কোরআনে বর্ণিত ত্বীন ফল শোভা পাচ্ছে সাতক্ষীরার ছাদবাগানে !!
পবিত্র কোরআনে বর্ণিত মরুভূমির মিষ্টি ফল ত্বীন সাতক্ষীরার এক যুবকের ছাদবাগানে শোভা পাচ্ছে। রসে ভরপুর, মিষ্টি ও সুস্বাদু এই ফল বাংলাদেশের মাটি ও নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ার সঙ্গে খাপখাইয়ে নিয়েছে। এ দেশের তাপমাত্রায়ও ত্বীন মানিয়ে নিয়েছে নিজেকে। বিভিন্ন রঙের এই ফলের ফলনও ভালো।
ত্বীন ফল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন সাতক্ষীরার অনেকেই। তারা ত্বীনগাছের চারা খুঁজছেন।সাতক্ষীরা শহরের কাটিয়া সরকারপাড়ায় আসিফুর রহমান নামে এক যুবক তার বাড়ির ছাদে গড়ে তুলেছেন দেশি-বিদেশি মিশ্র ফলের বাগান। তার ছাদবাগানের শোভাবর্ধন করছে মিসর থেকে আনা ত্বীন ফল।ত্বীন ফলের চারা আনার সময় এটির ফলন হবে কিনা সেটি নিয়ে সংশয়ে ছিলেন আসিফ। পরে ত্বীনগাছে ফল ধরতে দেখে কিছুটা অবাক হন। এখন তার মুখে স্বস্তির হাসি।
আসিফ জানান, কোনো রাসায়নিক সার ছাড়াই, মাটিতে জৈব ও কমপোজড সার মিশিয়ে ছাদের রোদে টবে লাগিয়েছেন কয়েক প্রজাতির ত্বীনগাছ। সবুজ লকলকে প্রসারিত শ্যামল পাতার গাছগুলো লম্বায় ৮ থেকে ১০ ফুট পর্যন্ত। বর্ষা ও শীতে ফল কম হলেও বছরের অন্যান্য সময়ে প্রতিটি পাতার গোড়ায় জন্মে একটি করে ফল।
আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত ডুমুর আকৃতির এই ফল সবার দৃষ্টি কেড়েছে। মাত্র ছয় মাসের ব্যবধানে ত্বীন ফল পাকতে শুরু করে। পাকলে লাল, খয়েরি, গোলাপি ও হলুদাভ রঙ ধারণ করে আশ্চর্য এ ফল।ফলের আকারও বড় হয়। পুরোপুরি পাকলে রসে ঠাসা ও মিষ্টি হয়ে ওঠে।
কথা হয় সৌখিন ত্বীনচাষি মো. আসিফুর রহমানের সঙ্গে। তিনি জানান, পবিত্র কোরআন শরিফে ত্বীন ও জয়তুন ফলের কথা উল্লেখ আছে। বিষয়টি জেনে ত্বীন ফল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠি। প্রথমে খুলনা পরে ঢাকায় যোগাযোগ করে জানতে পারি বাংলাদেশেও ত্বীন ফল চাষ করা সম্ভব। পরে আমার এক বন্ধুর মাধ্যমে মিসর থেকে নিয়ে আসি একটি ত্বীন চারা। এখন আমার ছাদবাগানে ৮-১০ প্রজাতির ত্বীনগাছ রয়েছে।
সৌখিন এই ফলচাষি জানান, সৌদি আরব ও বাংলাদেশ এই ফলকে ত্বীন নামে ডাকলেও অন্যান্য দেশ, বিশেষ করে ভারত, তুরস্ক, মিসর, জর্দান ও যুক্তরাষ্ট্রে এটি আঞ্জির নামে পরিচিত।
ত্বীন চাষাবাদে সফল আসিফ জানান, বাংলাদেশে এই ফলের চারা অনেকটাই সহজলভ্য। স্বাভাবিক পরিচর্যার মাধ্যমে ত্বীন বড় হয়ে ওঠে। বেশি পানি ব্যবহার করতে হয় না।ত্বীন ফল বাংলাদেশে ড্রাই ফুড হিসাবে আমদানি করা হয়ে থাকে। বাণিজ্যিকভাবে এর উৎপাদন বাড়ানো গেলে দেশের পুষ্টি চাহিদা পূরণে তা সহায়ক হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্রেস্ট ক্যান্সার রোধে এই ফল খুবই উপকারী। এ ছাড়া নানা রোগ নিরাময়ে বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ত্বীন। এতে আছে প্রচুর পটাসিয়াম ও ক্যালসিয়াম। পুষ্টি চাহিদা পূরণেও ত্বীন গুরুত্বপূর্ণ।
সরিজমিন দেখা গেছে, আসিফ তার ছাদবাগানে পবিত্র কোরআনে বর্ণিত ফল জয়তুনও লাগিয়েছেন। তার ছাদবাগানে শোভা পাচ্ছে কমলালেবু, হলুদ সুস্বাদু সুইট লেমন, সাদা জাম, লাল জামরুল, লাল আতা, বারোমাসি আমড়া, মালবেরি, স্ট্রবেরি, লাল আতা, বিদেশি জাতের পেয়ারা ও নানান জাতের লেবু। আসিফের বাগানে এসব দেখতে দর্শনার্থীদের ভিড় লেগেই আছে।
ত্বীন ফল চাষ সম্পর্কে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. আমজাদ হোসেন বলেন, ত্বীন একটি পুষ্টি সমৃদ্ধ ফল, যা মরু অঞ্চলে স্বাচ্ছন্দ্যে জন্মায়। বাংলাদেশের মাটি ও আবহাওয়ার সঙ্গে বেশ মানিয়ে নিয়েছে ত্বীন। সাতক্ষীরার যুবক আসিফুর রহমান তা প্রমাণ করেছেন। এই ফল চাষে আরও যারা এগিয়ে আসবে কৃষি বিভাগ তাদের সব ধরনের সহায়তা দেবে।
এই কৃষি কর্মকর্তা আরও জানান, বাংলাদেশের ৩৪ শতাংশ নারী ব্রেস্ট ক্যান্সার ঝুঁকিতে আছেন। ত্বীন ফল এই ঝুঁকি হ্রাসে সহায়ক শক্তি হিসাবে কাজ করতে পারে। এর আরও অনেক ভেষজ গুণ রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।