সৎ ছেলের আঘাতে হাত হারানো মাকে ঘর তুলে দিলেন পুলিশ কর্মকর্তা মাহমুদ !!
পরম মমতায় যে হাত দিয়ে মুখে ভাত তুলে দিয়েছিলেন মা, সামান্য ঘটনার জেরে সে মায়েরই এক হাত কুপিয়ে কেটে ফেলেন সৎ ছেলে। ছেলের এমন আচরণে হতবাক পুরো গ্রামের মানুষ। খবর ইউএনবি’র।এমনই নির্মমতার শিকার ঝালকাঠি সদর উপজেলার পরমহল গ্রামের এক হাত হারানো মিনারা বেগমের (৪০) পাশে দাঁড়িয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) এম এম মাহমুদ হাসান।
ত্রাতা হয়ে চিকিৎসার দায়িত্বও নেন তিনি। এমনকি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার পর তাকে বসবাসের জন্য নিজের টাকায় একটি বসতঘর তুলে দিয়ে অনন্য নজির দেখান পুলিশের এ কর্মকর্তা।মিনারা বেগম বলেন, ‘আমি যে বেঁচে আছি, তা মাহমুদ স্যারের জন্যই। তিনি আমাকে বাঁচার অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। আমাকে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে সহযোগিতা করেছেন। একটি খুপড়ি ঘরে থাকতাম, আমার বসতঘর তুলে দিয়েছেন তিনি। মাঝে মাঝে তিনি আমাদের বাড়িতে এসে টাকা দিয়ে যান।’
‘আমাকে মেরে টুকরো টুকরো করে ফেলে দেয়ার ঘোষণা দেয়া সৎ ছেলে মাসুদ সরদারকেও সাবধান করে দিয়েছে। স্যারের মতো লোক হয় না,’ বলেন তিনি।
জানা যায়, গত বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি বাড়ির পেছনে একটি বাগানে ক্রিকেট খেলার বল নিয়ে মিনারা বেগমের ছেলে রিমন সরদারের সঙ্গে সৎ ছেলে মাসুদ সরদারের ছেলে সাইফুলের ঝগড়া হয়। ঝগড়া থামাতে ছুঁটে যান মিনারা বেগম। এসময় সৎ ছেলে মাসুদ একটি দা নিয়ে এসে কিছু বুঝে ওঠার আগেই কুপিয়ে মিনারা বেগমের ডান হাত বিচ্ছিন্ন করে দেয়। মায়ের আর্তনাদ শুনে মেয়ে রাবেয়া বেগম ঘটনাস্থলে আসলে তাকেও কুপিয়ে হাতের আঙুল বিচ্ছিন্ন করে দেয় মাসুদ। গুরুতর অবস্থায় তাদের ভর্তি করা হয় ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে।
এ ঘটনায় মিনারা বেগমের ছেলে রিপন সরদার বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। মিনারা বেগমের স্বামী আবদুল আজিজ সরদারও স্ত্রীর খোঁজখবর নিচ্ছেন না। এ অবস্থায় মিনারা বেগম ছেলে মেয়ে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন। কুপিয়ে তার হাত বিচ্ছিন্ন করার পরেও থেমে ছিলেন না সৎ ছেলে মাসুদ। বাড়িতে ফিরলে তাকে টুকরো টুকরো করে ফেলে দেয়ার ঘোষণা দেন তিনি। এতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন মিনারা। ঠিক এ সময় তার পাশে দাঁড়িয়েছেন ঝালকাঠির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) এম এম মাহমুদ হাসান।
নিজের টাকায় মিনারার চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ করে তোলার দায়িত্ব নেন। চিকিৎসা শেষে নিরাপদে বাড়িতে ফিরিয়ে দেন। ব্যক্তিগত অর্থায়নে একটি বসতঘর তুলে দেন পুলিশের এ কর্মকর্তা। বেঁচে থাকার স্বপ্ন ফিকে হয়ে যাওয়া থেকে পুলিশের সহযোগিতায় নতুন মাথা গোঁজার স্থান ফিরে পেয়ে বেজায় খুশি মিনারা বেগম।
ঝালকাঠির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) এম এম মাহমুদ হাসান বলেন, মিনারা বেগমকে তার সৎ ছেলে কুপিয়ে একটি হাত বিচ্ছিন্ন করে দেয়। বাড়িতে ফিরলে টুকরো টুকরো করার ঘোষণা দেয় তার সৎ ছেলে। আমি কয়েক দফায় ওই বাড়িতে গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেছি। মিনারা বেগমের চিকিৎসা করানোর ও থাকার জন্য একটি বসতঘর তুলে দিয়েছি।’
তাদের নিরাপত্তার জন্য সবসময় পুলিশ নজর রাখছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, সৎ ছেলে মাসুদকে এ নিয়ে সাবধান করে দেয়া হয়েছে।