তাপসের ঢাকা-১০ আসনে কে হচ্ছেন নৌকার মাঝি ??
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে প্রার্থী হওয়ায় পদত্যাগ করেছেন ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। এ আসনটিকে শূন্য ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করেছে সংসদ সচিবালয়। এ আসনে উপ-নির্বাচন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে ভোটারদের মাঝে। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এ আসনে কে হচ্ছেন নৌকার মাঝি? এক্ষেত্রে আলোচনায় রয়েছেন বঙ্গবন্ধুর দুই দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয় ও রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
দলীয় সূত্র বলছে, তাপস সিটি করপোরেশনে লড়াই করায় এ আসনে বঙ্গবন্ধু পরিবারের কাউকে মনোনয়ন দেয়া হবে। এক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর বঙ্গবন্ধুর দুই দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয় ও মুজিব সিদ্দিক ববিকে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হবে। অবশ্য তারা এখনই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহী নন বলে জানা গেছে। শেষ পর্যন্ত যদি তারা প্রার্থী না হন তাহলে বিকল্প প্রার্থীর বিষয়ে চিন্তা করবে দলটি।
ঢাকা-১০ আসন নানা বিবেচনায় আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ। সরকারে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান, উচ্চবিত্তদের বাসস্থান ও ব্যবসায়ীদের প্রাণকেন্দ্র হওয়ায় আসনটির দিকে বিশেষ দৃষ্টি আওয়ামী লীগের। সে কারণে তুলনামূলকভাবে স্বচ্ছ, প্রভাবশালী ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন প্রার্থী দেওয়ার বিষয়ে ভাবছে আওয়ামী লীগ। সূত্রমতে, এতসব বিষয় বিবেচনায় রেখেই বঙ্গবন্ধুর উত্তরসূরিরা আলোচনায় রয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নম্বর সদস্য। সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় এখনই সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত হতে আগ্রহী নন। তিনি সরকারের উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় পেছন থেকে ভূমিকা রেখে যেতে চান। তাই এখনই রাজনীতিতে সরাসরি সক্রিয় হতে চান না। তবে দলের বড় একটি অংশ তাকে একাদশ সংসদের সদস্য হিসেবে দেখতে চায়। বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র হিসেবে তাদের রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন। সবশেষ সংসদ নির্বাচনে জয়কে রংপুরের পীরগঞ্জ থেকে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য অনেকে দাবি করেছিলেন। সে সময় জয় আগ্রহ প্রকাশ করেননি নির্বাচনে অংশ নিতে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস এট আর্লিংটন থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতক। পরে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লোকপ্রশাসনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। লেখাপড়া করা অবস্থায় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না হলেও জয় সক্রিয় রাজনীতিতে নাম লেখান ২০১০ সালে। ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে মা শেখ হাসিনার জন্য নৌকা প্রতীকে ভোট চাইতে পীরগঞ্জে কয়েকটি জনসভায়ও অংশ নেন জয়।
১৯৭৮ সালের ২১ মে লন্ডনে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির জন্ম। লন্ডনে বড় হলেও বেশ কয়েক বছর ধরে দেশেই কাটাচ্ছেন বেশিরভাগ সময়। ববি আওয়ামী লীগের গবেষণা সেল সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন-সিআরআইর ট্রাস্টি। সরাসরি রাজনীতির বাইরে থেকে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশ পরিচালনায় গবেষণাভিত্তিক তথ্য ও তত্ত্ব দিয়ে সহযোগিতা করছেন। তার সুযোগ্য নেতৃত্ব ও পরামর্শে সিআরআই থেকে এ কাজগুলো করা হচ্ছে।
বিশ্বখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্সের গ্রাজুয়েট রাদওয়ান মুজিব এর অধ্যয়নের প্রধানতম বিষয়গুলো ছিলো গভর্নমেন্ট অ্যান্ড হিস্টরি, পলিটিক্যাল থিওরিজ, ইন্টারন্যাশনাল হিস্টরি। একই প্রতিষ্ঠান থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন রাদওয়ান মুজিব। এতে তার অন্যতম পাঠ ছিলো কমপেয়াটিভ পলিটিক্স, কনফ্লিক্ট অ্যান্ড রেগুলেশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি। বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে জড়িত রেখেছেন ববি।
দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর সংসদ সদস্য পদ থেকে রোববারই পদত্যাগ করেন শেখ ফজলে নূর তাপস। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর দপ্তর থেকে জানানো হয়, বেলা দেড়টার দিকে শেখ তাপস পদত্যাগপত্র জমা দেন। ইতোমধ্যে তা গ্রহণ করা হয়েছে এবং রোববার বিকালে সংসদ সচিবালয় ঢাকা-১০ আসনকে শূন্য ঘোষণা করে এ গেজেট প্রকাশ করে। শূন্য হওয়া এই আসনে এখন উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সংবিধানের ১২৩ এর (৪) অনুচ্ছেদ অনুসারে, সংসদ ভাঙ্গিয়া যাওয়া ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদের কোনো সদস্যপদ শূন্য হইলে পদটি শূন্য হইবার নব্বই দিনের মধ্যে উক্ত শূন্য পদ পূর্ণ করিবার জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে।
সূত্র : পূর্বপশ্চিমবিডি