সৌদিতে বিমানের বিশেষ ফ্লাইট – অতিরিক্ত টিকিট মূল্য নিয়ে প্রবাসীদের প্রতিবাদ !!
বিমান বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ বিশেষ ফ্লাইটে রিয়াদ-ঢাকা একমুখী যাত্রার টিকেটের মূল্য ইকনমি ক্লাস ২ হাজার ৮ শত সৌদি রিয়াল ( ৬৩ হাজার ৩ তিনশত ৬৪ টাকা) ও বিজনেস ক্লাস ৩ হাজার ৮ শত সৌদি রিয়াল ( ৮৫ হাজার ৯ শত ৯৪ টাকা) নির্ধারণ করেছে। জেদ্দা-ঢাকা বিমানের একমুখী যাত্রার টিকেটের মূল্য ধরা হয়েছে ইকনমি ক্লাসের জন্য ৩ হাজার ৩০ সৌদি রিয়াল ( ৬৮ হাজার ৫ শত ৬৮ টাকা) ও বিজনেস ক্লাস ৪ হাজার ৩০ সৌদি রিয়াল (৯১ হাজার ১ শত ৯৮ টাকা)। স্বাভাবিকের তুলনায় অতিরিক্ত ভাড়া নির্ধারণের কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে প্রবাসীদের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড়। তারা বলছেন কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করা প্রবাসীদের দেশে পাঠাতে সাহায্যের নামে সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ভাবে গলাকাটা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। যেই ভাড়া দিয়ে সাধারণ প্রবাসীদের দেশে ফেরা সম্ভব নয়।
বিশেষ ফ্লাইটের বিষয়ে দূতাবাসের এক প্রেস রিলিজ থেকে জানা যায়, রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ বলেন, বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীরা যারা দূতাবাসের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করবেন শুধুমাত্র তারাই উক্ত বিমানে ভ্রমণ করতে পারবেন। যাত্রীরা সৌদি আরবের বাংলাদেশ বিমানের নির্দিষ্ট অফিস থেকে টিকেট ক্রয় করবেন। রাষ্ট্রদূত জানান, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হবে। রেজিস্ট্রশনকারীদের দূতাবাসের পক্ষ থেকে ফোন করে রিয়াদের জন্য ৪০০ জন ও জেদ্দার জন্য ৪০০ জন প্রবাসীকে টিকেট ক্রয়ের জন্য নির্দিষ্ট সময় জানিয়ে দেয়া হবে। পরবর্তীতে আসন ফাঁকা থাকা সাপেক্ষে অন্যদেরকে ক্রমানুসারে ফোন করা হবে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কাজী মাসুদ লিখেছেন, সৌদি আরব থেকে প্রবাসীদের উদ্ধারের নামে বিমানের অত্যধিক ভাড়া নির্ধারণের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। শহীদ মাদবর লেখেন, খুবই হতাশ হলাম প্রবাসীদের দেশে যাওয়ার বিমানের টিকিটের মূল্য অনেকগুন বাড়ানো হয়েছে। নাজিম উদ্দীন বলেন, প্রতিদিন গড়ে ভারতীয় দুইটি ফ্লাইট চলাচল করলেও তাদের ভাড়া স্বাভাবিক। এমডি মাসুকুর রহমান লিখেছেন, এই দুঃসময়ে প্রবাসীদের সাথে এমন জুলুম মেনে নেয়া যায় না। মোহাম্মদ ফজলুল হক মামুন লিখেছেন, দুনীতি বাদ দিয়ে ডাকাতির পরিকল্পনা। জায়েদ মুমিন লিখেছেন বিমানের গলাকাটা দামের টিকেট ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বিমানমন্ত্রী, সৌদিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। অভিমানে কেউ কেউ লিখেছে, বিমান বর্জন, বয়কট করুন। কারো কারো প্রতিবাদের ভাষা ছিল আরও তীব্র। এক কথায় নির্ধারিত বিমান ভাড়ায় প্রবাসীরা নাখোশ। আবার অনেকে আক্ষেপ করে বলছেন, চারমাস কর্মহীন থাকা স্বল্প আয়ের প্রবাসীরা দেশে যেতে না পেরে অনাহারে অর্ধাহারে বিনা চিকিৎসায় এখানেই মারা যাবে। লাশও দেশে যাবে না। তারা জানান, দেশটিতে গত তিন মাসে লকডাউন এবং ২৪ ঘন্টা কারফিউর ফলে অনেক প্রবাসী কর্মহীন হয়ে পড়েন। আয় রোজগার না থাকায় পুরাতন রোগের সাথে মানসিক দুঃচিন্তায় অনেকে আরও বেশি রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ছেন। কেউ কেউ হার্ট এট্যাকে মারা যান। এরই মধ্যে করোনায় মৃত্যু হয়েছে তিন শতাধিক বাংলাদেশির। তা তাছাড়াও রয়েছে স্বাভাবিক মৃতের সংখ্যা। সবমিলিয়ে সেখানে বাংলাদেশি মৃতের হার এবং আ’ক্রান্তের সংখ্যাও বেশি।
এইসব বিবেচনায় অসহায়, অসুস্থ, কর্মহীন প্রবাসীদের বিশেষ ফ্লাইটে দেশে পাঠানোর দাবি উঠে। এ পরিস্থিতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সার্বিক তত্ত্বাবধানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের দুটি ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা হয়েছে যার একটি রিয়াদ থেকে ও আরেকটি জেদ্দা বিমান বন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করবে।
এরই প্রেক্ষিতে রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাস, জেদ্দায় বাংলাদেশ কনস্যুলেট এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস রিয়াদ ও জেদ্দা রিজিওনাল অফিসের তত্ত্বাবধানে দুটি ফ্লাইটে চার শত করে আট শত যাত্রী বহনের সিদ্ধান্ত হয়। আগামী ২০ জুন (সম্ভাব্য তারিখ) সৌদি আরবের রিয়াদ থেকে ও আগামী ১ জুলাই (সম্ভাব্য তারিখ) সৌদি আরবের জেদ্দা থেকে বাংলাদেশ বিমানের দুটি বিশেষ ফ্লাইট ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবে। যাত্রীদের নিজ খরচে দেশে ফেরার জন্য নিম্নোক্ত লিংকে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। https://docs.google.com/forms/d/e/1FAIpQLSepAeZBIF5dObjPAVhU2T-nbJiEjyNyiISJCW8xHcSlZX3dzQ/viewform
করোনায় আ’ক্রান্ত নন/কোনো উপসর্গ নেই- এই মর্মে সৌদি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ইস্যুকৃত সার্টিফিকেট বিমানে প্রবেশের পূর্বে প্রত্যেক যাত্রীকে অবশ্যই সঙ্গে রাখতে হবে। ঢাকায় অবতরণের পর বিমান বন্দরে তা জমা দিতে হবে এবং বাংলাদেশ সরকার নির্ধারিত কোয়ারেন্টিন সম্পর্কিত সকল সিদ্ধান্ত মেনে চলতে হবে। প্রত্যেক যাত্রীকে মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস পরিধান ও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি অবশ্যই মেনে চলতে হবে। বিস্তারিত তথ্যের জন্য প্রবাসীদের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জেদ্দা ও রিয়াদস্থ রিজিওনাল অফিসের সাথে যোগাযোগের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। রিয়াদ এর জন্য নম্বর- ০৫০৪২৪৬৩৫২ ও ০৫৬ ৯৬৪ ১৮২৪। আর জেদ্দার জন্য নম্বর- ০৫৫ ৮৮৭ ২৫৮০ ও ০৫০ ৫৬১ ৮২১৩।
করোনাভা’ইরাসের বিস্তাররোধে নানান পদক্ষেপের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক রুটের উড়োজাহাজ চলাচল বন্ধ ঘোষণার পর থেকে সৌদি আরব থেকে শুধুমাত্র জরুরি প্রয়োজনে কয়েকটি বিশেষ ফ্লাইট পরিচালিত হয়েছে। সেই ফ্লাইট গুলোতে আটকে পড়া ওমরাহ ও ভিজিট ভিসার যাত্রী, অভিবাসন আইন লঙ্ঘনের দায়ে আটককৃতদের দেশে পাঠানো হয়েছিল। এমন আরও সাড়ে চার হাজার বাংলাদেশির তালিকা রয়েছে দূতাবাসের কাছে। যা গত সপ্তাহে সৌদি কতৃপক্ষ দূতাবাসে পাঠিয়েছেন। উল্লেখ্য, ১৫ মার্চ থেকে দেশটিতে আন্তর্জাতিক সকল ফ্লাইট অবতরণ ও উড্ডয়ন বন্ধ রয়েছে।
সূত্র- বিডি২৪লাইভ