সিকিউরিটি গার্ডের ছেলে যেভাবে এখন জজ !!
পরিবারের বড় সন্তান এখন জজ। তবে এই আনন্দের একটু পেছনে ঘুরে আসলে পাল্টে যাবে ভাবনার পুরো চিত্র। কারন এই সংসারটা চালাতে কিছুদিন আগেও বেশ হিমশিম খেতে হয়েছে তাদের। বলছি সহকারী জজ গোলাম রসুল সুইটের পরিবারের কথা। কিছুদিন আগেও রাজধানীর উত্তরায় একটি বাড়িতে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করছিলেন বাবা মোশারফ হোসেন। তার স্ত্রী মাহফুজা খাতুন এলাকার অনেকের বাড়িতে বুয়ার কাজ করেছেন।
গত ১৯ জানুয়ারি ঘোষিত গেজেটে তালিকা প্রকাশ করা হয়। গোলাম রসুল সুইট ১২তম বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসে ৬৭তম হয়েছেন। আগামী মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সহকারী জজ হিসেবে পিরোজপুর জেলায় যোগদান করবেন তিনি। জানা যায়, সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার পারুলিয়া ইউনিয়নের কোমরপুর গ্রামের বাবা মোশারফ হোসেন ও মা মাহফুজা খাতুনের বড় ছেলে গোলাম রসুল সুইট। পরিবারের অভাব দমাতে পারেনি ছোটবেলা থেকেই মেধাবী সুইটকে। এক সময় তিনবেলা খেতে না পাওয়া সুইট এখন জজ। গণমাধ্যমে নিজের পরিবার ও লেখাপড়া নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করলেন এই সহকারী জজ।
সুইট জানালেন, শাখরা কোমরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে ভোমরা ইউনিয়ন দাখিল মাদরাসা থেকে দাখিল পাস করেন সে। এরপর দেবহাটা উপজেলার সখিপুর খানবাহাদুর আহসানউল্লাহ্ কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তবে সে সময়ে তাদের পরিবারে খুব অভাব। তখন কোনো রকমে খেয়ে না খেয়ে দিন যাপন করার কথা জানাতেও বাদ রাখলেন না তিনি। সুইট বলেন, কলেজ শেষ করার পর লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম। ওই সময় সাতক্ষীরা শিল্পকলা একাডেমিতে একটি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করি। সেখান থেকে এক ভাই আমাকে পরামর্শ দেয় ঢাকায় গিয়ে কোচিং করার। কিন্তু পরিবারের সেই অবস্থা ছিল না।
মায়ের একটি গরু ছিল। সেই গরুটি ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে ২০১০ সালের ১৭ মে ঢাকা যাই। এরপর একটি কোচিং সেন্টারে ভর্তি হই। নির্বিকার হয়ে জানালেন তিনি। বললেন- কিছুদিন পর মায়ের গরু বিক্রি করা সেই টাকাও ফুরিয়ে যায়। বাড়িতেও টাকা চাওয়া বা পরিবারে দেয়ার মতো কোনো অবস্থা ছিল না। আবেগাপ্লুত হয়ে সুইট বললেন, সেদিন কান্নাকাটি করেছিলাম কোচিং পরিচালকের সামনে। এরপর তিনি আমাকে সেখানে বিনামূল্যে কোচিং ও থাকার ব্যবস্থা করেন। এরই মধ্যে সঙ্গে থাকা সহপাঠীদের বন্ধু হয়ে যাই আমি। বন্ধুরাও আমার পারিবারিক অবস্থা জানার পর আমাকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করতে থাকে। বন্ধুদের সহযোগিতার কথাগুলো ভুলে যাওয়ার নয়। মা ও বাবা মাঝে মধ্যে এক হাজার বা দুই হাজার করে টাকা দিত। গত এক মাস আগে বাবাকে বাড়িতে নিয়ে এসেছি। সিকিউরিটি গার্ডের চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছে। মাকেও এক বছর আগে থেকে আর বাড়িতে বাড়িতে কাজ করেন না।