দেশের খবর

১৫ কোটি টাকার টেন্ডারের ১০ কোটিই লুটপাট, পড়ুন বিস্তারিত !!

হবিগঞ্জের শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হতে না হতেই ‘পুকুর চুরির’ অভিযোগ পাওয়া গেছে। কলেজ কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে ১৫ কোটি টাকার টেন্ডারের ১০ কোটিই লুটপাট করা হয়েছে।

পাতানো দরপত্র আহ্বান করে দুর্নীতির মাধ্যমে প্রায় ১০ কোটি টাকা হরিলুট করা হয়েছে। মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ছবি সংবলিত কাগজে ছাপা চার্ট বাজারে একশ থেকে পাঁচশ টাকায় পাওয়া যায়। অথচ কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রতিটি চার্ট কিনেছে ৭ হাজার ৮০০ টাকায়। এ রকম ৪৫০টি চার্ট ক্রয়ে ব্যয় হয়েছে ৩৫ লাখ ১০ হাজার টাকা।

বাংলাদেশে এক লাখ ৩৮ হাজার টাকায় পাওয়া যায় ‘স্টারবোর্ড’ নামে হিটাচি কোম্পানির ৭৯ ইঞ্চির ইন্টারেক্টিভ বোর্ড। কিন্তু একই কোম্পানির একই মডেলের এই ইন্টারেক্টিভ বোর্ড কেনা হয়েছে ১৫ লাখ ৩৫ হাজার টাকায়।

পাশাপাশি ওজন মাপার উন্নতমানের যন্ত্র ৪০ হাজার টাকায় পাওয়া যায়। ঠিকাদার এর মূল্য নিয়েছে সাড়ে ছয় লাখ টাকা। প্রিন্টারের দাম বাজারে ৬০ হাজার টাকা হলেও কেনা হয়েছে আড়াই লাখ টাকায়। এভাবে পছন্দের ঠিকাদার দিয়ে কয়েকগুণ বেশি দামে বই, আসবাবপত্রসহ আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম কেনা হয়েছে। নতুন এই কলেজের জন্য সরকারের দেয়া প্রায় সাড়ে ১৫ কোটি টাকা দরপত্রের নামে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও কলেজের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বইপত্র, সাময়িকী, যন্ত্রপাতিসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি কেনার জন্য ২০১৮ সালে দরপত্র আহ্বান করা হয়। এ লক্ষ্যে কলেজের অধ্যক্ষ ডা. আবু সুফিয়ান স্বাক্ষরিত আদেশে ফিজিওলজি বিভাগের প্রভাষক ডা. মো. শাহীন ভূঁইয়াকে সভাপতি করে তিন সদস্যবিশিষ্ট বাজারদর যাচাই-বাছাই কমিটি গঠন করা হয়। দরপত্রে অংশ নেয় সাতটি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু মূল্যায়ন প্রতিবেদনে সদস্যদের স্বাক্ষর ছাড়াই ঢাকার শ্যামলী এলাকার বিশ্বাস কুঞ্জছোঁয়া ভবনের ‘নির্ঝরা এন্টারপ্রাইজ’ ও মতিঝিলের মঞ্জুরি ভবনের ‘পুনম ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল’ নামে দুটি প্রতিষ্ঠানকে মালামাল সরবরাহের দায়িত্ব দেয়া হয়।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, এসব মালামাল কেনায় বরাদ্দ ছিল ১৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ভ্যাট ও আয়কর খাতে সরকারি কোষাগারে জমা হয় ১ কোটি ৬১ লাখ ৯৭ হাজার ৭৪৮ টাকা। মালামাল কেনা বাবদ ব্যয় দেখানো হয় ১৩ কোটি ৮৭ লাখ ৮১ হাজার ১০৯ টাকা। কিন্তু বাস্তবে কেনা মালামালের মূল্য পাঁচ কোটি টাকা। বাকি টাকা ভাগবাটোয়ারা হয়ে গেছে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে। এমনটাই জানিয়েছে দরপত্র প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত একটি সূত্র।

সূত্রমতে, সরবরাহকৃত মালামালের মধ্যে ৬৭টি লেনেভো ল্যাপটপের (মডেল ১১০ কোরআই ফাইভ, কিং জেনারেশন) মূল্য ধরা হয় ৯৯ লাখ ৪৯ হাজার ৫০০ টাকা। প্রতিটির মূল্য পড়েছে ১ লাখ ৪৮ হাজার ৫০০ টাকা। অথচ ঢাকার কম্পিউটার সামগ্রী বিক্রয় প্রতিষ্ঠান ফ্লোরায় একই মডেলের ল্যাপটপ বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৪২ হাজার টাকায়।

৬০ হাজার টাকা মূল্যের এইচপি কালার প্রিন্টারের (মডেল জেড প্রো এম ৪৫২এন ডব্লিউ) দাম ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৮ হাজার ৯০০ টাকা। ৫০ জন বসার জন্য কনফারেন্স টেবিল, এক্সিকিউটিভ চেয়ার ও সাউন্ড সিস্টেমে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬১ লাখ ২৯ হাজার টাকা। জনপ্রতি চেয়ার-টেবিল ও সাউন্ড সিস্টেমের ব্যয় পড়েছে ১ লাখ ২২ হাজার ৪০০ টাকা। চেয়ারগুলোতে ‘ইয়ামিন ফার্নিচার’ লেখা থাকলেও টেবিলগুলো কোন প্রতিষ্ঠানের এর কোনো স্টিকার লাগানো নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশের নামিদামি ফার্নিচার প্রতিষ্ঠান হাতিল ও রিগ্যালে এসব চেয়ারের মূল্য ওই দামের অর্ধেকের চেয়েও কম। শুধু তাই নয়, অত্যন্ত সাধারণ মানের ১৫টি বুক সেলফের মূল্য ৬ লাখ ৬০ হাজার, পাঁচটি স্টিলের আলমারি ২ লাখ ৮৫ হাজার, ১০টি স্টিলের ফাইল কেবিনেট ৪ লাখ ২২ হাজার, ২৫টি স্টিলের র‌্যাক ১৩ লাখ ৯৭ হাজার ও ৬ হাজার ৪৭৫টি বইয়ের জন্য বিলে দেখানো হয়েছে ৪ কোটি ৪৯ লাখ ৮ হাজার ৬৬৪ টাকা।

এছাড়া বিলে মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ১০৪টি প্লাস্টিক মডেলের মূল্য ১ কোটি ১৪ লাখ ৮৬ হাজার ৩১৩ টাকা দেখানোসহ দেশের বাজারে ‘পেডিয়াটিক সার্জারি’ (২ ভলিয়মের সেট) বইটির দাম ৩৩ হাজার টাকা হলেও নির্ঝরা এন্টারপ্রাইজ দাম নিয়েছে ৭০ হাজার ৫৫০ টাকা।

এদিকে, মতিঝিলের মঞ্জুরি ভবনের পুনম ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামে আরেকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা দরে ৮১টি কার্লজিস প্রিমো স্টার বাইনোকুলার মাইক্রোস্কোপ সরবরাহ করেছে। যার মূল্য নিয়েছে ২ কোটি ৬৩ লাখ ৩২৫ টাকা। অথচ এর বাজার মূল্য ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩০০ টাকা।

পুনম ইন্টারন্যাশনাল এসির দাম ১ লাখ ৬৮ হাজার টাকা দরে ৩১টির মূল্য নিয়েছে ৬১ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। ওয়ালটনের যে মডেলের ফ্রিজ ৩৯ হাজার ৩৯০ টাকা, একই কোম্পানি ও একই মডেলের ফ্রিজের মূল্য ৮৫ হাজার টাকা। এরকম ছয়টি ফ্রিজ কেনা হয়েছে।

পাশাপাশি ল্যাবরেটরিতে ব্যবহারের জন্য ডিজিটাল ওজন মাপার যন্ত্রের দাম নেয়া হয়েছে ৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা। বাস্তবে যার বাজার মূল্য ৪০ হাজার টাকা করে। এছাড়া মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ছবি সংবলিত কাগজে ছাপা চার্ট বাজারে ১০০ থেকে ৫০০ টাকায় পাওয়া গেলেও কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রতিটি চার্ট কিনেছে ৭ হাজার ৮০০ টাকা দরে।

এ রকম ৪৫০টি চার্ট কেনায় ব্যয় হয়েছে ৩৫ লাখ ১০ হাজার টাকা। দেশে ১ লাখ ৩৮ হাজার টাকায় পাওয়া যায় ‘স্টারবোর্ড‘ নামে হিটাচি কোম্পানির ৭৯ ইঞ্চির ইন্টারেক্টিভ বোর্ড। কিন্তু একই কোম্পানি ও মডেলের এই ইন্টারেক্টিভ বোর্ডটি কেনা হয়েছে ১৫ লাখ ৩৫ হাজার টাকায়। এ যেন এক তুঘলকি কাণ্ড।

এসব মালামালের বাড়তি দাম ধরা নিয়ে কানাঘুষা আছে খোদ কলেজেই। কলেজের দুজন শিক্ষক নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, যেসব বই কেনা হয়েছে এর বেশকিছু বই এমবিবিএস ক্লাসের ছাত্রদের কোনো কাজে লাগবে না। কারণ এসব বই গবেষণার কাজে লাগে।

তারা বলেন, শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের ফার্স্ট ব্যাচের শিক্ষার্থীরা এখন তৃতীয় বর্ষে। ২০২২ সালে তারা পঞ্চম বর্ষে পৌঁছবেন। কিন্তু ২০১৮ সালে পঞ্চম বর্ষে পড়ানোর জন্য বই কিনতে হবে এর কোনো যৌক্তিকতা নেই। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নতুন সংস্করণের বই থেকে বঞ্চিত হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মো. আবু সুফিয়ান বলেন, সরকারি ক্রয় নীতিমালা অনুসরণ করে বাজারদর যাচাই-বাছাই কমিটি সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে ঢাকার দুটি প্রতিষ্ঠানকে টেন্ডার দেয়। এখানে কোনো প্রকার অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়নি।

তিনি আরও বলেন, হবিগঞ্জবাসীর স্বপ্নের এই প্রতিষ্ঠানটি দাঁড় করাতে আমি সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছি। হবিগঞ্জের সন্তান হিসেবে আমি চাই প্রতিষ্ঠানটি মাথা উঁচু করে দাঁড়াক।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত ইচ্ছায় ও হবিগঞ্জ-৩ আসনের এমপি মো. আবু জাহিরের প্রচেষ্টায় ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি কলেজটি অনুমোদন পায়। ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে ৫১ জন শিক্ষার্থী ভর্তির মাধ্যমে কলেজটির আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়।

J A Suhag

Local News: J A Suhag writes Local News articles for industries that want to see their Google search rankings surge. His articles have appeared in a number of sites. His articles focus on enlightening with informative Services sector needs. he holds the degree of Masters in Business and Marketing. Before he started writing, he experimented with various professions: computer programming, assistant marker, Digital marketing, and others. But his favorite job is writing that he is now doing full-time. Address: 44/8 - North Dhanmondi, Dhaka Email: [email protected]

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button