‘মরার সময় না জানি মেয়েটা কতবার , মা-মা বলে চিৎকার করেছে’ !!
‘জরুরি কাজের কথা বলে গেল, ফিরল লাশ হয়ে। আমার মেয়েকে কত কষ্ট দিয়ে ওরা মেরেছে। মরার সময় মেয়েটা কতবার জানি, মা-মা বলে চিৎকার করেছে।’ এভাবেই মেয়ে হারানোর শোকে কেঁদেই চলেছেন ঢাকার স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী রুবাইয়াত শারমিন রুম্পার মা নাহিদা আক্তার পারুল। মেয়ের শোকে বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন তিনি। ময়মনসিংহের সদর উপজেলার বিজয়নগরে রুম্পার গ্রামের বাড়ি। গত বুধবার (৪ নভেম্বর) রাতে রাজধানীর ইনার সার্কুলার রোড থেকে রুম্পার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর ময়নাতদন্ত শেষে শুক্রবার ভোর ৫টায় রুম্পার লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। সেখানে বেলা ১০টায় জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে দাদী রুবিলা খাতুনের কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।
মেয়ের কবরের সামনেই বসে অঝোরে কাঁদছেন পুলিশ কর্মকর্তা বাবা মো. রুককুন উদ্দিন। স্বজনরা তাকে সান্ত্বনা দিয়েও কান্না থামাতে পারছেন না। দুদিন ধরে কিছুই খাননি। শারীরিকভাবে অসুস্থও হয়ে পড়েছেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বাবা বলেন, ‘যার যায় সেই বুঝে। আমি মেয়ে হারাইনি, আমি আমার সর্বস্ব হারিয়েছি। কত কষ্ট করে মেয়েকে লালন-পালন করে বড় করেছি। সামনে কত সুন্দর ভবিষ্যৎ পড়েছিল তার। অথচ তার আগেই মেয়েকে পৃথিবী থেকে চলে যেতে হলো।’ এদিকে রুম্পার মায়ের সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হলে তিনি জানান, গত বুধবার টিউশনি শেষে বাসায় ফেরার পর রুম্পা বাইরে কাজ আছে বলে আবার বাসা থেকে বের হন।
কিন্তু এরপর রাতে আর বাসায় ফিরেননি। স্বজনরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও তার সন্ধান পাননি। বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) রুম্পার মা-সহ স্বজনরা রমনা থানায় গিয়ে লাশের ছবি দেখে তাকে শনাক্ত করেন। তিনি বারবার চিৎকার করে বলেন, ‘ইউনিভার্সটিতে ছাত্রছাত্রীদের শিফট আলাদা হওয়ায় দুদিন ধরে মেয়ের মনও খারাপ ছিল। তার সঙ্গে কারো বিরোধ ছিল কি, না তা বলতে পারছি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘বুধবার (৪ ডিসেম্বর) সকালে ডিম ভাজি করে নিজ হাতে খাইয়ে দিয়েছি। এটাই যে শেষ খাওয়া কে জানতো? সন্ধ্যায় তার চাচাতো ভাই শুভর নিকট ব্যাগ-মোবাইল দিয়ে চলে যায়। বাসার দ্বিতীয় তলাও রুম্পা উঠেনি। এমন কী জরুরি কাজ ছিল? যার জন্য এতো দ্রুত ছুটে যায়। দিন-রাত অপেক্ষায় ছিলাম- এইতো মেয়ে ফিরবে-ফিরে আসবে। এলো লাশ হয়ে; আমার মেয়েকে কেন মেরে ফেলল, আমি বিচার চাই, বিচার চাই।’
রুম্পার মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড দাবি করে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান স্বজনরাও। রুম্পার ফুফু চামেলী খাতুন জানান, ‘কারও সঙ্গে সম্পর্ক ছিল কিনা, জানি না। এভাবে একটা মেয়েকে মেরে ফেলবে? আমরা হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।’ উল্লেখ্য, রুম্পার বাবা মো. রুককুন উদ্দিন হবিগঞ্জ জেলার পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক হিসাবে কর্মরত। মা নাহিদা আক্তার পারুল গৃহিণী। এক ভাই ও এক বোনের রুম্পা সবার বড়। রুম্পা ২০১৪ সালে রাজারবাগ পুলিশ লাইনস স্কুল থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি, ২০১৬ সালে ভিকারুন্নিসা নুন স্কুল এন্ড কলেজ থেকে জিপিএ-৫ এইচএসসি উত্তীর্ণ হন। রুম্পা স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। আর ছোট ভাই আশরাফুল আলম রাজধানীর ঢাকার ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে অধ্যয়নরত। রাজধানী ঢাকার শান্তিবাগে একটি ফ্ল্যাটে মায়ের সঙ্গে থেকে পড়াশোনা করতেন রুম্পা ও তার ছোট ভাই। পড়াশোনার পাশাপাশি রুম্পা টিউশনি করাতেন।