মুসলিমদের ঠেকাতে হিন্দুদের রাস্তায় নামাচ্ছে মোদি সরকার !!
বর্তমানে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে উত্তাল ভারত। ইতোমধ্যে আসাম, ত্রিপুরা রাজ্য ও পশ্চিমবঙ্গসহ কয়েকটি রাজ্যে পথে নেমে এসেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। এছাড়া দিল্লি ও উত্তর প্রদেশের ছাত্ররাও বিক্ষোভ করেছে। এদিকে, ‘দিন একটি ইট আর ১১ টাকা’-অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণে এই ঘোষণা দিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। এই মন্দির নির্মাণে এগিয়ে আসতে দেশের সব নাগরিকদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে বিক্ষোভ ঠেকাতে হিন্দুদের পথে নামাতে পরিকল্পনা করছে মোদি সরকারের বিজেপি।
এদিকে এগারো কেন? দশ নয় কেন? -এই প্রশ্নে বিজেপির যুক্তি, আগেপিছে সংখ্যাটি যাই হোক, ওই এক টাকাতেই ষোলো আনা মনোবাঞ্ছা পূরণ হয়। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের চাপে নিজের রাজ্য গুজরাট সফরও বাতিল করতে হচ্ছে অমিত শাহকে। কিন্তু ঘটা করে বলছেন, অযোধ্যায় গগনচুম্বি রামমন্দির হবে। চার মাসের মধ্যে শুরু হবে সে কাজ। আর এই মন্দিরের জন্য সরকার কোনও টাকা খরচ করবে না। আমজনতার থেকেই চাওয়া হবে মন্দির গড়ার অর্থ। যেমন বলা, তেমনই কাজ। অমিত শাহও বললেন, যোগীও সঙ্গে সঙ্গে চাঁদা চাইলেন। কিন্তু অযোধ্যাকে ঘিরে গেরুয়া শিবিরের এই তৎপরতা নিছক মন্দির গড়া নিয়ে ভাবলে ভুল হবে। গেরুয়া শিবিরে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, গত কয়েকদিন ধরেই অযোধ্যা নিয়ে ভোট প্রচারেও ঘনঘন বলছেন নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহেরা। অথচ গত লোকসভাতেও এই নিয়ে তেমন উচ্চবাচ্য করেননি। এখন কেন?
এদিকে বিজেপি শিবিরের অভিমত, এটিও হিন্দুত্বের প্রচার। এর মধ্যে সুকৌশলে লুকিয়ে আছে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন ঘিরে রাজনীতিও। গত কয়েকদিন ধরেই এই আইনের বিরোধিতায় বিক্ষোভ হচ্ছে দেশের নানা প্রান্তে। যাঁদের না কি ‘পোশাক’ দেখেই চিনে ফেলছেন মোদি-শাহ। অর্থাৎ, বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের ইঙ্গিত, সংখ্যালঘুরাই তাণ্ডব চালাচ্ছেন। এর পাল্টা কৌশল কী হতে পারে? হিন্দুদের পথে নামানো। এবারে সেই পথেই হাঁটতে চাইছে বিজেপি। ২০০২ সালের পরে মোদির পক্ষে যেভাবে প্রচার হয়েছিল, এখন সেটিকেই আবার নতুন করে ঝালানো হচ্ছে।
বিজেপির তথ্যপ্রযুক্তি মোর্চার প্রধান অমিত মালব্য। আজ সকালে অনেকটা ‘তোমাকে চাই’ গোছের টুইট করলেন, ‘বিরোধী দল, পাকিস্তান, সংবাদমাধ্যম, বিশিষ্টজন, অপরাধী, দুর্নীতিগ্রস্ত, সকলে মোদির বিরুদ্ধে। কিন্তু সাধারণ মানুষ আপনার পাশে। কারণ, আপনাকে চাই।’
তিনি কংগ্রেসকে আক্রমণের নামে হুঁশিয়ারি দিলেন, এক দশকের বেশি সময় ধরে কংগ্রেস দেশের নীরব সংখ্যাগুরুর ক্ষতি করেছে। গেরুয়া সন্ত্রাস তকমা লাগানো হয়েছে। ‘১৪ ও ‘১৯ সালে তাঁরা জবাব দিয়েছেন। এবারও দেবেন।
এদিকে ‘পাকিস্তান’ প্রসঙ্গ তুলে মোদি ইতিমধ্যেই মেরুকরণের তাস খেলছেন। চ্যালেঞ্জ ছুড়ছেন কংগ্রেসকে। আজ যার জবাব দিয়েছেন প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম। কিন্তু বিজেপি যে এই বিষয়টি জিইয়ে রাখতে চায়, সে বার্তা দলের নিচু তলার কাছে স্পষ্ট। যে কারণে তারাই বলছে, অযোধ্যার রামমন্দির নির্মাণের চাঁদা তোলার অভিযানও আসলে হিন্দুদের সংগঠিত করা। রাজ্যে রাজ্যে নাগরিকত্ব আইনের সমর্থনে নামানো হয়েছে ছাত্রদেরও।
সক্রিয় আরএসএস-এর সংগঠনও। নাগরিকত্ব বিলের সমর্থনে আগামীকাল দিল্লির রাজঘাটে অবস্থান করবেন অন্যদেশ থেকে আসা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, পার্সি নির্বিশেষে অমুসলিমরা। অবশ্যই গেরুয়া শিবির একজোট করেছে তাদের!
এদিকে কর্নাটকের বিজেপি সরকার জানিয়েছে, কোনও রকম বিক্ষোভ-আন্দোলনে যাতে জনজীবন ব্যাহত না হয়, তা নিশ্চিত করতে আগামীকাল ভোর ছয়টা থেকে বেঙ্গালুরু-সহ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় ১৪৪ ধারা বলবৎ হবে। চলবে ২১ ডিসেম্বর মাঝরাত পর্যন্ত।