সিঙ্গাপুরে করোনা আক্রান্ত বাংলাদেশি থাকা ভবনের সবার কাজে যাওয়া বন্ধ !!
সিঙ্গাপুরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বাংলাদেশি থাকা ডরমেটরির বাসিন্দা হওয়ায় কাজে যোগ দিতে পারেননি বেশ কয়েকজন কর্মী। সোমবার সকালে কর্মস্থলে হাজির হলেও সেখান থেকে ফিরিয়ে দেয়া হয় তাদের। আপাতত ওই ভবনের বাসিন্দাদের কর্মস্থল থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে।
সিঙ্গাপুরের জনশক্তি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, সিঙ্গাপুর কন্ট্রাক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি এবং কন্ট্রাক্টর-ডরমেটরি অপারেটরদের সঙ্গে কথা বলেছেন। ভাইরাস আক্রান্তদের সংস্পর্শে থাকা সবাইকে কোয়ারেন্টাইনে রাখতে বলা হয়েছে।
তারা জানায়, করোনাভাইরাস আক্রান্ত বাংলাদেশি শ্রমিকের ১০ রুমমেট, তার সঙ্গে কোম্পানির একই গাড়িতে যাতায়াতকারী আটজন এবং কর্মক্ষেত্রের এক প্রকল্প ব্যবস্থাপকসহ মোট ১৯ জনকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।
সিঙ্গাপুরের সংবাদমাধ্যম জানায়, গত ১ ফেব্রুয়ারি কর্মস্থলে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন ৩৯ বছর বয়স্ক ওই বাংলাদেশি। ৩ ফেব্রুয়ারি তাকে সিঙ্গাপুরের জিপি ক্লিনিকে পাঠানো হয়। এর দু’দিন পর ৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশি এই প্রবাসীকে চাঙ্গি জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। পরে পাঠানো হয় বেডোক পলিক্লিনিকে।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে ওই বাংলাদেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে নিশ্চিত করেন চিকিৎসকরা। পরে তাকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে তিনি ন্যাশনাল সেন্টার ফর ইনফেকশাস ডিজিজেসে (এনসিআইডি) চিকিৎসাধীন।
সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগে এই প্রবাসী লিটল ইন্ডিয়ার মুস্তফা সেন্টারে যান। সেখানে কাকি বুকিতের দ্য লিও ডরমেটরিতে অবস্থান করেন তিনি। কর্মস্থল ও আবাসস্থলের মধ্যেই ওই বাংলাদেশির বেশিরভাগ চলাফেরা সীমাবদ্ধ ছিল।
সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. মোস্তাফিজুর রহমান জাগো নিউজকে জানান, আক্রান্ত ব্যক্তির পরিচয় পাওয়া গেছে। তবে তার ও পরিবারের নিরাপত্তার স্বার্থে তা প্রকাশ করা হচ্ছে না। দূতাবাস সিঙ্গাপুরে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রেখেছে। এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। আক্রান্ত বাংলাদেশির চিকিৎসাসহ সার্বিক ব্যাপারে সেখানকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে হাইকমিশন।
বিশ্বজুড়ে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন এক হাজারেরও বেশি মানুষ। সোমবার চীনে আরও ১০৮ জন মারা যাওয়ায় দেশটিতে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৬ জন। গত ৩১ ডিসেম্বর প্রথমবার শনাক্ত হওয়ার পর থেকে এটাই একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর নতুন রেকর্ড।
মঙ্গলবার চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন জানিয়েছে, সোমবার মধ্যরাত পর্যন্ত দেশটির মূল ভূখণ্ডে অন্তত ২ হাজার ৪৭৮ জন নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, এর মধ্যে হুবেই প্রদেশেই রয়েছেন ২ হাজার ৯৭ জন। ফলে দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪২ হাজার ৬৩৮ জন।
আক্রান্তের সংখ্যার দিক থেকে অনেক আগেই সার্স (সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) ভাইরাসকে ছাড়িয়ে গেছে করোনাভাইরাস। ২০০২-০৩ সালে আট মাসের মধ্যে ২৫টি দেশে সার্স ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৮ হাজার ৯৮ জন এবং প্রাণ হারিয়েছিলেন ৭৭৪ জন। চীনের উহান থেকে ছড়ানো করোনাভাইরাস ইতোমধ্যে অন্তত ২৮টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে চীন ছাড়া হংকং ও ফিলিপাইনে দু’জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
সূত্র: দ্য স্ট্রেইট টাইমস, সিএনএন