যে কারনে মধ্য রাতে কামানের বিকট শব্দে জেগে উঠল বরিশালবাসী !!
মধ্য রাত। ঘুমিয়ে কাদা বরিশালবাসী। হঠাৎ শোনা গেল ধরিত্রী কাঁপানো কামানের শব্দ, ধ্রিমমমমম…। একটা থেমে যাওয়ার পর আরেকটা, ধ্রিমমমমমম…। বলছি ‘গানস অব বরিশাল’ এর কথা। ১৮৭০ শতাব্দীর দিকে প্রায়ই সাগরের দিক থেকে এমন শব্দ ভেসে আসত বরিশালে। তখন বরিশালের নাম ছিল বাকেরগঞ্জ। এই শব্দ-রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা সেই ব্রিটিশদের সময় থেকে শুরু হয়। ইংরেজদের প্রাথমিক ধারণা ছিল, হয়তো ডাচ কিংবা পর্তুগিজ জলদস্যুরাই বরিশালে কোনো গোপন ঘাঁটি করে ভয় দেখানোর জন্য এই আওয়াজ করছে।
কারণ মোঘল যুগে বরিশাল-পটুয়াখালী অঞ্চলে পর্তুগীজ এবং ডাচ জলদস্যুদের বেশ তাণ্ডব ছিল। অনেকের ধারণা, পর্তুগিজ জলদস্যুরা একটা খাল খনন করে সাগর থেকে নদীতে আসার জন্য। আর এই খালটি পরবর্তীতে পটুয়াখালী নামে পরিচিতি লাভ করে। তাই ইংরেজদের এমন ধারণা বেশ প্রখর হয়ে ওঠে। শুরু হয়ে যায় খোঁজাখুঁজি। তন্য তন্য করে খোঁজার পরেও কোনো জলদস্যু জাহাজ বা ঘাঁটির খোঁজ বের করতে পারেনি ইংরেজ সৈন্যরা।
১৮৭০-এর দিকে প্রথম বারের মত বরিশাল গানসের কথা নথিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানা যায়। তবে ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিক থেকেই এটি শোনা যেত বলে নথিপত্রগুলোতে উল্লেখ করা হয়। ১৮৮৬ সালে কলকাতার এশিয়াটিক সোসাইটির হিসাব অনুযায়ী খুলনা, বরিশাল, নোয়াখালী, নারায়ণগঞ্জ, হরিশপুর প্রভৃতি স্থানে বরিশাল গানস শোনা গেছে। বরিশালের মত ভারতের গঙ্গা নদীর তীর, যুক্তরাষ্ট্র, বেলজিয়াম, স্কটল্যান্ড, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, জাপান, ফিলিপাইন, অস্ট্রেলিয়া, উত্তর সাগরসহ আরও কিছু এলাকায় এ ধরনের শব্দ শোনা গেছে।
ইতিহাসবিদ সিরাজউদ্দিন আহমেদের মতে, একজন ব্রিটিশ ম্যাজিস্ট্রেট, যার নাম হেনরি বেভারিজ, তিনিই সর্বপ্রথম ‘গানস অব বরিশাল’ নামটি ব্যবহার করেন। ১৮৭৬ সালে প্রকাশিত তার লেখা বই ‘ডিস্ট্রিক্ট অব বাকেরগঞ্জ‘-এ এই শব্দের ব্যাপারে উল্লেখ রয়েছে। এই লেখা থেকে জানা যায়, ফ্রেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর মাসে বরিশাল থেকে দক্ষিণ কিংবা দক্ষিণ পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর থেকে অদ্ভুত কিছু আওয়াজ শোনা যায়, যা অনেকটা কামান ফাটানোর শব্দ বলে মনে হয়।
স্থানীয়রা এই শব্দকে ‘বরিশাল কামান’ বলে ডাকতে থাকে। আর তাই তিনিও তার লেখায় এর আওয়াজের নাম দিলেন ‘গানস অব বরিশাল’। কখনো কখনো একটা শব্দ শোনা যেত, আবার কখনো দুই বা তিনটি শব্দ একসঙ্গে শোনা যেত। মজার ব্যাপার হলো, শব্দটা যে আসলে কী এবং এর উৎসটাই বা কী, তা কিন্তু আজো সবার কাছে অজানা।