পরিবহন ধর্মঘটে অচল দেশ, ভোগান্তিতে যাত্রীরা !!
নতুন সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে দেশের বিভিন্ন জেলায় পরিবহন ধর্মঘট চলছে। গত সোমবার থেকে কয়েকটি জেলায় শুরু হওয়া এই ধর্মঘটে বুধবার যোগ দিয়েছে বিভিন্ন জেলার পরিবহন শ্রমিকরা। এতে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। পূর্বঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ এমন ধর্মঘটে বিপাকে পড়েছেন বিভিন্ন রুটের যাত্রীরা। জাগো নিউজের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী বিভিন্ন জেলার পরিবহন ধর্মঘটের খবর তুলে ধরা হলো-
কুমিল্লা : সড়ক পরিবহন আইন বাতিলের দাবিতে পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘটে বুধবার যুক্ত হয়েছে কুমিল্লা জেলা। সকাল থেকে কুমিল্লার সঙ্গে ঢাকা, সিলেট, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনীসহ আন্তজেলা ও অভ্যন্তরীণ সড়কে চলাচলকারী বাস-মিনিবাসসহ সকল যানবাহন বন্ধ করে দিয়েছেন শ্রমিকরা।
কুমিল্লা পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম জানান, আজ ভোরে কুমিল্লা থেকে যাত্রী নিয়ে এশিয়া ও তিশা পরিবহনের গাড়ি ঢাকায় যাওয়ার পথে চিটাগাং রোড অতিক্রম করার পর ক্ষুব্ধ শ্রমিকদের বাধার মুখে পড়ে। এ সময় কিছু যানবাহন ভাঙচুর করা হয়। এছাড়াও সকাল ১০টার পর মহাসড়কের আরও কিছু স্থানে শ্রমিকরা অবস্থান নিয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে ঢাকামুখীসহ জেলা থেকে অন্যান্য সড়কেও গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন পরিবহন শ্রমিকরা। বুধবার (২০ নভেম্বর) সকাল ৬টা থেকে পরিবহন ধর্মঘট পালনে সাইনবোর্ড এলাকায় অবস্থান নেন শ্রমিকরা। তারা অনেক পরিবহন থেকে যাত্রী ও চালকদের নামিয়ে দিয়ে গাড়ি খালি করে দেন।
এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। হাজার হাজার গাড়ি সড়কে আটকা পড়েছে। শুধুমাত্র অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া সব ধরনের যান চলাচলে বাধা দিচ্ছেন পরিবহন শ্রমিকরা।
গাজীপুর : গাজীপুর থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে সব ধরনের বাস এবং পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। বুধবার সকাল থেকে কোনো পরিবহন রাস্তায় বের হতে দেখা যায়নি। এতে বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার জন্য যাত্রীদের বাসের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।
বেলা ১১টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাস্টারবাড়ি এলাকায় কিছু পরিবহন শ্রমিক বিভিন্ন যানবাহনের গতিরোধ করে তাদের উল্টো দিকে ফিরিয়ে দেন। তাদের মধ্যে পরিবহন শ্রমিক এমরাত হোসেন বলেন, কোনো নেতার নির্দশে নয়, আমরা নিজেরাই বাস চালানো থেকে বিরত রয়েছি। নতুন পরিবহন আইন বাতিল না করা পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।
খুলনা : খুলনার অভ্যন্তরীণ রুটে বুধবার (২০ নভেম্বর) সকাল থেকে বাস চলাচল কথা থাকলেও চলছে না বাস। নতুন সড়ক আইন সংশোধন দাবিতে খুলনায় তৃতীয় দিনের মতো কর্মবিরতি চলছে চালকদের। আগের দিন মঙ্গলবার প্রশাসনের সঙ্গে মালিক, শ্রমিকদের বৈঠকে আজ বুধবার থেকে বাস চালানোর কথা বলা হলেও সেই কথা বাস্তবায়ন হয়নি।
সকালে বাস ছাড়বে এমন খবরে সোনাডাঙ্গা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, রয়্যাল ও শিববাড়ির মোড়ে শতশত যাত্রীরা দূর-দূরান্তে যাত্রার উদ্দেশ্যে আসলেও বাস না ছাড়ায় যাত্রা ভঙ্গ হয়েছে তাদের। অধিকাংশ বাস কাউন্ডার বন্ধ রয়েছে। বাস বন্ধ থাকায় ট্রেনের টিকিটের জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন সবাই। খুলনা রেলস্টেশনে দূর দূরান্তের যাত্রীদের লম্বা লাইন দেখা গেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কোনো পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠন ধর্মঘট না ডাকলেও জেলা শহর থেকে দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যাচ্ছে না। বুধবার (২০ নভেম্বর) সকালে ঢাকার উদ্দেশ্যে কয়েকটি বাস ছেড়ে যাওয়ার পর কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলায় পরিবহন সংশ্লিষ্টদের বাধার কারণে বাসগুলো সেখানে যাত্রী নামিয়ে ফিরে এসেছে।
সকালে জেলা শহরের পৈরতলা বাসস্ট্যান্ড থেকে কয়েকটি বাস ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। কিন্তু বাসগুলো ভৈরব বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে শ্রমিকদের বাধার মুখে পড়ে। এরপর বাধ্য হয়ে যাত্রীদের সেখানে নামিয়ে দিয়ে ফিরে আসে বাসগুলো। কিছু বাসের টিকিট বিক্রি করার পর যাত্রীদের টিকিটের টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে। এর ফলে শহরের ভাদুঘর পৌর বাস টার্মিনাল ও সরাইল-বিশ্বরোড বাসস্ট্যান্ড থেকেও বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন মালিকরা।
মেহেরপুর : টানা তিন দিন বাস ধর্মঘটের পর মেহেরপুরে এবার শুরু হয়েছে ট্রাক, ট্যাঙ্কলরী ও কাভার্ডভ্যান ধর্মঘট। ফলে সকাল থেকে কোনো পণ্যবাহী পরিবহন জেলা থেকে ছেড়ে যায়নি। পাশপাশি বন্ধ রয়েছে আন্তজেলা ও দুরপাল্লার বাস।
বরগুনায় : নতুন সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে বরগুনায় পরিবহন ধর্মঘট শুরু করেছেন শ্রমিকরা। বুধবার সকাল থেকে এ ধর্মঘট শুরু করেন তারা। এতে বরগুনাসহ সকল রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। হঠাৎ করে পরিবহন ধর্মঘট শুরু হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা।
রাজবাড়ী : রাজবাড়ীতে যাত্রীবাহী বাস, ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চলাচল বন্ধ রেখেছে চালক ও শ্রমিকরা। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রী ও পণ্য পরিবহনকারীরা। তবে শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের দাবি- চালক ও শ্রমিকরা গাড়ি চলাচল বন্ধ করেছেন। এতে তাদের কোনো হস্তক্ষেপ নেই।
বুধবার (২০ নভেম্বর) সকাল থেকে রাজবাড়ীর আঞ্চলিক সড়কে কোনো যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল করতে দেখা যায়ানি। রাজবাড়ী থেকে ছেড়ে যায়নি দূরপাল্লা ও অভ্যন্তরীণ রুটের কোনো বাস।
রংপুরে : নতুন সড়ক পরিবহন আইন বাতিলের দাবিতে রংপুরে সড়কে অবস্থান নিয়েছে ট্রাক, ট্যাংকলরি ও কাভার্ডভ্যান চালকরা। সকাল থেকে নগরীর আরকে রোডের ট্রাক টার্মিনালের সামনে অবস্থান নিয়ে ধর্মঘট পালন করছেন তারা। ফলে সড়কে বাস, প্রাইভেটকার, মাইক্রোসহ পণ্য ও যাত্রীবাহী সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
লালমনিরহাট : লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দরে বুধবার (২০ নভেম্বর) সকাল থেকে ট্রাক, ট্যাংকলরি ও কাভার্ডভ্যান চলাচল বন্ধ থাকায় পণ্য পরিবহন বন্ধ রয়েছে।
লালমনিরহাট জেলা ট্রাক, ট্যাংকলরি ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি বুলবুল মিয়া বলেন, বর্তমান সড়ক পরিবহন আইন নিয়ে চলাচল করা সম্ভব নয়। তাই চালকরা যৌক্তিক দাবি নিয়ে ধর্মঘট শুরু করেছেন।
ময়মনসিংহ : দ্বিতীয় দিনের মতো ময়মনসিংহে থেকে ঢাকাসহ দূরপাল্লা ও অভ্যন্তরীণ সব সড়কে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। ময়মনসিংহের আন্তজেলা বাস টার্মিনাল মাসকান্দা থেকে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। গতকাল অভ্যন্তরীণ সড়কে বাস চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও আজ বুধবার সকাল থেকে অভ্যন্তরীণ সড়কেও বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে চালক ও শ্রমিকরা। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছের যাত্রীরা।
সিলেট : বুধবার সকাল থেকে বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকা দেশব্যাপী পণ্য পরিবহন ধর্মঘট সিলেটেও চলছে। তবে সিলেটে যাত্রীবাহী সব ধরনের পরিবহন চলাচল করছে। বুধবার দুপুর পৌনে ১২টায় নগরের কদমতলিস্থ সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, ট্রাক-পিকআপ কাভার্ডভ্যান শ্রমিকরা ধর্মঘটের সমর্থনে পিকেটিং করছেন। কেউ পণ্যবাহী গাড়ি চালালে বাধা দিচ্ছেন। তবে বাসসহ গণপরিবহনের চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
রাজশাহী : টানা তিনদিন ধরে রাজশাহীতে প্রায় বন্ধ রয়েছে অভ্যন্তরীণ ও আন্তজেলা রুটের বাস চলাচল। সীমিত আকারে চলছিল দূরপাল্লার যানবাহন। তবে বুধবার দুপুরের পর থেকে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব হোসেন চৌধুরী বলেন, সরকারকে বেকায়দায় ফেলে পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে চাইছেন কতিপয় বাস মালিক। এটি হতে দেবে না শ্রমিক ইউনিয়ন।
তিনি আরও বলেন, আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। রাজশাহী থেকে সব বাস চালাচলের পক্ষে আমরা। সকাল থেকে যেসব বাস রাজশাহী ছেড়েছে সেগুলো কোথাও কোন ধরনের বাধার মুখে পড়েনি। কোথাও জরিমানার শিকার হয়নি। বাস বন্ধ রাখলে সিরিয়াল বাতিল করা হবে।
ঝালকাঠি : ঝালকাঠি-বরিশাল, ঝালকাঠি-ঢাকাসহ অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার নয়টি রুটে সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। বুধবার থেকে ঝালকাঠি থেকে বরিশাল, বরিশাল থেকে ঝালকাঠি হয়ে খুলনা, বরিশাল থেকে ঝালকাঠি হয়ে পিরোজপুর, বরিশাল থেকে ঝালকাঠি হয়ে ভান্ডারিয়া, বরিশাল থেকে ঝালকাঠি হয়ে মঠবাড়িয়া, বরিশাল থেকে ঝালকাঠি হয়ে পাথরঘাটা, ঝালকাঠি-আমুয়া, বরিশাল-ঝালকাঠি ও ঝালকাঠি-ঢাকার বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। কোন ধরনের ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ করে বাস মালিক সমিতি বাস বন্ধ করে দেয়ায় যাত্রীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।
শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বাহাদুর চৌধুরী বলেন, সড়ক পরিবহন আইন শ্রমিকদের স্বাভাবিক জীবনের বিপরীতে। তাই আইন সংশোধনের দাবিতে আমরা আন্দোলন করছি।
মুন্সিগঞ্জ : সড়ক আইন সংশোধনের দাবিতে মুন্সিগঞ্জে পরিবহন ধর্মঘট পালন করছে চালক ও শ্রমিকরা। এতে করে চরম ভোগান্তি পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। বুধবার সকাল থেকে মুন্সিগঞ্জ-ঢাকা এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এবং ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক দিয়ে যাত্রীবাহী বাস, ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়।
মুন্সিগঞ্জের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মৃদুল বলেন, সকাল থেকে মুন্সিগঞ্জ ঢাকা রুটে সব ধরনের যানবাহন বন্ধ রয়েছে। তবে কোথাও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জে অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘট শুরু করেছে শ্রমিকরা। বুধবার বেলা ১টার পর হঠাৎ জেলার অভ্যন্তরীণ সড়ক ও আন্তজেলা রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয় তারা। এতে চরম দুর্ভোগে পড়ে ঢাকা-সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতকারী সাধারণ মানুষ। মোটর মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক শংখ শুভ্র রায় জানান, তারা কোনো পরিবহন ধর্মঘট ডাকেননি। কিন্তু শ্রমিকরা গাড়ি চালাচ্ছেন না। এ অবস্থায় তারা কিছুই করতে পারছেন না।
বগুড়া : নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর হওয়ায় বগুড়ায় অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘট পালন করছে পরিবহন শ্রমিকরা। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বগুড়া বাস টার্মিনাল, আন্তজেলা বাস টার্মিনাল, কোচ টার্মিনাল থেকে কোনো যানবাহন বের হয়নি।
বগুড়া জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল গফুর বলেন, নতুন আইন কার্যকর হওয়ায় চালকরা গাড়ি চালাচ্ছেন না। ঢাকায় কমিটির মিটিং চলছে, সেখানে সিদ্ধান্ত হবে। তবে জোর করে কোনো গাড়ি বন্ধ করা হয়নি।