নাগরিকত্ব আইনের নতুন ব্যাখ্যায় পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে !!
বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) বিরুদ্ধে ভারতজুড়ে তীব্র বিক্ষোভের মুখে এ নিয়ে নতুন নতুন ব্যাখ্যা দিচ্ছে দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিরোধীদের অভিযোগ সেই ব্যাখ্যায় সন্দেহ দূর হওয়ার বদলে আরও ঘোলাটে হয়ে উঠছে পরিস্থিতি।
শনিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনটির নতুন এক ব্যাখ্যা দিয়েছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি। নাগরিকত্ব আইনের ব্যাখ্যায় বলা হয়, প্রথমত, ১৯৮৭ সালের ১ জুলাইয়ের আগে যারা ভারতে জন্মেছেন, তারা সবাই এ দেশের নাগরিক।
দ্বিতীয়ত, ১৯৮৭ সালের ১ জুলাই থেকে ২০০৪ সালের ৩ ডিসেম্বরের মধ্যে যারা জন্মেছেন এবং যাদের বাবা-মায়ের মধ্যে কোনো একজন ভারতের নাগরিক, তিনিও ভারতীয়।
তৃতীয়ত, ৩ ডিসেম্বর ২০০৪ সালের পরে যারা জন্মেছেন এবং যাদের বাবা-মা দু’জনেই ভারতের নাগরিক কিংবা একজন ভারতীয় নাগরিক এবং অন্যজন সেই সময়ে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী নন, তারাও ভারতের নাগরিক হিসেবে গণ্য হবেন।
কিন্তু বিরোধীদের বক্তব্য, ১৯৮৭ সালের ১ জুলাইয়ের আগে যখন জন্মের নথিকরণ বাধ্যতামূলক ছিল না, তখন যাদের জন্ম, তারা কী নথি দেখাবেন? এছাড়া ২০০৪ সালের ৩ ডিসেম্বরের পরে জন্মানো কেউ যদি বাবা বা মায়ের মধ্যে কোনো একজনকে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে প্রমাণ করতে না পারেন, তাহলে তার নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।
কিন্তু তিনি যেহেতু ভারতে জন্মেছেন, তাই অ-মুসলিম হলেও নিজেকে শরণার্থী দাবি করে নয়া নাগরিকত্ব আইনের সুবিধা নিতে পারবেন না। এ সব জটিলতার সমাধান কী?
গত ১২ ডিসেম্বর পাস হওয়া নাগরিকত্ব আইন অনুসারে, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ পর্যন্ত নিপীড়নের মুখে বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান থেকে পালিয়ে যাওয়া হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন, পার্সি ও খ্রিস্টানদের নাগরিকত্ব দেয়া হবে।
এসব প্রশ্নের স্পষ্ট জবাব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যায় মেলেনি। যদিও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের দাবি, দেশজুড়ে এনআরসি চালু করার সময় যে নিয়মকানুন তৈরি হবে, তাতে বৈধ নাগরিকদের কারও কোনো সমস্যা হবে না। জন্মের নথি বা স্কুলে পড়ার নথি দাখিলের মাধ্যমে নাগরিকত্বের আবেদন করা যাবে।
নিরক্ষর ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে। তাদের ক্ষেত্রে জন্মের সাক্ষী থাকা কোনো ব্যক্তি বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের প্রশংসাপত্রের ভিত্তিতে নাগরিকত্বের আবেদন করা যাবে।
দেশজুড়ে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) তৈরি হওয়ার পরে তাতে নাম উঠলে মিলবে ন্যাশনাল সিটিজেনশিপ কার্ড (এনসিসি)। ভোটার কার্ড বা আধার কার্ড নয়, এনসিসিই হবে এ দেশের নাগরিক হওয়ার পরিচয়।
এদিনই বিজেপির সরকারি টুইটার থেকে একটি পুরনো টুইট তুলে নেয়ায় জল্পনা তৈরি হয়েছে। গত এপ্রিলে লোকসভা ভোটের প্রচারে দার্জিলিংয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছিলেন, গোটা দেশে এনআরসি হবে এবং হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ বাদে বাকি সব অনুপ্রবেশকারীকে তাড়ানো হবে। আজ সেই টুইট মুছে ফেলায় বিরোধীদের কটাক্ষ, স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ দেখেই মনে হয় পিছু হটেছেন অমিত শাহ।