২০০ কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক হয়েও জালিয়াতি !!
প্রায় ৯ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র জালিয়াতির অভিযোগে এক দম্পতিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। জালিয়াতির মাধ্যমে ঢাকায় একাধিক বাড়ির মালিকও হয়েছেন তারা।
গত মঙ্গলবার খুলনা মহানগরীর খালিশপুর থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল শনিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানিয়েছেন সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফারুক হোসেন।
তিনি জানান, সিআইডির অরগানাইজড ক্রাইম ইউনিটের ইকোনমিক ক্রাইম স্কোয়াডের একটি দল গত মঙ্গলবার খালিশপুর থানা এলাকা থেকে ভূয়া সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে প্রায় ৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তাদের গ্রেপ্তার করেছে।
গ্রেপ্তারকৃতের নাম-এইচ এম এ বারিক ওরফে বাদল ওরফে বাদল হাওলাদার ওরফে মোস্তাক আহমেদ ও তার স্ত্রী মুরশিদা আফরীন।
ডিআইজি জানান, একটি সংঘবদ্ধ দলের ২১ সদস্য দীর্ঘদিন ধরে রাজধানী ঢাকার কয়েকটি ব্যাংকে একই ব্যক্তির একাধিক নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে বিভিন্ন নাম-সর্বস্ব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান খুলে ভূয়া সঞ্চয়পত্র, এফডিআরের বিপরীতে স্বনামে- বেনামে ব্যাংক লোন নিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে তারা প্রায় ৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ভূয়া সঞ্চয়পত্র দিয়ে ২১টি ব্যাংক লোনের মাধ্যমে এ টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারক চক্র।
এ ছাড়া গ্রেপ্তারকৃত আসামি মোস্তাক ও তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব অনুসন্ধান চালিয়ে ২ কোটি টাকার অধিক অর্থের সন্ধান পাওয়া গেছে। এ ছাড়াও তাদের নামে ঢাকার গুলশান ২ এ প্রায় ১০০ কোটি টাকা মূল্যের একটি ৯তলা বাড়ি, উত্তরায় শত কোটি টাকা মূল্যের ১টি ৬তলা বাড়ি, উত্তরখান এলাকায় কোটি টাকা মূল্যের একটি ২তলা বাড়ি, একাধিক ফ্ল্যাট, গাড়ি ও জমির তথ্য পেয়েছে সিআইডি।
সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তারকৃত আসামি মোস্তাক হাওলাদার একটি মামলায় আদালতের সাজা পরোয়ানাভুক্ত হয়ে প্রায় ১৬ বছর পালাতক ছিল। অভিযুক্ত মোস্তাক তার স্থায়ী ঠিকানার বসতবাড়ি বিক্রি করে কিছুদিন ভারত ও মালয়েশিয়াতে আত্মগোপন করে ছিলেন।
২০১১ সালে দেশে ফিরে আবার পুরোনো কৌশলে প্রতারণা শুরু করেন। ভূয়া সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুদক তার ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে ২০০৪, ২০১১ ও ২০১৬ সালে ঢাকার গুলশান, ধানমন্ডি, উত্তরা পশ্চিম ও মোহাম্মদপুর থানায় ৭টি মামলা দায়ের করে। সিআইডি মামলাগুলোর তদন্তের দায়িত্বভার গ্রহণ করে।
তদন্তে জানা যায়, ডিএমপির মোহাম্মদপুর থানায় ২০০৪ সালে এবি ব্যাংক বাদী হয়ে দায়ের করা মামলায় তিনি ৩ মাস জেল খাটেন। এই চক্রের অন্যতম সদস্য এবি ব্যাংক ধানমন্ডি ব্রাঞ্চের তৎকালীন ব্যবস্থাপক আসিরুল হক ২০০৬ সালে গ্রেপ্তার হয়ে কিছুদিন জেল খেটে জামিনে মুক্ত হন। একই বছর তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান বলে জানা যায়।
এই প্রতারক চক্রের মূলহোতাসহ অন্যান্য সহযোগীরা বর্তমানে শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ বড় ব্যবসায় যুক্ত আছেন। সিআইডি জালিয়াতি চক্রটির মূল উৎপাটনের লক্ষ্যে মামলাগুলার তদন্ত অব্যাহত রেখেছে বলেও জানিয়েছে সিআইডি।