ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করল বিএনপি নেতারা !!
‘অনুমতি না নিয়ে সভা-সমাবেশ করার সাহস বা শক্তি কোনোটাই বিএনপির নেই’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছেন বিএনপি নেতারা। গত রবিবার (২৪ নভেম্বর) বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সমাবেশ করতে আর কখনও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুমতি চাইবে না বিএনপি। তিনি আরও বলেন, আমরা যখন খুশি তখন সমাবেশ করব। এটা আমাদের অধিকার, সংবিধান অনুযায়ী অধিকার।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এ বক্তব্যের সমালোচনা করে সোমবার (২৫ নভেম্বর) সচিবালয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, অনুমতি না নিয়ে সভা-সমাবেশ করার সাহস বা শক্তি কোনোটাই বিএনপির নেই। বিএনপি তাদের নেত্রীকে কারাগার থেকে মুক্ত করতে ৫০০ কর্মী নিয়ে একটি মিছিল-মিটিং করতে পারেনি তারা কীভাবে অনুমতি না নিয়ে সভা-সমাবেশ করবে? এ বিষয়টি হাস্যকর ছাড়া কিছুই না। তাহলে কি আজ হাইকোর্টর সামনে বিএনপি খালেদার জিয়ার মুক্তির দাবিতে হাজার হাজার নেতাকর্মী নিয়ে যে বিক্ষোভ মিছিল করেছে, সেটা কি তাহলে ওবায়দুল কাদেরকে দেখানোর জন্যই? এমন প্রশ্ন করছেন অনেকে।
এদিকে ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের কড়া জবাব দিয়েছে বিএনপি। দলটির নেতারা বলছেন, নিজেদেরকে প্রভু ভাবতে শুরু করেছে ক্ষমতাসীন নেতারা। মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) সকালে ঠাকুরগাঁওয়ে নিজ বাসভবনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ওবায়দুল কাদেরের মানসিক সমস্যা রয়েছে। তারা এখন নিজেদেরকে প্রভু ভাবতে শুরু করেছে। এটাই তাদের সমস্যা হয়ে গেছে। সব কিছু তারা তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়। তিনি আরও বলেন, ভিন্ন একটি রাজনৈতিক দল কীভাবে চলবে এটাও তারা নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। অথচ সংবিধানে খুব পরিষ্কারভাবে সকল দলকে সভা-সমাবেশ ও প্রতিবাদ করার অধিকার দেয়া আছে।
ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য কিভাবে দেখছেন জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ক্ষমতায় থাকলে এমন কথায়ই বলে। অপেক্ষায় থাকেন দেখতে পারবেন। ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য কিভাবে দেখছেন জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বিডি২৪লাইভকে বলেন, আমার মনে হয় তিনি নেতাকর্মীদের মনোবল ধরে রাখার জন্য এমন কথা বলেছেন। কারণ উনি একই বক্তব্যে বলেছেন তারা অনুমতি ছাড়া সভা করেছে। ওনরা যদি অনুমতি ছাড়া সমাবেশ করেন, তাহলে বিএনপিরও অনুমতি ছাড়া সভা করার অধিকার আছে সেটা স্বীকার করতে উনি চান না কেন? নিজে যেটা করবেন সেটা সঠিক, আর অন্যরা সেই একই কাজ করলে সেটা বেঠিক হয় কি করে? এটাতো কোন যুক্তি সঙ্গত কথা হতে পারে না।
তিনি বলেন, মহাসচিব যেটা বলেছেন যে, সমাবেশ করতে আর কখনও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুমতি চাইবে না বিএনপি। এটা আমাদের দলের কথা, সকলের কথা। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও কৃষক দলের আহ্বায়ক শামসুজ্জামান দুদু বিডি২৪লাইভকে বলেন, সাংবিধানিক ভাবে ওবায়দুল কাদের এ কথা বলতে পারেন না। ওনি যদি সংবিধান মানেন তাহলে বিরোধী দলের জন্য সভা সমাবেশ করাটা অবধারিতই থাকে এখানে অনুমতির কোন প্রশ্নই ওঠে না। স্বাধীন দেশে সকলেই সভা সমাবেশ করার সুযোগ পায়, এটা আমরা পাকিস্তান আমল থেকেই পাচ্ছি, বাংলাদেশেতো এটা না পাওয়ার কিছু নেই।
তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদের যে কথা বলেছেন তাতে বোঝা যায় তিনি গণতন্ত্রের মধ্যে নেই, তিনি স্বৈরতন্ত্রের মধ্যে রয়েছেন। বিএনপির সভা সমাবেশ করার শক্তি সামর্থ ক্ষমতা নেই এগুলো স্বৈরতান্ত্রিক সমাজের কথা। আর সভ্য সমাজের কথা হচ্ছে আমি একজনকে সভা সমাবেশ করতে দেব, মত প্রকাশ করতে দেব। ওবায়দুল কাদের সাহেব যেভাবে আমাদের মহাসচিবের বক্তব্যকে যেভাবে খন্ডন করেছেন সেটা একটা সভ্যতা আর অসভ্যতা। বিএনপির মধ্যে সভ্যতার পর্যায় আছে, আর আওয়ামী লীগেরটা অসভ্যতার পর্যায় রয়েছে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের কথা বলতে দেয়া উচিত ওবায়দুল কাদের সেই যায়গা থেকে সরে গেছেন। এটা সভ্যতার পর্যায়ে পড়ে না গণতন্ত্রের পর্যায়ে পড়ে না। এটা নিন্দা যোগ্য একটা বক্তব্য দিয়েছেন ওবায়দুল কাদের।
ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যে কড়া সমালোচনা করে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বিডি২৪লাইভকে বলেন, ওবায়দুল কাদের দীর্ঘ দিন অসুস্থ ছিলেন। একটি জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন অনেকদিন। এই কারণে হয়তো ওনার চোখের দৃষ্টি বা যেটা দৃশ্য মান এটা দেখতে হয়তো ওনার কষ্ট হচ্ছে। কারণ শুধু ঢাকায় না বিভিন্ন জেলাতে আমরা যেই বিভাগীয় সমাবেশগুলো করেছি বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে সেখানে হাজার হাজার লোক হয়েছে, কিন্তু দশ হাজার লোকের কম কোন সমাবেশে হয়নি এর উপরেই হয়েছে সব। এখন যদি উনি শত আর হাজারের পার্থক্য না বুঝেন সেটা মনে হয় ওনার অসুস্থার কারণেই বুঝতে পারছেন না। এজন্য ওনাকে আমি দোষ দিচ্ছি না।
সূত্রঃ বিডি২৪লাইভ