন