দেশে করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হলে চিকিৎসা হবে যেসব হাসপাতালে !!
দেশে এখনও পর্যন্ত করোনাভাইরাস আক্রান্ত কোনো রোগী শনাক্ত হয়নি। কিন্তু এরপরেও যদি দেশে কোনো রোগী শনাক্ত হন তাহলে আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে রাজধানীসহ সারাদেশের সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও জেলা সদর হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ড প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ জানান, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে সকল হাসপাতালে আইসোলেশন ইউনিট খোলা হলেও রোগী শনাক্ত হলে প্রথমত রাজধানীর চারটি হাসপাতালে রোগী ভর্তি করা হবে।
হাসপাতালগুলো হলো- সরকারি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, মহাখালী সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল, উত্তরার কুয়েতমৈত্রী হাসপাতাল ও সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, ঢাকা। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি হলে তখন অন্যান্য হাসপাতালে ভর্তি রেখে সেবা দেয়া হবে।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে আগাম বেশ কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। গত ২১ জানুয়ারি থেকে আজ ৯ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত শাহজালাল আন্তজার্তিক বিমানবন্দরেই চীনসহ বিভিন্ন দেশের ১৯ সহস্রাধিক যাত্রীর স্ক্রিনিং করা হয়েছে।আবুল কালাম আজাদ জানান, এখনও পর্যন্ত করোনাভাইরাস সংক্রমণরোধে গৃহীত ব্যবস্থা সন্তোষজনক।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ইতিমধ্যে ৩৭ হাজার ছাড়িয়েছে; মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮১৩ জনে। উহানের যে চিকিৎসক প্রথম এ ভাইরাসের বিপদ নিয়ে সতর্ক করেছিলেন; তিনিও মারা গেছেন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়।এছাড়া চীনের বাইরে আরও অন্তত ২৫টি দেশ ও অঞ্চলে আড়াই শর বেশি মানুষ এ ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে।
আশার কথা, বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধে অস্ট্রেলিয়ায় একদল গবেষক বড় ধরনের সফলতার পথে রয়েছেন বলে জানা গেছে। দেশটিতে কমনওয়েলথ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ অর্গানাইজেশনের (সিএসআইআরও) ‘হাইসিকিউরিটি’ গবেষণাগারে চীনের বাইরে প্রথমবারের মতো ভাইরাসটির রেপ্লিকা তৈরি করা হয়েছে।
এর আগে গত সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়ার ‘দোহার্টি ইন্সটিটিউট’ মানবদেহ থেকে ভাইরাসটিকে বিচ্ছিন্ন করতে সক্ষম হয়েছিল। এ দুই অগ্রগতি ভাইরাসটির টিকা উদ্ভাবনের পথ সুগম করেছে, সন্দেহ নেই। তবে বলার অপেক্ষা রাখে না, টিকা বা ভ্যাকসিন তৈরির আগ পর্যন্ত নিরাপদ থাকার একমাত্র উপায় হচ্ছে, আক্রান্ত বা ভাইরাস বহনকারীদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা।
প্রাথমিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
ফ্লু ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়ার মতো এই ক্ষেত্রেও প্রাথমিক সুরক্ষার বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে। হাত ভালোভাবে পরিষ্কার রাখতে হবে। নাক, মুখ, চোখ আবৃত রাখতে হবে যাতে ভাইরাসের সংক্রমণ না হয়। বাহ্যিক বিভিন্ন বস্তুর এবং জনসাধারণের ব্যবহৃত বস্তুগুলো ব্যবহার পর অবশ্যই জীবাণু মু্ক্ত হতে হবে।
সার্জিকাল মাস্ক একমাত্র ভরসা নয়
করোনাভাইরাস নিয়ে অসংখ্য ভুল ধারণা প্রচলিত আছে সাধারণ মানুষের মাঝে। এদের মধ্যে একটি হল ‘ সার্জিকাল মাস্ক’ পরলে ভাইরাস সংক্রমণের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। এই ‘মাস্ক’ সংক্রমণের আশঙ্কা কমায় তবে পুরোপুরি আশঙ্কা মু্ক্ত করে না। ‘এন নাইনটি ফাইভ’ নামক ‘সার্জিকাল মাস্ক’ সবচাইতে শক্তিশালী সুরক্ষা দেবে এই ক্ষেত্রে।
ডাক্তারকে জানানো
যদি মনে হয় আপনি তীব্র ‘ফ্লু’তে ভুগছেন কিংবা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন তবে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। তবে চিকিৎসক এবং চিকিৎসা কেন্দ্রের অন্যান্য কর্মীদের সুযোগ দিতে হবে প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়ার। তাই চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার আগে ফোন করতে হবে, নিজের সন্দেহের কথা জানাতে হবে যাতে হাসপাতাল আপনার জন্য তৈরি হতে পারে।
এছাড়াও বিগত ১৪ দিনের মধ্যে যারা চীন গিয়েছেন তাদের এবং তাদের আশপাশে থাকার লোকদের বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
অসুখ হলে কর্মক্ষেত্রে না যাওয়া
‘ফ্লু’ এবং অন্যান্য সকল ভাইরাসজনীত রোগের সবচাইতে বড় আতঙ্ক হল এর সংক্রমণের গতি। তাই সংক্রমণের পূর্বাভাস দেখা দিলে সুস্থ মানুষের সঙ্গ পরিহার করাই ভালো যাতে আপনার কাছ থেকে তাদের মাঝে ভাইরাস সংক্রমণ হতে না পারে। বরং ঘরে থেকে বিশ্রাম নিন। নিজে সুস্থ হন, অপরকে সুরক্ষিত রাখুন।
ঝুঁকিপূর্ণ স্থান থেকে দূরে থাকা
বিশ্বব্যাপী সকল বিমানবন্দরে রাখা হয়েছে কড়া সুরক্ষা ব্যবস্থা। যাতে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে না পারে। তবে পদক্ষেপ নিতে হবে নিজকেও। তাই ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা আছে এমন স্থান থেকে দূরে থাকতে হবে।