আমার কথা-যুক্তি ভুল প্রমান করতে পারে তাহলে তাদের কথাই সাধারণ মানুষ শুনতো !!
তার বয়স মাত্র ২৯। কিন্ত পরিচিতি দেশ-বিদেশের কয়েক কোটি মানুষের কাছে। সামনে থেকে তাঁকে দেখতে-শুনতে প্রতিদিন তার মাহফিলে জড়ো হন লাখো মানুষ। তার বক্তব্য বা ভিডিও ইউটিউবে নিয়মিত আপলোড করে ৬০টি’রও বেশি চ্যানেল । দৈনিক যার দর্শক ৬ লাখেরও বেশি। এ পর্যন্ত ইউটিউবে তার ভিডিও দেখেছেন ৬ কোটিরও বেশি মানুষ। ফেসবুক, টুইটার সহ সামাজিক নানা যোগাযোগ মাধ্যমে তার ভেরিফাইড পেজে ফলোয়ার ১৫ লাখের বেশি। ড. মিজানুর রহমান আযহারীর এই হলো সংক্ষিপ্ত পরিচিতি।
তার সাথে ঘন্টা কয়েক কাটানোর সুযোগ হলো ক’দিন আগে। রংপুরের পীরগঞ্জে দুবাই প্রবাসী ব্যবসায়ী আলতাব হোসেনের আমন্ত্রনে একটি ইসলামী সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে যাচ্ছেন মিজানুর রহমান আযহারী। আমার স্কুল বন্ধু আলতাব । ব্যবসা করে টাকা বানিয়ে সেই টাকায় নিজের জন্মভুমিতে আলতাব নগর গড়েছে। সেখানে কবরস্থান, এতিমখানা, দরিদ্র সহায়তা কেন্দ্র করেছে। এবার আরবীয় ধাঁচে বড় একটি মসজিদ করতে চায়। যার শুরু করতে চায় মিজানুর রহমান আযহারীকে দিয়ে।
বুধবার সকালে আমরা হেলিকপ্টারে যাবো পীরগঞ্জের আলতাব নগরে। কিন্ত বাধ সাধলো ঘন কুয়াশা। এয়ারপোর্টে বসে আকাশ পরিস্কার হওয়ার অপেক্ষা। মুখোমুখি আযহারী। সাথে তার সহকারী মোশাররফ। আমরা গল্প করছি। একটু পর পর ভিআইপি লাউঞ্জের দরোজা ঠেলে পুলিশ, গোয়েন্দা, সিভিল এভিয়েশনের কর্মকর্তারা আসছেন। সেলফি, ছবি তুলছেন তার সাথে। কিছুটা বিরক্ত। কিছুটা অবাকও হই। কেনো এতো মানুষ আপনাকে পছন্দ করে? প্রশ্ন শুনে হাসেন আযহারী।
তার সোজা সাপটা জবাব, ‘বাংলাদেশের মানুষ সরল। তাই, সোজা কথা পছন্দ করেন। আমি ইসলামের সোজা কথা সহজ করে বলি তাই সেটা মানুষের মনে গেঁথে যায়। তারা পছন্দ করে।’
মিশরের বিশ্বখ্যাত আল আযহারী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নেয়া ডক্টর মিজানুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নিজের নামের শেষে উপাধি হিসেবে জুড়ে হয়েছেন মিজানুর রহমান আযহারী। তিনি বললেন, বাংলাদেশে আগে ইসলামী মাহফিল, সভা বা সমাবেশে ওয়াজ শুনতে যেতেন শুধু বয়স্ক বা মধ্য বয়স্করা। তরুন-যুবকরা এসব ধর্মীয় সমাবেশ এড়িয়ে চলতো। কিন্ত এখন তারাই আসছে বেশি। কারন ইসলামকে তাদের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে সহজ করে। যেমন মানুষ জানতে চায় তার জীবিকা নির্বাহ কিভাবে হলে সে হালাল রুজি করতে পারবে? দাম্পত্য জীবনে ইসলামের কোন কোন শিক্ষা কাজে লাগনো খুব জরুরি? মাদক বা ঘুষ খেলে শুধু পরকালে নয় ইহকালেই শারিরীক বা মানসিক কি কি ক্ষতি হতে পারে- দৈনন্দিন এমন নানা বিষয়ের উত্তর তারা পেতে চান শিক্ষিত সচেতন কারো কাছ থেকে। মিজানুর রহমান আযহারীর ভাষ্য- দেশের নানা প্রান্ত ঘুরে ঘুরে তিনি তাই বলছেন। নিজের কথা মনে করে গ্রাম-শহরের মানুষ তা পছন্দ করছে। তাই তার এই জনপ্রিয়তা।
ইসলামী ওয়াজ বা বয়ানে মিজানুর রহমান আযহারীকে শরীয়ত বিরোধী, ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা প্রদানকারীও বলছেন অনেকে, কেনো? প্রশ্ন শুনে আজহারী মনে হয় খুশিই হলেন। বললেন, যারা এমন সমালোচনা করছেন তারা যদি কোরআন আর বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা দিয়ে আমার কথা-যুক্তি ভুল প্রমান করতে পারে তাহলে তো তাদের কথাই সাধারণ মানুষ শুনতো-মানতো। মানুষ তো তা করছে না। তাদের মাহফিলের চেয়ে শতগুন বেশি মানুষ আসছে আমার কথা শুনতে। মিজানুর রহমান আযহারী দাবি-ইসলামকে যে যার সুবিধা মতো ব্যবহার করছে। এটাই ভয়ংকর। এতে ইসলামের ক্ষতি হচ্ছে। ধর্মীয় বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
গল্পের ৩০ মিনিট না যেতেই হেলিকপ্টার আকাশে উড়ার অনুমতি মিললো। তাগাদা দিলেন এভিয়েশন কোম্পনির কর্মকর্তারা। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে আমরা রওনা হলাম পীরগঞ্জের দিকে। আকাশ পথে ২০৭ কিলোমিটার। মাথায় হেডফোন লাগিয়ে সেখানেও গল্প করছি আমরা।