সেন্টমাটিনে ভাসমান ট্রলার থেকে মালয়েশিয়াগামী ১২২ রোহিঙ্গা উদ্ধার !!
কক্সবাজারের টেকনাফ সেন্টমাটিন দ্বীপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরের পথে মালয়েশিয়া পাচারকালে মাঝি-মাল্লাসহ ১’শ ২২ জন নারী-পুরুষ ও শিশুকে আটক করেছে কোস্টগার্ড সদস্যরা। এর মধ্যে শিশু ১৫ জন ও ৫৯ জন নারী এবং ৪৮ জন পুরুষ রয়েছে। উদ্ধারকৃতরা সকলে উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা। তারা মোটা অংকের বিনিময়ে বিভিন্ন দালালদের মাধ্যমে ট্রলারে উঠে বলে ভিকটিমরা জানিয়েছে।
জানা যায়, ১৪ নভেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুরে সেন্টমার্টিনের অদূরে দক্ষিন পশ্চিম বঙ্গোপসাগর থেকে তাদের আটক করে। উদ্ধারকৃত যাত্রীরা টেকনাফ থেকে গত ১২ নভেম্বর একটি ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন ফিশিং ট্রলার দিয়ে মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য রওয়ানা দেয়। যাত্রাকালে সেন্টমার্টিন থেকে ৭ কিলোমিটার দক্ষিন পশ্চিম সাগরে ট্রলারটি বিকল হয়ে ভাসতে থাকে। স্থানীয় জেলেরা ভাসমান ট্রলারটি দেখতে পেয়ে সেন্টমার্টিন কোস্টগার্ড বাহিনীকে খবর দেয়। পরবর্তীতে কোস্টগার্ড সদস্যরা মাঝি-মাল্লাসহ ১২২ জন রোহিঙ্গা ও ট্রলারটি উদ্ধার করে ১৪ নভেম্বর বৃহস্পতিবার রাত ৭ টায় টেকনাফ-মিয়ানমার ট্রানজিট জেটিতে নিয়ে আসে। এর মধ্যে শিশু ১৫ জন ও ৫৯ জন নারী, ৪৮ জন পুরুষ রয়েছে।
মালয়েশিয়াগামী ভিকটিম বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আতা উল্লাহ জানান, নিজ দেশ মিয়ানমার সরকার বাহিনীর নির্যাতনের কারনে বাংলাদেশেের বালুখালী ক্যাম্পে চলে আসি। কিন্তু সেই ক্যাম্পে চলতে ফিরতে কষ্ট হচ্ছে, তাই আমান উল্লাহ দালালের মাধ্যমে ট্রলার করে মালয়েশিয়া যাচ্ছি। গত ১২ নভেম্বর মঙ্গলবার টেকনাফ সদর ইউনিয়ন থেকে আমান উল্লাহ মাঝি দালালসহ ফিশিং বোট নিয়ে ট্রলারে উঠি।
বালুখালী সি-ব্লকের মোঃ আয়াছ (১৯) জানান, ট্রলার যোগে সাগর পথে ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা ধরে মালয়েশিয়া পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল। নগদে ৩০ হাজার টাকা ও বাকি মালয়েশিয়ার উপকূলে পৌছঁলে পরিশোধে কথা রয়েছে। কিন্তু পথি ট্রলার বিকল হয়ে গেলে কোস্ট গার্ড সদস্যরা আমাদের উদ্ধার করে।
আফিয়া বেগম (১৫) বলেন, মালয়েশিয়াতে বউ হয়ে যাচ্ছি। দালালের মাধ্যমে দুই দিন ধরে ট্রলারে উঠেছি। এ অবস্থায় কোস্টগার্ড আমাদের আটক করেছে।
রশিদ আহমদের কন্যা সাবেকুন্নাহার নাহার (১৮) জানান, বাংলাদেশে আমার কেউ নেই। স্বামী মালয়েশিয়াতে রয়েছে। পাসপোর্ট করতে কড়াকড়ি হওয়ায় আমার স্বামীর মাধ্যমে মালয়েশিয়া প্রবাসী সলিম দালালের কথায় সাগর পথে আমাকে নিয়ে যাচ্ছেন।
আটককৃত দালাল গুলো হল: ফজল আহম্মদের ছেলে আমান উল্লাহ, আবুল হালিমের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম, আবু বক্কর ছিদ্দিকের ছেলে ইসলাম, নজির আহম্মদের ছেলে আতা উল্লাহ।
তথ্যসুত্রে জানা যায়, আটককৃত দালালদের প্রধান সহযোগি আয়ুব ঢাকা বসে থেকে বিভিন্ন ট্রলার মাঝিদের মাধ্যমে আমান উল্লাহ মাঝি দিয়ে বহুবার ট্রলার করে মালয়েশিয়া
বসবাসরত ছলিমের কাছে পাঠান। মানবপাচারকারী ছলিম অবৈধ পথে সাগর পাড়ি দিয়ে নিজে বনে যান বড় মাপের দালাল। সেই দীর্ঘদিন ধরে মালয়েশিয়া বসে কক্সবাজার জেলাসহ দেশের বিভিন্ন উপকূল দিয়ে সাগর পথে পাচার করছে। তাদের আরেক সহযোগি বার্মায়া নয়ন সেইও মালয়েশিয়া থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে উখিয়া-টেকনাফের অবস্থানরত ক্যম্প গুলো থেকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে মালয়েশিয়া পাড়ি জমাচ্ছে। এই দালালদের মালয়েশিয়াগামী সহযোগিসহ টেকনাফসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রশাসনের হাতে আটক হলেও কি করে বার বার ছাড় পেয়ে আবারও মানবপাচার কাজে লিপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এই নিয়ে টেকনাফের সচেতন মহলের দাবি মালয়েশিয়া গামী দালালদের কঠোর হাতে দমন না করলে পুনরায় পাচার কাজে লিপ্ত হয়ে যাচ্ছে।
কোস্টগার্ড টেকনাফ স্টেশন কমান্ডার লেঃ সোহেল রানা বলেন, সেন্টমাটিনের বঙ্গোপসাগরে একটি ট্রলার বিকল হয়ে ভাসমানের খবর পেয়ে উদ্ধার করতে যায়। ওই ট্রলারে মালয়েশিয়াগামী দালালসহ ১২২ জন রোহিঙ্গা রয়েছে। পরে তাদেরকে উদ্ধার করে টেকনাফ ট্রানজিট জেটিতে নিয়ে আসি। পরবর্তীতে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য টেকনাফ মডেল থানায় সোর্পদ করা হয়েছে।