ভারতের বালির বন্ধ বাড়িতে ৪১ বাংলাদেশি !!
দুই নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে ঢালু রাস্তায় কিছুটা নামলেই থানা। তার পাশে বিশাল জলাশয়ের পাড়ে বাড়িটার তেতলার জানালায় শুকানো হচ্ছে কিছু জামা-কাপড়। মাঝেমধ্যে জানালার ধারে এসেও মুহূর্তের মধ্যে মিলিয়ে যাচ্ছে কয়েকটি মুখ!
ভারতের বালির সমবায় পল্লিতে জলাশয় ও গাছপালা ঘেরা ‘অক্ষয়নগর পল্লিশ্রী সঙ্ঘ’ নামক বাড়িটা ঘিরে অদ্ভুত এক নিস্তব্ধতা। তেতলা বাড়িতে ঢোকা-বেরোনোর জন্য যেসব দরজা রয়েছে, তার সব কটিই বন্ধ। পিছনের দিকের ভবনে লোহার দরজার সামনে পাহারায় উর্দিধারী পুলিশ। ‘প্রবেশ নিষেধ’। কারা আছেন সেখানে?
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, সীমান্ত পার করিয়ে দেওয়ার জন্য কর্নাটক পুলিশ যেসব বাংলাদেশিকে বাংলায় এনেছিল, ‘মানবিকতার খাতিরে’ তাঁদেরই ৪১ জনকে ওই সরকারি বাড়িতে রাখা হয়েছে। বালি দুর্গাপুর-অভয়নগর দুই নম্বর পঞ্চায়েতের ওই বাড়িটি বিভিন্ন সরকারি কর্মসূচিতে ব্যবহার করা হয়। পিছনের দিকের যে-অংশ রয়েছে, তারই তেতলায় রাখা হয়েছে ৪১ জনকে। তাঁদের মধ্যে ৩০ জন মহিলা, চারজন পুরুষ এবং সাতটি বাচ্চা। বাকিদের রাখা হয়েছে হাওড়ার লিচুবাগান এলাকায়।
গত শনিবার বিকেলে বেঙ্গালুরু থেকে ৫৯ জন বাংলাদেশিকে হাওড়া স্টেশনে নিয়ে আসে কর্নাটক পুলিশ। কিন্তু ‘পদ্ধতিগত জটিলতার’ কারণে তাঁদের সীমান্ত পার করানো সম্ভব হয়নি। সেদিনই রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ স্তর থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, ওই বাংলাদেশিদের ফেরার বিষয়ে জটিলতা কাটার আগ পর্যন্ত তাঁদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। সেই অনুযায়ী শনিবার রাত থেকে হাওড়ার বিভিন্ন প্রান্তে ওই ৫৯ জনের থাকার বন্দোবস্ত করেছে প্রশাসন।
স্থানীয় সূত্রের খবর, শনিবার রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ কড়া পুলিশি পাহারায় নিশ্চিন্দা থানার কাছে ওই বাড়িতে আনা হয় ৪১ জনকে। তার পর থেকে এলাকার কেউ তাঁদের বাড়ির বাইরে বেরোতে দেখেননি।
স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘পরে জেনেছি, ওঁরা বাংলাদেশি। ওঁদের ঘরের ভিতরে আটকে থাকতে হচ্ছে ঠিকই। তবে সেখানে টিভি, বিছানাসহ সব কিছুরই বন্দোবস্ত আছে।’’
জানা গেছে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রত্যেকের থাকার জন্য আলাদা খাট-বিছানার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওই অনুপ্রবেশকারীদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের। বাড়ির ভিতরেই ২৪ ঘণ্টার মেডিক্যাল ক্যাম্পও চালু রাখা হয়েছে। কর্নাটক থেকে এসেছেন পুলিশের ৪০ জন কর্মী। অনুপ্রবেশকারীদের সঙ্গে তাঁরাও ভাগাভাগি করে আছেন ওই বাড়িতেই। রবিবার খাবার, ওষুধ দিয়ে ওই অনুপ্রবেশকারীদের সহযোগিতা করতে আসেন এক মানবাধিকার সংগঠনের সদস্যেরা। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁদের সহযোগিতা করার অনুমতি দেওয়া হয়নি।
ওই মানবাধিকার সংগঠনের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রঞ্জিত শূর বলেন, ‘‘প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, মানুষগুলির সঙ্গে যেন নিয়ম মাফিক এবং মানবিক আচরণ করা হয়।’’এদিকে ওই অনুপ্রবেশকারীদের দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া কতটা এগোল? সে বিষয়ে পুলিশ, প্রশাসন কিংবা বিএসএফ- কোনো পক্ষ থেকে জবাব মেলেনি।