এক প্রেমিকের ভালোবাসায় বেঁচে আছেন জমজ দুই বোন !!
চার হাত ও তিন পা নিয়ে সংযুক্তভাবে জন্মগ্রহণ করে দুই জমজ বোন গঙ্গা এবং যমুনা মণ্ডল। তারা একে অন্যের সঙ্গে সংযুক্ত। তাদেরকে স্পাইডার সিস্টারস নামেও ডাকা হয়। বর্তমানে তাদের বয়স ৫১ বছর। এই প্রতিবন্ধীত্বের কারণে আজীবনেই তারা অবহেলিত।
জানা যায়, সংযুক্ত এই দুই বোনের পাকস্থলী একটি। তবে তাদের দু’জনেরই হার্ট, কিডনি এবং লিভার ভিন্ন। কলকাতার পশ্চিমবঙ্গে গঙ্গা ও যমুনা এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। অর্থকষ্টের কারণে তাদের চিকিৎসাও সম্ভব হয়নি। তাদের বাবা-মা দুঃখ দুর্দশায় মেয়েদের চিকিৎসাও করাতে পারেননি। অন্যদিকে, পাড়া প্রতিবেশীদের কটাক্ষপূর্ণ আচরণে ছোট থেকেই গৃহবন্দী ছিলেন দুই বোন। তারা নিজেদেরকে এক অভিশাপ বলেই ভাবতেন।
এদিকে পড়ালেখা করার সুযোগটুকুও জোটেনি এই দুই বোনের। এক সময় তারা সার্কাস পার্টির সদস্য হিসেবে নিযুক্ত হন। এখনো তারা এই পেশাতেই রয়েছেন। যেখানেই সার্কাস শো হয় সেখানেই তাদেরকে ভাড়া করে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের এই দুর্ভাগ্য দশা দেখে দর্শকরা করতালি দেন, কেউবা করেন প্রশংসা! এভাবে চলছে গঙ্গা ও যমুনার জীবন।
এদিকে প্রতি সার্কাসের জন্য তারা ২৫ পাউন্ড করে অর্থ পান। হঠাৎই তাদের সঙ্গে পরিচয় হয় ৪২ বছর বয়সী জসীমউদ্দিন আহমেদের। তিনি ওই সার্কাস পার্টিতে সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসেবেই কর্মরত রয়েছেন। তিনিই প্রথম এই দুই বোনের প্রতি ভালোবাসার অনুভূতি প্রকাশ করেন।
এরপর থেকেই গঙ্গা ও যমুনার জীবনে আসে আমূল পরিবর্তন। প্রেমে পড়লে যা হয় আর কি! একসঙ্গেই এখন তাদের বসবাস। তারা তিনজনই যেন একে অন্যের! আহমেদই এই দুই বোনের মাথার ছাদ, তাদের ভরসা। নতুনভাবে গঙ্গা ও যমুনার বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছেন আহমদ। তিনি এই দুই বোনের সব ভালোমন্দ দেখতে প্রস্তুত।
তিনজনের এই প্রেম নিয়ে রক্ষণশীল এই সমাজের মানুষ নানা মন্তব্য করে। তবে তাতে কি! তারা তো দিব্যিই আছেন। তাদের তিনজনের ভালোবাসার সম্পর্ক রয়েছে হাসি-কান্না, সুখ ও আনন্দ। আহমেদের সঙ্গে থাকতে পেরে এই দুই বোনও নতুন করে বাঁচার উৎসাহ পেয়েছেন।
এ ব্যাপারে গঙ্গা বলেন, ‘তিনি আমাদের প্রতি অনেক যত্নবান। মুখ ফুটে কিছু বলার আগেই কীভাবে যেন আমাদের অনুভূতি বুঝতে পারেন তিনি? আমরা দুই বোন তাকে মিস্টার ইন্ডিয়া বলেই ডাকি। সত্যিই সে অনেক দয়ালু। বিগত সাড়ে ছয় বছর ধরে গঙ্গা ও যমুনার সঙ্গে আহমেদের বসবাস। যদিও তাদের ভালোবাসার সম্পর্ক অনেক দিনের তবে তারা কেউই বিয়েতে বিশ্বাসী নন। কারণ তারা মনে করেন, সমাজ তাদের বিয়ের অনুমতি দেবে না কোনোভাবেই। তারা ভালোবাসার সম্পর্ক নিয়েই সন্তুষ্ট।
অন্যদিকে যমুনার মতে, ‘আমরা আজীবন এভাবেই একসঙ্গে থাকতে চাই। আহমেদ আমাদের পাশে আছে এটাই সৌভাগ্যের। গত সাড়ে ছয় বছরই আমাদের দুই বোনের জীবনের সেরা সময়। আমরা বাকি জীবনও এভাবেই কাটাতে চাই।’ সূত্র: ডেইলিমেইল।