অর্থের অভাবে বিনা চিকিৎসায় ভুগছে এই ভাষাসৈনিক !!
বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলনে ফেরারী আসামি হয়ে ছাত্রত্ব হারিয়েছেন, ৬৬ এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬’দফা, ৬৯’র গণআন্দোলনে তুখোর নেতা, ৭০’র নির্বাচনে প্রতিপক্ষ সবার জামানত বাজেয়াপ্ত করে দিয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী গণপরিষদ সদস্য, ৭১ এ মহান মুক্তিযুদ্ধে বলিষ্ঠ সংগঠক এরপর স্বাধীন দেশে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি রাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে বরাবরই রাজনৈতিক মাঠে সরব থাকা ভাষাসৈনিক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অতি আদরের খোন্দকার আব্দুল মালেক শহিদুল্লাহ’র আজ বড় দুর্দিন।
সারা জীবন সততা আর আদর্শ ধরে রেখে মানুষের জন্য রাজনীতি করে যাওয়া এই তারকা রাজনৈতিক নেতার জীবন কাটছে এখন চরম অসুস্থতা নিয়ে অনেকটাই একাকিত্বে বিছানায় শুয়ে থেকে। কেউ তার খবরও নেন না। অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার ভাষা সৈনিক খোন্দকার আব্দুল মালেক শহীদুল্লাহ (৮৬) গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর স্ট্রোক করার পর তার ডান হাত ও পা অবশ হয়ে যায়।
এরপর থেকে পরিষ্কারভাবে কথাও বলতে পারেন না তিনি। কাউকে দেখলে মুখের দিকে তাকিয়ে থাকেন আর হাউমাউ করে কাঁদেন। এছাড়া হার্টের সমস্যাসহ নানা রোগে ভুগছেন তিনি। এখন তার দিন কাটছে বিছানায় শুয়ে থেকে।১৯৫২ সালের ভাষায় আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়ে মামলার আসামী হন। ছাত্রত্ব হারান। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে তিনি প্রতিষ্ঠাকালীন থেকেই আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন।
তৎকালীন বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামীলীগে সৈয়দ নজরুল ইসলামের কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। রাজনীতিতে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখায় বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ হন। ১৯৭০ এর নির্বাচনে অতি অল্প বয়সে মুক্তাগাছা আসন থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিপুল ভোটে এমপি নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে তার ছিল নিয়মিত যাতায়াত। বঙ্গবন্ধু তাকে আদর করে ‘আমার প্রিয় মালেক’ বলে সম্মোধন করতেন। তার হাত ধরে গড়ে উঠেছেন অনেক নেতা। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর খন্দকার মোস্তাক ও জিয়াউর রহমানের আমলে জেলে যান। এছাড়াও রাজনৈতিক জীবনে অসংখ্যবার জেল খাটেন তিনি। আরো একবার মুক্তাগাছা পৌরসভার নির্বাচিত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। সারা জীবন মানুষের জন্য রাজনীতি করতে গিয়ে পৈত্রিক সম্পত্তি বিলিয়ে দেন।
সারা জীবন মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন আব্দুল মালেক। এখন জীবনের শেষ প্রান্তে এসে পড়েছেন চরম অসহায়ত্বে। সন্তান ও পরিবারের কথা ভাবেননি। বেকার ছেলেদেরও সামর্থ্য নেই বাবার চিকিৎসা করানোর। বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা ভাতার টাকায় তার খাওয়া-পরা ও চিকিৎসা চলছে।
ভাষা সৈনিক আব্দুল মালেক শহিদুল্লাহর সার্বক্ষণিক সঙ্গী স্ত্রী সুরাইয়া মালেক। তিনি জানান, পরিবারের জন্য তার স্বামী জীবনে কিছুই করতে পারেননি। ব্যাংকে জমানো কোনও টাকা নেই। অর্থাভাবে তার সঠিক চিকিৎসা করাতে পারছেন না। স্বামীর উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চেয়েছেন।
মুক্তাগাছার মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আবুল কাশেম জানান, ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আব্দুল মালেক সারা জীবন মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন। নিজের ও পরিবারের কথা ভাবেননি। শেষ জীবনে এসে চিকিৎসা করানোর টাকাও নেই তার। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার আব্দুল মালেকের চিকিৎসায় এগিয়ে আসবে এটাই প্রত্যাশা করেন তিনি।
সাবেক ছাত্রনেতা এডভোকেট ইদ্রিস আলী আকন্দ বলেন, একদিন যার ডাকে লাখ লাখ তরুণ এগিয়ে আসতো। আজ কেউ তার খবর নেয় না। তিনি তার চিকিৎসায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
সূত্রঃ বিডি২৪লাইভ