৪ যুগ পর ফেসবুকে বাবাকে খুঁজে পেল সন্তানেরা !!
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের কল্যানেই চার যুগ অর্থাৎ ১২ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া বাবাকে সন্তানদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনার ঘটেছে। বিস্ময়কর ঘটনাটি ঘটেছে সিলেটে। দেশ স্বাধীনের পর থেকেই নিখোঁজ থাকা হাবিবুর রহমান নামের ওই ব্যক্তিকে ফেসবুকে ভিডিও দেখেই খুঁজে পেয়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা। সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার বেজগ্রামে তার বাড়ি। চার সন্তানের জনক হাবিবুর ব্যবসা করতেন, আর ব্যবসার কাজে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে বের হয়ে নিরুদ্দেশ হয়েছিলেন তিনি।
হাবিবুর রহমানের ছেলে জালাল উদ্দিন বললেন, ‘দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই ব্যবসার কাজে বের হয়ে নিখোঁজ হন তাদের বাবা। এরপর তাদের পরিবারের সদস্যরা তাকে অনেক খোঁজেছেন, কিন্তু কোথাও তার হদিস পাননি। বাবার প্রতিক্ষা করতে করতে ২০০০ সালে তাদের মা’ও মারা গেছেন। তার চার ভাইয়ের দু’জন প্রবাসে থাকেন। বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) ফেসবুকে ভিডিও দেখে তারা বাবাকে ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে খুঁজে পান।’ বাবাকে ফিরে পাওয়ায় আবেগ-আপ্লুত হয়ে তিনি বলেন, ‘এটি রীতিমতো অবিশ্বাস্য। কারণ দীর্ঘ ৪৮ বছর পরে তাকে আমরা পেয়েছি। আমরা বিশ্বাস করতেই পারছি না।’ হাবিবুর রহমানের বয়স এখন ৭৮ বছর। তার বড় ছেলের বউই প্রথমে তাকে শনাক্ত করেন। ভিডিও দেখার পর তিনি পরিবারের অপর সদস্যদের দেখান। পরে তারা ছুটে যান ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখান থেকে তাকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসেন একটি বেসরকারি হাসপাতালে।
জানা যায়, মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় বিভিন্ন মাজারে রাত কাটতো হাবিবুরের। প্রায় ২৫ বছর আগে তিনি মৌলভীবাজারের হযরত শাহাব উদ্দিন মাজারে আসেন, সেখানেই পরিচয় হয় রায়শ্রী গ্রামের রাজিয়ার (৫০) সাথে। সে সময় থেকেই তিনি তার সেবা করছেন। ২৩ দিন আগে বিছানা থেকে পড়ে হাত ভেঙে গেলে তাঁকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়। তবে ভাঙা হাতে ইনফেকশন দেখা দিলে সপ্তাহদিন আগে তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন চিকিৎসকরা। চিকিৎসা চলাকালেই পাশের বিছানার এক রোগীর স্বজনকে হাবিবুরের কথা খুলে বলেন রাজিয়া। পরে ওই ব্যক্তিই ফেসবুকে তা ভিডিও আকারে প্রকাশ করেন। বৃহস্পতিবার রাতে এ ভিডিও দেখেন আমেরিকা প্রবাসী হাবিবুর রহমানের বড় ছেলের ছেলের স্ত্রী। এরপর তিনি পরিবারের সদস্যদের দেখালে পরিবারের সদস্যরা তাকে শনাক্ত করেন। শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) তার দুই ছেলে হাসপাতালে গিয়ে কথা বলে তাদের বাবাকে চিনতে পারেন। এসময় হাবিবুর তার বাড়ির ঠিকানা, স্ত্রী এবং ভাইদের নামও বলেন।
ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে আসা রাজিয়া বেগম বললেন, ‘দীর্ঘ ২৫ বছর আগে মাজারে তার সাথে দেখা হয়। আমি তাকে সম্মান করে পীর সাহেব বলি ডাকি। তখন থেকেই আমি তার দেখাশুনা করে আসছিলাম।’ হাবিবুর রহমানের নাতী কেফায়েত বললেন, ‘এতো বছর পর দাদাকে পেয়ে খুব খুশি। ছোট বেলা থেকেই বাবা-চাচাদের কাছে দাদার গল্প শুনতাম। তখন মনে আশা রেখেছিলাম একদিন দাদাকে ফিরে পাব। আল্লাহ সেই আশা পূরণ করেছেন। তাই দাদাকে ফিরে পেয়েছি। এজন্য তিনি রাজিয়া বেগম এবং ভিডিও আপলোডকারীকেও ধন্যবাদ জানান।’ হাবিবুর রহমানের সন্তানরা বেজগ্রাম ছেড়েছেন বহু আগেই। বর্তমানে বিয়ানীবাজার পৌর এলাকার কসবা বাগটিলা এলাকায় তারা স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন