১৯৯৯ সালের পর প্রথম কোনো প্র’লয়ঙ্করী ঝড়ের মুখে বাংলাদেশ !!
প্রায় আড়াইশ কিলোমিটার গতি নিয়ে বাংলাদেশের উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে সুপার সাইক্লোন ‘আম্ফান’। ১৯৯৯ সালের পর থেকে বঙ্গোপসাগরে এটিই প্রথম কোনো সুপার সাইক্লোন।বিবিসির খবরে বলা হয়, এই সাইক্লোনের ফলে ভারী বর্ষণ, প্রচণ্ড বি’পজ্জনক বাতাস ও জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।
বৈশ্বিক ঝড় নির্ণয়ক সংস্থা আকুওয়েদার আম্ফানকে ১৯৯৯ সালের পরে বঙ্গোপসাগরে প্রথম সুপার সাইক্লোন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় হয়ে এটি বাংলাদেশ এবং উত্তর-পূর্ব ভারতীয় উপকূলজুড়ে চ’রম আ’ঘাত হা’নতে পারে।মঙ্গলবার আকুওয়েদারের আন্তর্জাতিক পূর্বাভাস দেওয়া ব্যক্তি জেসন নিকোলস বলেন, ‘১৯৯৯ এর উড়িষ্যা সাইক্লোনের পরে আম্ফান বঙ্গোপসাগরে প্রথম সুপার সাইক্লোনিক ঝড়।’
মার্কিন যৌথ টাইফুন সতর্কতা কেন্দ্রের বরাত দিয়ে সিএনএন জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে এ যাবতকাল পর্যন্ত রেকর্ডকৃত ঝড়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড় হয়ে উঠেছে আম্ফান।আবহাওয়া অধিদফতরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সুপার সাইক্লোন কেন্দ্রের ৯০ কি. মি. এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ২২৫ কি. মি.। এটি দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২৪৫ কি. মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুপার সাইক্লোন কেন্দ্রের নিকটে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত সুপার সাইক্লোন ‘আম্ফান’ উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বর্তমানে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আজ দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৮১০ কি. মি. দক্ষিণ পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৬৫ কি. মি. দক্ষিণ পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৯৫ কি. মি. দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৬৯০ কি. মি. দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে খুলনা ও চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে মঙ্গলবার ১৯ মে শেষরাত হতে ২০ মে বিকাল বা সন্ধ্যার মধ্যে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করতে পারে।আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, এই ঘূর্ণিঝড়ের কারণে দেশের উপকূলীয় অঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ১০ ফুটের বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। ইতোমধ্যে আম্ফানের প্রভাবে সুন্দরবন উপকূলে দমকা বাতাস বইছে।
সতর্ক সংকেত: মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৬ নম্বর নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৬ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।ঘূর্ণিঝড় জনিত জলোচ্ছ্বাসের সতর্কতা: ঘূর্ণিঝড় এবং অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫-১০ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
ঝড়ো হাওয়ার সতর্কতা: ঘূর্ণিঝড় অ’তিক্রমকালে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও চট্টগ্রাম জেলা সমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘণ্টায় ১৪০-১৬০ কি. মি. বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।জেলেদের জন্য সতর্কতা: উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতিসত্বর নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।