হযরত আলী রা. এর গুরুত্বপূর্ণ কিছু উপদেশ !!
হযরত ইসমাঈল সুদ্দী রহ. বলেন আমি আবু ইরাকাকে বলতে শুনেছি,একদিন হযরত আলী রা. ফজরের সালাত আদায় করে ডান দিকে ঘুরে বসলেন।তখন তাকে খুব চিন্তিন দেখাচ্ছিল।এরপর সূর্য উদিত হলে দুরাকাত সালাত আদায় করলেন।তারপর উপস্থিত লোকদের উদ্দেশ্য করে বললেন!
১.(ক)আল্লাহর কসম! আমি রাসুলের সাহাবাদের যেমন দেখেছি, এখন তেমন দৃশ্য দেখছি না। তাদের ভোর হত এভাবে যে মুখমন্ডল হলুদ,এলোমেলো কেশ,চোখে-মুখে ধুলোবালির চিহৃ,যেন তারা পাথুরে অঞ্চলের অশ্বারোহী। তাঁরা রাত কাটাতেন সালাতে দাড়িয়ে,লম্বা সেজদাতে আর কোরআন তেলাওয়াতে। ভোর হলে তারা আল্লাহর যিকির করতেন।
ঝড়ো হাওয়ায় বৃক্ষের ন্যায় তারা দুলতে থাকতেন।তাদের চোখের পানিতে জামা ভিজে যেত। আল্লাহর কসম! এখন মনে হচ্ছে পুরো জাতি গাফিল,উদাসীন।সারা রাত ঘুমিয়ে কাটায়। এরপর হযরত আলী রা.সে মজলিস ত্যাগ করলেন।মৃত্য পর্যন্ত তাকে আর কম হাসতেও দেখা যায়নি।
(খ) তোমরা জ্ঞান অর্জন কর তাহেল তোমরা মায়ারিফত ও তত্ত¦জ্ঞান লাভ করতে পারবে।তোমরা আমল কর তাহলে তোমরা কাজের যোগ্যতা অর্জন করতে পারবে। কারণ তোমাদের পর এমন এক যুগ আসবে, যখন সত্যের দশের নয় ভাগই অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যাত হবে। আল্লাহমুখী,তাওবাকারী ব্যতিত ঐফিতনা থেকে কেউই রক্ষা পাবেনা।
২.সাবধান! দুনিয়া বিদায় নিচ্ছে।আখিরাত এগিয়ে আসছে। এদের প্রত্যেকেরই অনুসারী সন্তান আছে।সুতরাং তোমরা আখেরাতের সন্তান হও।দুনিয়ার সন্তান হয়ো না। সাবধান যারা দুনিয়ার প্রতি নির্মোহ তারা মাটিকে বিছানা এবং ধুলোকে বিছানার চাঁদর রুপে গ্রহণ করে।যারা আখিরাত মুখি তারা কুপ্রবৃত্তি থেকে দুরে থাকে।যারা জাহান্নামকে ভয় পায় তারা নিষিদ্ধ কর্মসমূহকে বর্জন করে। যারা জান্নত তলব করে তারা দ্রুত ইবদতে মগ্ন হয়। যে দুনিয়ার মোহ ত্যগ করে, সকল বিবাদ তার নিকট তুচ্ছ মনে হয়।
৩.আল্লাহর এমন কিছু বান্দা আছেন যাদের অকল্যাণ ও ক্ষতি থেকে জগতবাসী নিরাপদ। তাদের অন্তর চিন্তাগ্রস্থ।তাদের আত্মা পূত-পবিত্র।তাদের পার্থিব চাহিদা কম। পরকালের দীর্ঘ সুখের আসায় তারা ক্ষুদ্র জীবনে ধৈর্যধারণ করেন। তারা রাতে সালাত, দিনে সিয়াম পালন করে। জাহান্নাম থেকে বাচতে আল্লাহর নিকট আহাজারি করে। সহনসীলতা অবলম্বল করে।তাকওয়া অর্জন করে। কেউ দেখলে মনে করে তারা অসুস্থ।অথচ তারা অসুস্থ নয়।
৪.হে লোক সকল দুনিয়া পৃষ্ঠ প্রদর্শণ করে চলে যাচ্ছে। আখিরাত আসছে। সে দৃশ্যমান হচ্ছে। আজকের দুনিয়া অর্জনে যারা পশ্চাৎগামী আগামীকালের আখিরাতে তারা থাকবে অগ্রগামী।শুনে নাও, তোমরা এমন যুগে বসবাস করছ যার সম্মুখে একটি সুনির্দিষ্ট সময় আছে- মৃত্যুর সময়। মৃত্যুপূর্ব পর্যন্ত যারা আমলে অলসতা করবে তারাই ব্যর্থ ও নিষ্ফল। আমি মনে করিনা যে জান্নাত প্রত্যাশি লোক ঘুমে বিভোর থাকবে। আর জাহান্নাম থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত লোক নিদ্রায় অচেতন থাকবে।
৫. হে লোকসকল দুনিয়া নগত পণ্য।পূণ্যবান,পাপাচারি সকলেই তা থেকে খাই। আখিরাত সত্য প্রতিশ্রæতি, আল্লাহ সেখানে বিচার করবেন। সাবধান! শয়তান তোমাদের দারিদ্র ও অভাবের ভয় দেখায় আর অশ্লীলতার নির্দেশ দেয়। আল্লাহ তোমাদেরকে তার ক্ষমা ও অনুগ্রহের প্রতিশ্রুতি দেন।
৬. আমি তোমাদের ব্যপারে যা সবচেয়ে বেশি ভয় পাচ্ছি তা হচ্ছে তোমাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ ও দীর্ঘ কামনা।কু-প্রবৃত্তির অনুসরণ সৎব্যক্তিকে সত্য থেকে বিচ্যুতি করে।আর দীর্ঘ কামনা ও আশা, ব্যক্তিকে আখিরাতের কথা ভুলিয়ে দেয়। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া থেকে নির্বাচিত) ৮/২১-২৮ পৃ.