Islamic

সাগরের অতলে থেকেও নিশ্চিহ্ন হয়নি নূহ (আঃ) এর নৌকা !!

অবিশ্বাসীদের নির্মূল করতে পৃথিবীতে মহাপ্লাবন সৃষ্টি করেন আল্লাহ। সে সময় আল্লাহর আদেশে বিশাল একটি নৌকা তৈরি করেন নূহ (আঃ)।

তারপর সেই নৌকায় বিশ্বাসী মানুষ ও এক জোড়া করে অন্য প্রাণীদের আশ্রয় দেয়া হয়, যাতে করে তারা মহাপ্লাবনের হাত থেকে বেঁচে যায়। নূহ নবীর নৌকা ও মহাপ্লাবনের কাহিনী শোনেনি এমন মানুষ খুব একটা পাওয়া যাবে না। কোরআন ও বাইবেলে নূহ নবীর এই ঘটনা বিস্তারিত রয়েছে।

বলা হয়, নূহ (আঃ) এর নৌকা ছিল পৃথিবীর প্রথম জলযান। ধর্মগ্রন্থের সূত্রে সবাই জানে তার বিশেষ এই নৌকার কথা। তবে আসলে ঠিক কোথায় বাস করতো নূহ (আঃ) এর সম্প্রদায়? এ ব্যাপারে স্পষ্ট কোনো বর্ণনা পাওয়া যায়নি। তবে বিশ্বাসীদের দাবি, পৃথিবীর কোথাও না কোথাও আজো তার নৌকার ধ্বংসাবশেষ রয়ে গেছে।

নূহ নবীর নৌকার ঘটনা কয়েক হাজার বছরের পুরনো। তখন সারা পৃথিবী পাপে পরিপূর্ণ ছিল। সৃষ্টিকর্তা সামান্য কিছু নির্বাচিত মানুষ ও পশুপাখি ছাড়া সব কিছু এক প্রলয়ঙ্কারী বন্যায় ধ্বংস করে দেন। এ কাহিনী প্রায় কম বেশি সবারই জানা। ধর্মগ্রন্থ আর অনেক পৌরাণিকে এর বিস্তারিত বর্ণনা আছে। পবিত্র কোরআনের সুরা হুদে বলা হয়েছে, পর্বতপ্রমাণ তরঙ্গের মধ্যে এ (নৌকা) তাদের নিয়ে বয়ে চলল, নূহ (আঃ) তার পুত্রকে (যে তাদের ডাকে পৃথক ছিল) ডেকে বললেন, হে বৎস আমাদের সঙ্গে আরোহণ করো এবং অবিশ্বাসী কাফেরদের সঙ্গী হয়ো না। সূরা হুদে এ বিষয়ে আরো বলা হয়েছে, (আল্লাহর শাস্তি প্রদান ও কাফেরদের ধ্বংসের পর) বলা হলো, হে পৃথিবী, তুমি পানি শোষণ করে নাও এবং হে আকাশ, তুমি ক্ষান্ত হও। এরপর বন্যা প্রশমিত হল এবং কার্য সমাপ্ত হল, নৌকা জুদি পর্বতের উপর স্থির হল এবং বলা হল ধ্বংসই সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়েরর পরিণাম।

১৯১৬ সালের ঘটনা। রাশিয়ার গোয়েন্দা বিমান নিয়ে আকাশে চক্কর দিচ্ছিলেন লেফটেনেন্ট রস্কোভিতস্কি। সকালের সোনারোদে আরারাত পর্বতের চূড়ায় ঝকমক করছে বরফের স্তর। হঠাৎ কী যেন চোখে পড়তেই নড়েচড়ে বসলেন লেফটেনেন্ট। পাহাড়চূড়ায় আছে বিশাল এক হিমবাহ হ্রদ। সেখানেই পুরনো জাহাজের মতো কিছু একটা চোখে পড়ল তার। খবরটা ছড়িয়ে পড়ল দেশের আনাচে-কানাচে। সবার ধারণা, নূহ নবীর সেই বিখ্যাত জাহাজ খুঁজে পেয়েছেন লেফটেনেন্ট রস্কোভিতস্কি। এ জাহাজে চড়ে নূহ নবী ও তার সঙ্গীরা মহাপ্লাবনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন।

দলে দলে মানুষ এসে হাজির হলো আরারাত পর্বতের গোড়ায়। পাহাড় তন্ন তন্ন করে তারা খুঁজে বের করল সেই জাহাজের ধ্বংসাবশেষ। শুরু হলো ছবি তোলা আর প্রমাণ সংগ্রহের প্রাণান্তকর চেষ্টা। তবে সবকিছু করে ফেলার আগেই রাশিয়ায় শুরু হয় বিপ্লব আর গৃহযুদ্ধ। বিপ্লবের উত্তেজনায় তখনকার মতো চাপা পড়ে যায় নূহ নবীর জাহাজের বিষয়টি।

এরপর ১৯৫৯ সালে তুরস্কের পূর্বাঞ্চলে পাহাড়ের ওপরে হুবহু জাহাজ আকৃতির একটি জায়গার সন্ধান পান ক্যাপ্টেন ইলহান দুরুপিনার নামে এক মানচিত্রকর। বিশ্বাসীরা দাবি করে সেটিই নূহ নবীর নৌকার ধ্বংসাবশেষ। বাইবেল অনুসারে, প্লাবন শেষে ওই অঞ্চলের আরারাত পর্বতেই তার নৌকা গিয়ে ঠেকে। দুরুপিনা ওই অঞ্চল আবিষ্কার করায় জায়গাটির নামও হয় দুরুপিনার।

এদিকে দুরুপিনারের ওই নৌকা আকৃতির জায়গাটিকে নূহ নবীর নৌকার ধ্বংসাবশেষ মানতে নারাজ ভূতত্ত্ববিদরা। তাদের মতে, ওই জায়গাটি আসলে পাহাড়েরই অস্বাভাবিক এক ধরনের ভাঁজ। যার ফলে এটি দেখতে নৌকার মতো মনে হয়। তবে অনেক বিশ্বাসীই তাদের দাবিতে অনড়। সম্প্রতি প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ অনুসন্ধানকারী একটি বিশেষজ্ঞ দল জানিয়েছে, সম্ভবত তারা দুরুপিনারে নূহ (আঃ) এর সেই ঐতিহাসিক নৌকার সন্ধান পেয়েছেন। আগামীতে এ ব্যাপারে একটি ডকুমেন্টারি প্রকাশ করা হবে।

দীর্ঘদিন ধরে নূহ (আঃ) এর নৌকার অনুসন্ধান চালানো ডকুমেন্টারি ফিল্মমেকার সেম সেরতেসেন জানান, দুরুপিনারের নিচে কী আছে সে ব্যাপারে ত্রিমাত্রিক ছবি সংগ্রহ করেছে তার দল। তারের মাধ্যমে ভূগর্ভে বৈদ্যুতিক সংকেত পাঠিয়ে এসব ছবি সংগ্রহ করা হয়েছে। সামনেই একটি ডকুমেন্টারিতে এ বিষয়ক রহস্যের সুরাহা হবে।

সেরতেসেন বলেন, এগুলোই দুরুপিনার নৌকার আসল ছবি। মাটির নিচে পুরো নৌকাটি চাপা পড়ে আছে। এগুলো মোটেই ভুয়া নয়। এর আগে ২০১৭ সালে নূহ (আঃ) এর নৌকা বিষয়ক আরো একটি ডকুমেন্টারি প্রকাশ করেন এ ফিল্মমেকার। তিনি বলেন, যদিও এখনই ছবি দিয়ে নিশ্চিতভাবে এটা প্রমাণ হয় না যে, এটিই নূহ (আঃ) এর সেই নৌকা। হতে পারে এটি অন্য কোনো নৌকা। তবে এটি যে নৌকা সে ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত।

ত্রিমাত্রিক ছবিগুলো প্রকাশ পেলেই বোঝা যাবে। বিশ্বাসীদের মতে, দুরুপিনার সত্যিই কোনো পবিত্র জায়গা কিনা। সেরতেসেনের ডকুমেন্টারি দলের হয়ে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার ও প্রত্নতত্ত্ববিদ অ্যান্ড্রিউ জোনস এবং ভূতত্ত্ববিদ জন লারসেন এসব ছবি সংগ্রহ করেছেন। কবে নাগাদ সেরতেসেন’র ডকুমেন্টারিটি প্রকাশ পাবে সে ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু জানাননি তিনি।

তবে এটিই যে নূহ (আঃ) এর নৌকার অনুসন্ধান বিষয়ক একমাত্র দাবি, তা নয়। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের ব্যাখ্যা পাওয়া গেছে। এর আগে ২০০০ সালে মার্কিন সামুদ্রিক ভূতত্ত্ববিদ উইলিয়াম রায়ান ও ওয়াল্টার পিটম্যান দাবি করেন, আজকের ৪ লাখ ৩৬ হাজার বর্গকিলোমিটারের বিশাল কৃষ্ণসাগর (ব্ল্যাক সি) ২০ হাজার বছর আগে মূলত একটি ছোট্ট দীঘি ছিল। ১২ হাজার বছর আগে, শেষ বরফ যুগে হিমবাহ গলতে শুরু করলে সাগরের পানির উচ্চতা বেড়ে যায়। সে সময় ছোট্ট সেই দীঘি পরিণত হয় সুবিশাল সাগরে।

এ দুই সামুদ্রিক ভূতত্ত্ববিদের ধারণা, কৃষ্ণসাগরের তলদেশ একসময় শুষ্ক ছিল। সেখানে জনবসতি থাকার প্রমাণ পেয়েছেন বলেও দাবি করেছেন তারা। তাদের মতে, মহাপ্লাবনের আগে সম্ভবত ওই অঞ্চলেই নূহ নবীর সম্প্রদায় বাস করতো। ২০০০ সালে উইলিয়াম রায়ান ও ওয়াল্টার পিটম্যানের এ দাবির পর বেশ কিছুকাল চলে যায়। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে বুলগেরিয়ার নেসেবার উপকূলে কৃষ্ণ সাগরের এক হাজার থেকে ছয় হাজার ফুট গভীরে প্রাচীন এক জাহাজের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়।

অনেক গভীরে অক্সিজেনের পরিমাণ কম থাকায় সাগরের জলে ডুবে থাকার পরও দীর্ঘকালেও নিশ্চিহ্ন হয়নি জাহাজটি। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ওই জাহাজটিই সমাধান দিতে পারে নূহ (আঃ) এর নৌকার রহস্যের। জাহাজের ধ্বংসাবশেষ যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব সাউদাম্পটনে ‘ব্ল্যাক সি ম্যারিটাইম আর্কিওলজিক্যাল প্রজেক্ট’র (এমএপি) গবেষকরা ওই জাহাজের ধ্বংসাবশেষগুলো নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন।

তারা জানান, এখনো এমন কোনো প্রমাণ মেলেনি যাতে বলা যায়, হঠাৎ বন্যায় প্লাবিত হয়েছে কৃষ্ণসাগরের ওই অঞ্চল। বরং সেখানে পানির উচ্চতা বেড়েছে ধীরে ধীরে। তাদের মতে, রায়ান ও পিটম্যানের হঠাৎ বন্যায় কৃষ্ণসাগর সৃষ্টির দাবি সঠিক নয়। তবে, জাহাজের ধ্বংসাবশেষ নিয়ে অনুসন্ধান অব্যাহত থাকবে। এর আগে খ্রিস্টান অভিযাত্রীদের একটি দল দাবি করেছিল, ৯৯ দশমিক ৯ শতাংশ সম্ভাবনা আছে, তুরস্কের আরারাত পর্বতের বরফের নিচেই আছে ঐতিহাসিক সেই নূহ (আঃ) এর নৌকা।

এছাড়া নূহ (আঃ) এর নৌকার অনুসন্ধানে থাকা হংকংভিত্তিক ডকুমেন্টারি টিম ‘নোয়াহস আর্ক মিনিস্ট্রিস ইন্টারন্যাশন্যাল’র দাবি, তারা এমন একটি কাঠের টুকরো পেয়েছে, যার কার্বন পরীক্ষায় প্রমাণ মিলেছে যে, সেটি ৪ হাজার আটশ’ বছরের পুরনো। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৩ হাজার ফুট ওপরে ওই কাঠের টুকরাটি পাওয়া যায় বলে জানায় তারা।বাইবেলের বুক অব জেনেসিসের তথ্য অনুসারে, মহাপ্লাবনের পর তুরস্কের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত আরারাত পর্বতে গিয়েই ঠেকেছিল নূহ (আঃ) এর নৌকা। যদিও অসংখ্য অভিযানের পরও এ তত্ত্বের সমর্থনে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

গত বছর, নূহ (আঃ) এর সেই নৌকার কাল্পনিক প্রতিরূপ তৈরি করে রীতিমত তাঁক লাগিয়ে দেন নেদারল্যান্ডসের শিল্পী জোহান হুইবার। হজরত নূহ (আঃ) এর তৈরি কিস্তিটি ছিল ৩ তলা বিশিষ্ট। এটি লম্বায় ১২০০ গজ এবং ৬০০ গজ চওড়া ছিল।

এ নৌকায় হজরত নূহ (আঃ) তার সঙ্গী ৪০ জোড়া নারী-পুরুষসহ, জীবজন্তু, পশুপাখি ১২০ দিন অবস্থান করেন। মহাপ্লাবন শেষে নৌকাটি তুরস্কের জুদি পাহাড়ের কাছে নোঙর করে। নেদারল্যান্ডসের শিল্পী জোহানের তৈরি নৌকাটি লম্বায় ৪১০ ফুট, ৯৫ ফুট চওড়া এবং ৩ তলায় বিশিষ্ট, যার উচ্চতা ৭৫ ফুট। ২০১৮ সালের নভেম্বরে ২ হাজার ৫০০ টনের নৌকাটি পানিতে ভাসানো হয়েছে।

শিল্পী জোহান বাইবেলে বর্ণিত বিবরণ অনুযায়ী এ নৌকাটি তৈরি করেছেন। নৌকাটিতে কাঠের তৈরি বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীও রাখা হয়েছে। নৌকাটি তৈরিতে ১৬ লাখ ডলার খরচ হয়। ২০১২ সালে শিল্পী জোহান এ নৌকাটি তৈরির কাজ শুরু করেন। বর্তমানে নৌকাটি নেদারল্যান্ডসের রাজধানী আর্মস্টারডামে রাখা হয়েছে। যা প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থী পরিদর্শন করছে।- ডেইলি-বাংলাদেশ ডটকম

J A Suhag

Local News: J A Suhag writes Local News articles for industries that want to see their Google search rankings surge. His articles have appeared in a number of sites. His articles focus on enlightening with informative Services sector needs. he holds the degree of Masters in Business and Marketing. Before he started writing, he experimented with various professions: computer programming, assistant marker, Digital marketing, and others. But his favorite job is writing that he is now doing full-time. Address: 44/8 - North Dhanmondi, Dhaka Email: [email protected]

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button