অনেক প্রবাসীরা সরকারি সুযোগ সুবিধা হতে বঞ্চিত !!
পৃথিবীর ১২৬ দেশের কোনো না কোনো দেশে প্রতিদিন দেশের দক্ষ-অদক্ষ শ্রমিক পাড়ি জমায়। বর্তমানে প্রায় দেড় কোটিরও বেশি প্রবাসী বিভিন্ন পেশায় নিজেদরে দক্ষতা, মেধা, শ্রম ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তাদের অর্জিত অর্থ দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
প্রবাসীদের সেই অবদানের কথা বিবেচনা করে বর্তমান সরকার বিদেশ যেতে আগ্রহীদের দিয়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যে যেই দেশে যেতে চায় সেই দেশের পরিবশে পরিস্থিতি আচার ব্যবহার সংস্কৃতি ইত্যাদি সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা প্রদান করে দক্ষ করে পাঠাচ্ছে।
সম্প্রতি প্রবাসীদের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে প্রবাসী বীমা। দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন প্রকারের ঋণ সুবিধা। সরকার প্রবাসীদের জন্য গঠন করেছে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড। প্রচার প্রচারণার অভাবে বিভিন্ন দেশের অনেক প্রবাসী বাংলাদেশিরা এর সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে কিছুই জানে না।
শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) কুয়েতে রমোতিয়া দৈনিক যুগান্তর স্বজন সমাবেশ কুয়েত শাখার উদ্যোগে আয়োজিত এর ২০ তম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে প্রবাসীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ক আলোচনাসভা সরকারের গৃহিত বিভিন্ন উন্নয়নমূলক পদক্ষেপের কথা তুলে ধরা হয়।
এসময় প্রবাসীদের জন্য গঠিত ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড সম্পর্কে এর কাজ কি? প্রবাসীরা কিভাবে এ সুযোগ সুবিধাগুলো পেতে পারে। *বাংলাদেশের বিমান বন্দরে আগমন ও বহির্গমনের সময় সহযোগিতা। *বাংলাদেশে অধ্যায়নরত মেধাবী সন্তানদের শিক্ষাবৃত্তি ও শিক্ষা সহায়তা। *সন্তানদের বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার প্রদানের জন্য প্রত্যয়ন পত্র।
*প্রবাসে মৃত্যুবরণ করলে তার পরিবার বিমানবন্দরে লাশ গ্রহনের সময় ৩৫ হাজার টাকা এবং ৩ লক্ষ টাকা আর্থিক সহায়তা করা হয়। *বাংলাদেশে অবস্থিত সম্পদের সুরক্ষা ও নানাবিধ অসুবিধা দুরীকরণে সহযোগিতা। *পঙ্গু ও অসুস্থ কর্মীদের জন্য বাংলাদেশ বিমানবন্দর অ্যাম্বুলেন্স সহায়তা।
*কাজ করার সময় গুরুতর অসুস্থ, আহত বা শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে দেশে ফেরত যেতে এবং চিকিৎসায় সহায়তায় ৫০ হাজার থেকে এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। *আইনগত সহায়তা এবং ক্ষতিপূরণ আদায় এবং বিতরণে সহযোগিতা।
*প্রবাসে মৃত্যু হলে এবং কোম্পানি ও পরিবার লাশ পরিবহনে অক্ষম হলে দেশে লাশ প্রেরণ। এছাড়াও সরকারের বিভিন্ন ঋণ সহায়তা ও প্রদত্ত সুবিধা গ্রহন করতে পারে।
দেশের বাইরে বাংলাদেশ দূতাবাস ও হাইকমিশনগুলো পাওয়া যায় অথবা ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের ওয়েবসাইট www.wewb.gov.bd অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণ ও দাখিল করতে হবে।
পূরণকৃত ফরমের প্রিন্ট নিয়ে তাতে স্বাক্ষর করে পাসপোর্ট ফটোকপি (এক কপি), ভিসার / আকামার ফটোকপি (এক কপি), দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয় পত্র যদি থাকে সেটার ফটোকপি, সরকার নিদিষ্ট ফি যা কুয়েতে প্রবাসীদের জন্য ১৫ দিনার এবং মালয়েশিয়া জন্য ১৯০ রিংগিত জমা ব্যাংক স্লিপ/ রশিদসহ জমা দিতে হয়।
বাংলাদেশ থেকে আসার সময় সিম কার্ড সংযুক্ত গ্রিণ কালার BMET Emigration Clearance Card দিয়েছে এই সুযোগ সুবিধাগুলো পাবে তাদের আর নতুন করে সদস্য হতে হবে না। যারা র্দীঘ বছর প্রবাস করছেন যাদের কাছে কার্ডটি নেই যে যেই দেশে আছেন সেই দেশের বাংলাদেশ দূতাবাস বা হাইকমিশনের যোগাযোগ করে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সদস্য আবেদন করতে পাবেন।
আবেদনের কয়েক দিনপর তাদের কে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডে সদস্য কার্ড প্রদান করা হয়। এছাড়া ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড সর্ম্পকে বিস্থারিত জানতে প্রবাস বন্ধু কল সেন্টারে এই নাম্বার গুলোতে +৮৮০১৭৮৪- ৩৩৩ ৩৩৩ অথবা +৮৮০১৭৯৪-৩৩৩ ৩৩৩ যোগাযোগ করতে পারেন।
সাদেক রিপনের সভাপতিত্বে ও মোহাম্মদ শাহজাহান ও মো. ওমর ফারুকের যৌথ সঞ্চালনায় এসময় উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম, মো. মেজবাহ, ফয়েজ আহমেদ, তাইজুল ইসলাম, মাহমুদ ও জাকির হোসেন।
অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, আলী সিকদার, ইকবাল, কাজী আলম, গোলাম মোস্তফা, সফি খাঁন, ফারহান, রবিউল ইসলাম,কবির হোসেন, আনিস এবং কুয়েতের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার প্রবাসী বাংলাদেশিরা উপস্থিত ছিলেন।
এসময় প্রবাসীরা তাদের বিভিন্ন সমস্যা সম্ভাবনা ও সচেতনার কথা আশা ও প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেন এবং বিমান বন্দরে স্টাফদের প্রবাসীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের কথাও তুলে ধরেন সংশ্লিষ্ট মহলে সুদৃষ্টি কামনা করেন।
কুয়েত প্রবাসী মোহাম্মদ মেজবাহ বলেন, আমি প্রায় ৩০ বছরের বেশি সময় প্রবাসে বসবাস করছি। আমার কাছেও ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডরে বিএমইটি কার্ড নাই। সরকার যে প্রবাসীদের জন্য ঋণ সহায়তা, শিক্ষা বৃত্তি, আইনি সহায়তা, চিকিৎসা সহায়তাসহ ইত্যাদি সুযোগ সুবিধা চালু করেছে এ সম্পর্কে আমার জানা ছিল না এবং এমন কি আমার মত অনেক প্রবাসীই জানে না প্রচার প্রচারণার অভাবের কারণে। আমারা অল্প সময়ের জন্য দেশে ছুটিতে যাই।
পারিবারিক বিভিন্ন কাজে ঝামেলার মধ্য দিয়ে ছুটি শেষ হয়ে যায়। দূতাবাস থেকেও এমন কোনো প্রচার প্রচারণা লক্ষ করিনি। দেশে বিদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মিডিয়া প্রচারণা চালানো এবং বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোকে সরকার যে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদান করছে সে সম্পর্কে প্রবাসীদের অবগত করতে বিভিন্ন কোম্পানির বেরাকগুলোতে ও যে স্থানগুলোতে বাংলাদেশিদের আড্ডা মিলিত হয় সেখানে লিফলেট বিতরণসহ প্রবাসীদের সচেতনায় সভা সেমিনারের আয়োজন করা সহ প্রচার প্রচারণায় এগিয়ে আসা দরকার।