অবাধে প’রকীয়া চালাতেই ট্রিপল মা’র্ডার, ‘খলনায়িকা’ গ্রেপ্তার !!
বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলায় আলোচিত ট্রিপল হ’ত্যাকাণ্ডের প্রকৃত রহস্য অবশেষে উদঘাটিত হয়েছে। কুয়েত প্রবাসী ইমাম আবদুর রবের স্ত্রী মিশরাত জাহান মিশুর প’রকীয়া প্রেমের জের ধরেই এ হ’ত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় বলে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। ঘটনার নেপথ্যের এই ‘খলনায়িকাকে’ হ’ত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গতকাল রোববার রাত ১১টায় কুয়েত প্রবাসীর স্ত্রী মিশুকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছেন বরিশালের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনদিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে গ্রেপ্তার মিশুকে বানারীপাড়া থেকে বরিশাল আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। পরে তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. মনিরুজ্জামান।
বরিশালের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহম্মদ আবদুর রকিব দৈনিক আমাদের সময়কে বলেন, ‘ট্রিপল মা’র্ডারে গ্রেপ্তার জাকির হোসেন ও জুয়েলের দেওয়া জবানবন্দি অনুযায়ী হ’ত্যাকাণ্ডের সঙ্গে প্রবাসীর স্ত্রী মিশরাত জাহান মিশুর জড়িত থাকার বিষয়টি সামনে আসে। এরপর তাকে বানারীপাড়ার সলিয়াবাকপুর এলাকার নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।’
হ’ত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া প্রধান দুই আসামি জাকির ও জুয়েল আদালতের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। রোববার রাতে বরিশাল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. এনায়েত উল্লাহ তাদের জবানবন্দি রেকর্ড শেষে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
র্যাব ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তার হওয়া দুই আসামির মধ্যে রাজমিস্ত্রি জাকির হোসেন তিন বছর আগে প্রবাসী আবদুর রবের বাড়ি নির্মাণ করেন। সে সময় মিশরাত জাহান মিশু রাজমিস্ত্রি জাকিরের সঙ্গে প’রকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। সেই থেকে প্রায়ই প্রবাসীর বাড়িতে আসা-যাওয়া করতেন জাকির।
এক পর্যায়ে ছেলের বউ ও রাজমিস্ত্রির প’রকীয়া ধরে ফেলেন প্রবাসীর মা মরিয়ম বেগম। এ নিয়ে ছেলের বউ ও শাশুড়ির মধ্যে মনোমালিন্য তৈরি হয় এবং সেই সূত্র ধরেই মূলত হ’ত্যার পরিকল্পনা হয়। সে মোতাবেত গত শুক্রবার রাতে সহযোগী জুয়েলকে নিয়ে প্রবাসীর ঘরে প্রবেশ করেন জাকির। তারা দুজনে মিলে প্রবাসীর মা ও ভগ্নিপতিসহ তিন জনকে হ’ত্যা করেন।
প্রথমে তারা প্রবাসীর খালাতো ভাই ভ্যানচালক ইউসুফকে (২২) শ্বাসরোধ করে হ’ত্যা করেন। পরে প্রবাসীর মা মরিয়ম বেগমকে (৭৫) একইভাবে হ’ত্যা করার সময় পাশের কক্ষে ঘুমিয়ে থাকা প্রবাসীর বোন জামাই শফিকুল আলম ঘুমের মধ্যে কাশি দিলে ঘাতকরা মনে করেন তিনি (শফিকুল) বিষয়টি টের পেয়েছেন। ফলে ধরা পড়ার ভয়ে তাকেও শ্বাসরোধ করে হ’ত্যা করা হয়।
হ’ত্যাকাণ্ডের পর স্বর্ণালঙ্কার ও তিনটি মোবাইল ফোন নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্য ছিল হ’ত্যাকাণ্ডের বিষয়টি ডাকাতি বলে প্রমাণ করা।জানা গেছে, এই দুই আসামি আদালতে জবানবন্দি দেওয়ার পরে ঘটনার সঙ্গে প্রবাসীর স্ত্রী জড়িত থাকা এবং প’রকীয়ার বিষয়টি সামনে চলে আসে।
এদিকে পরকিয়া প্রেমিকের সঙ্গে নির্বিঘ্নে মিলিত হতে ও সংসারে স্বাধীনভাবে বিচরণ করে কর্তৃত্ব নিজের হাতে নিতে তার সঙ্গে পরিকল্পনা করেন মিশু। পূর্বপরিকল্পিতভাবে শাশুড়িসহ তিনজনকে তিনি হ’ত্যা করিয়েছেন বলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বানারীপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিশির কুমার পাল দৈনিক আমাদের সময়কে জানান।
শিশির আরও জানান, ঘাতকদের পথের কাটা হিসেবে মূল টার্গেট ছিল বৃদ্ধা মরিয়ম বেগম ও তার বোনের ছেলে ইউসুফ।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার দিবাগত রাতে বানারীপাড়ার সলিয়াবাকপুর গ্রামের হাওলাদার বাড়ির বাসিন্দা ও কুয়েতের একটি মসজিদের ইমাম হাফেজ আবদুর রবের মা মরিয়ম বেগম, ভগ্নিপতি ও সাবেক স্কুল শিক্ষক শফিকুল আলম এবং খালাতো ভাই ইউসুফকে নৃশংসভাবে হ’ত্যা করা হয়।শনিবার সকালে ঘটনাস্থল থেকে রাজমিস্ত্রি জাকির হোসেন ও রাতে র্যাবের সহযোগিতায় তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে বরিশাল থেকে জুয়েলকে গ্রেপ্তার করা হয়।