জেনে নিন যে কারণে মানুষ ও তার নেক আমল নষ্ট হয়ে যায় !!

ইবাদত-বন্দেগি লোক দেখানোর জন্য নয়। মানুষের প্রতিটি ভালো কাজ গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য পরিশুদ্ধ নিয়তের বিকল্প নেই। কেননা কাউকে দেখানোর উদ্দেশ্যে করা যে কোনো ভালো কাজই সাওয়াবের পরিবর্তে গোনাহে রূপ নেয়।মানুষ জীবনের প্রতিটি কাজই শুধুই আল্লাহর তাআলার সন্তুষ্টির জন্য করবে। তবেই দুনিয়া ও পরকালে এ ভালো কাজের সফলতা পাবে মানুষ।

যারা মানুষকে দেখানোর জন্য ইবাদত করবে, তাতে সে গোনাহগার হবে এবং তার সব আমল বরবাদ হয়ে যাবে। এসব ইবাদতকারী আল্লাহর কাছে প্রতারক হিসেবে চিহ্নিত। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘নিশ্চয়ই মুনাফিকরা আল্লাহর সঙ্গে প্রতারণা করতে চায়। অথচ তিনিও তাদের সাথে প্রতারণা করতে সক্ষম। যখন তারা ছালাতে দাঁড়ায় তখন আলস্যভরে দাঁড়ায়। তারা লোকদের দেখায় যে তারা ছালাত আদায় করছে, কিন্তু আল্লাহকে তারা কমই স্মরণ করে।’ (সুরা নেসা : আয়াত ১৪২)

ইবাদত হবে আল্লাহর জন্য। আল্লাহর খুশি ছাড়া যারা নিজের কাজের প্রচার চায়। লোক মুখে তাদের কাজের সুনাম ছড়িয়ে পড়ার আশা করে, তারা কখনো প্রকৃত ইবাদতকারী নয়। এ রকম আশা পোষনকারীদের ব্যাপারে হাদিসে কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন প্রিয় নবি।

হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষকে শুনানোর জন্য কাজ করে আল্লাহ তার বদলে তাকে (কেয়ামতের দিন) শুনিয়ে দেবেন। আর যে ব্যক্তি লোক দেখানোর জন্য কাজ করে আল্লাহ তার বদলে তাকে (কেয়ামতের দিন) দেখিয়ে দেবেন।’ (বুখারি ও মুসলিম)

দুনিয়াতে যে সব লোক আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া নিজেদের প্রচার ও সুনামের জন্য কাজ করবে কেয়ামতের দিন অগণিত অসংখ্য মানুষের সামনে তারা হবে অপমানিত এবং তারা পাবে কঠোর শাস্তি।

আবার কিছু মানুষ এমন থাকবে যারা আল্লাহর সন্তুষ্টিও চাইবে এবং নিজেদের সুনামও চাইবে। তাদের ভালো কাজও গ্রহণযোগ্য হবে না। তাদের আমলও বরবাদ হয়ে যাবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্বনবি। হাদিসে কুদসিতে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন, মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি অংশীবাদিতা (শিরক) হতে সব অংশীদারের তুলনায় বেশী মুখাপেক্ষীহীন। যে কেউ কোনো আমল করে এবং তাতে অন্যকে আমার সাথে শরিক করে, আমি তাকে ও তার আমল উভয়টিকেই বর্জন করি।’ নাউজুবিল্লাহ। (মুসলিম)

উল্লেখিত হাদিসে কুদসিতে সুস্পষ্ট যে, যে কোনো ভালো কাজের কল্যাণ লাভ করতে হলে সেটি শুধুমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যেই করতে হবে। আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নিজের সুনাম দুটি এক সঙ্গে হবে না। আর তা মহান আল্লাহও পছন্দ করেন না। ফলে এ আমলও বরবাদ হয়ে যাবে।

মনে রাখতে হবে

আল্লাহর জন্য একান্ত নিয়তে ভালো কাজ করলে সে কাজের সুনাম আশা করার প্রয়োজন নেই। এমনিতেই আল্লাহর পক্ষ থেকে তার সুনাম ও খ্যাতি চলে আসে। সে কারণে নিজের সুনামের আশা করে কষ্টের আমলগুলো বরবাদ করা ঠিক নয়।

আবার আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোনো ভালো আমল শুরু করার পর যদি কোনো মানুষের মনে লোক দেখানো ভাব জাগ্রত হয়ে যায়। ভাব জাগ্রত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যদি ওই তা ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করে এবং এ ভাব থেকে সরে শুধু আল্লাহর খুশির জন্য আমল অব্যাহত রাখার চেষ্টা করে তবে তার ওই আমল শুদ্ধ হবে। সে আমলও আল্লাহর দরবারে কবুল হবে।

দুনিয়ার যাবতীয় কাজগুলোই হবে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। তবেই মানুষের দুনিয়ার জীবন হবে শান্তি ও সুনামের। আর পরকাল হবে সুখময় সফল।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রিয়া তথা লোক দেখানো আমল থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। শুধুমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে ইবাদত-বন্দেগি তথা ভালো আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *