ঘুমের ঔষধ খাইয়ে যেভাবে শিক্ষক স্বামীকে হ’ত্যা করেন এই মনি বেগম !!
শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে এসে স্ত্রীর হাতে খুন হলেন স্বামী স্কুল শিক্ষক উজ্জ্বল চৌধুরী (৪২)। স্পিডের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়িয়ে শ্বাসরোধ করে তাকে হ’ত্যা করা হয়েছে বলে ১৬৪ ধারা জবানবন্দীতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন তার স্ত্রী মনি বেগম।তিনি জানান, অভাব-অনটনে দীর্ঘদিন ধরেই তাদের মধ্যে কলহ চলছিল। সেই জেরেই স্বামীকে হ’ত্যা করেন তিনি। হ’ত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশ নেন মনি বেগমের চাচাতো ভাই আনোয়ারুল ইসলাম (১৫)।
নিহত উজ্জ্বল জেলার মদন উপজেলা গোবিন্দশ্রী ইউনিয়নের বড়বাড়ির কেনু মিয়া চৌধুরীর (মৃত) ছেলে। তিনি গোবিন্দশ্রী উচ্চবিদ্যালয়ের শরীরচর্চা শিক্ষক ছিলেন। দাম্পত্য জীবনে তিনি দুই সন্তানের জনক ছিলেন। আর হ’ত্যাকারী স্ত্রী মনি জেলা সদরের কোনাপাড়া এলাকার আবদুল হাইয়ের মেয়ে।শনিবার (০১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে নেত্রকোনার পুলিশ সুপার মো. আকবর আলী মুন্সী এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, ১০ বছরের সংসার জীবনে মনি বেগম ও উজ্জ্বল চৌধুরীর দুই ছেলে সন্তান রয়েছে। তারপরও একে অপরকে সন্দেহ করা ও আর্থিক টানাপোড়েন নিয়ে দু’জনের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া-বিবাদ লেগেই থাকত। এরই সূত্র ধরে এক বছর আগে মনি সন্তানদের নিয়ে স্বামীর বাড়ি মদন গোবিন্দশ্রী গ্রাম ছেড়ে নিজ বাবার বাড়ি জেলা সদরের সিংহের বাংলা ইউনিয়নের রুই কোনাপাড়ায় চলে আসেন।
পরে শনিবার মদন থেকে নেত্রকোনায় শ্বশুরবাড়িতে স্ত্রী-সন্তানদের দেখতে আসেন উজ্জ্বল। বিদ্যালয় থেকে তিনি ছুটি নেয়ায় কিছুদিন ধরে সেখানেই অবস্থান করতে থাকেন।মনির দাবি, ঋণ পরিশোধের জন্য শ্বশুরের কাছে তার স্বামী টাকা দাবি করছিলেন এবং টাকা না পাওয়ায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে রোববার (২৬ জানুয়ারি) ঝগড়া হয়। এতে হ’ত্যার পরিকল্পনা করে মনি বেগম দুপুরে উজ্জ্বলকে কোল্ড ড্রিংকসের (স্পিড) সঙ্গে বেশ কয়েকটি ঘুমের ওষুধ সেবন করান।
কোল্ড ড্রিংকস খাওয়ার পর উজ্জ্বল ধীরে ধীরে ক্লান্ত হতে থাকেন। কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে শ্বশুরবাড়ি ত্যাগের উদ্দেশে সন্ধ্যায় ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েন তিনি। এর মধ্যে স্ত্রী মনি বেগম ঘর থেকে উজ্জ্বলকে টাকা দেয়ার কথা জানিয়ে পথিমধ্যে (জঙ্গল) দাঁড়াতে বলেন।
পরে জঙ্গলের সড়কে স্ত্রী মনি বেগম নিজেও পৌঁছে যান। পূর্ব পরিকল্পনা মতে তারও আগে জঙ্গলের মধ্যে অপেক্ষা করছিল মনির চাচাতো ভাই আনোয়ারুল। পরে মনি ও তার চাচাতো ভাই হাত, পা ও মুখ মাফলার দিয়ে বেঁধে চাদরের সাহায্যে শ্বাসরোধে হ’ত্যা করে এবং মরদেহ টেনেহিঁচড়ে জঙ্গলে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে চলে যায়।
সোমবার সকালে জঙ্গলের ভিতর থেকে লা’শটি উদ্ধার করে নেত্রকোনা মডেল থানা পুলিশ। তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুলিশ সুপার মো. আকবর আলী মুন্সীসহ পুলিশ কর্মকর্তারা।এদিকে শিক্ষক হ’ত্যার ঘটনায় ফুঁসে উঠে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। মদনে তারা মিছিল এবং মানববন্ধন করে জড়িতদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি করেন। অন্যদিকে হ’ত্যার রহস্য উদঘাটনে লা’শটি উদ্ধারের পর শ্বশুর-শাশুড়ি এবং স্ত্রীসহ বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদে তাদের থানা হেফাজতে নেয় পুলিশ।
নিহতের ভাই লা’শ উদ্ধারের দিন সন্ধ্যায় মডেল থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা করেন। এরই মধ্যে বেরিয়ে আসে হ’ত্যার রহস্য উন্মোচন এবং গ্রেফতার হয় হ’ত্যাকারীরা। তারা রিমান্ড শেষে আদালতে দেন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি।
সূত্রঃ সময়ের কন্ঠস্বর