স্বপ্নের মাটি স্পর্শ করেই মা’রা যাওয়া সেই বাংলাদেশীর লা’শ গ্রিসের ম’র্গে !!
লুকিয়ে তুরস্ক থেকে গ্রিক যাওয়ার পথে মৃ’ত্যুবরণ করেছেন এনামুল নামের এক বাংলাদেশি। এনামুলের মৃ’ত্যু নিয়ে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন করেছে বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক যুগান্তুর। প্রতিবেদনে বলা হয়, তুর্কী থেকে গ্রিসে যাত্রাপথে বরফের পাহাড়ে মৃ’ত্যুবরণকারী বালাগঞ্জের এনামুল এহসান জায়গীরদার ফয়সলের (৩০) লা’শ শেষবারের মতো একনজর দেখার আকুতি জানিয়েছেন তার বৃদ্ধ বাবা-মা ও পরিবারের সদস্যসহ স্বজনরা। কবে লাশ দেশে আসবে? অপেক্ষার প্রহর গুনছেন তারা। ফয়সল উপজেলার বোয়ালজুড় ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের মহুদ আহমদ জায়গীরদার ও খেলা বেগম চৌধুরী দম্পতির দ্বিতীয় ছেলে। গ্রিসে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. জসিম উদ্দিন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন- বাংলাদেশ দূতাবাসের মানবিক আবেদনে সাড়া দিয়ে গ্রিস প্রশাসন অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে প্রযুক্তির সহযোগিতায় ফয়সলের লা’শ পড়ে থাকা স্থানে তোলা ছবির সূত্র ধরে গ্রিসের আলেকজান্ডার পলি সীমান্তে পাহাড়ি এলাকাটি চিহ্নিত করা হয়।
মা’রা যাওয়ার ৬ দিন পর অনেক চেষ্টা করে ১২ ফেব্রুয়ারি বরফের নিচ থেকে হেলিকপ্টার দিয়ে লাশ উদ্ধার করে আলেকজান্ডার পলি নামক হসপিটালে হস্তান্তর করা হয়। লা’শ দেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলেছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। ফয়সলের ছোট ভাই রাজিমুল এহসান জায়গীরদার রুজেল ফয়সলের সহযাত্রী এক যুবকের বরাত দিয়ে জানান, ৪ ফেব্রুয়ারি ফয়সলসহ কয়েকজন গ্রিসের উদ্দেশে যাত্রা করে গ্রিসের সীমানায় পৌঁছলে ৭ ফেব্রুয়ারি গ্রিসের সময় বেলা ২টার দিকে মৃ’ত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। সহযাত্রীরা মোবাইল ফোনে লা’শের সঙ্গে ওই স্থানটির ছবি তুলেন। ৯ ফেব্রুয়ারি সহযাত্রীরা ফয়সলের বাড়িতে মৃ’ত্যুর সংবাদটি জানিয়ে সেখানে তোলা ছবিগুলো পাঠান।
ফয়সলের ছোট ভাই বলেন, বেশ কয়েক বছর পূর্বে ভিসা নিয়ে উমান যান তিনি। তার বড় ভাই আলীমুল হাসান সেখানে থাকেন। উমান থাকাবস্থায় কয়েকবার দেশে আসা-যাওয়া করেছেন। মাসছয়েক পূর্বে তিনি উমান থেকে ইরাক হয়ে তুর্কী যান। সেখানে তিনি ভালোই ছিলেন, নিয়মিত পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। সর্বশেষ ৪ ফেব্রুয়ারি বাড়িতে ফোন করে তার জন্য দোয়া করার কথা বললেও গ্রিসে যাওয়ার বিষয়টি জানাননি। ফয়সলের সহযাত্রী ছিলেন তারই এলাকার এক যুবক তারা স্থানীয় সম্পর্কে মামা-ভাগনে। মোবাইল ফোনে গ্রিস যাত্রার লো’মহর্ষক বর্ণনা দিয়ে ওই যুবক বলেন, তুর্কী থেকে গ্রিস যাত্রায় তাদের দলে ১৫-১৬ জন ছিলেন। গ্রিস সীমান্তে পৌঁছার পর তাদের জঙ্গলে রেখে কয়েকটি দলে ভাগ করা হয়। ফয়সল আর ওই যুবকের সঙ্গে দুই বাংলাদেশিসহ দু’জন পাকিস্তানি নাগরিক ছিলেন।
৬ ফেব্রুয়ারি শেষ রাতে একটি গাড়িতে করে এই ছয়জনকে নিয়ে রওয়ানা দিলে ভোরে তারা আলেকজান্ডার পলি সীমান্তে বরফের পাহাড়ে পৌঁছান। রাস্তায় সীমান্ত রক্ষীদের চেক থাকায় তাদের সেখানে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি চলে যায়। এর মধ্যে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে ঘুম, গোছল না করে অভুক্ত অবস্থায় ফয়সল অসুস্থ হয়ে পড়েন। সঙ্গের লোকজনের সহযোগিতায় কোনোরকম তিনি ওই স্থান পর্যন্ত পৌঁছান। সারা দিন বরফের ওপরে থেকে প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় ফয়সলের দেহ নিস্তেজ হয়ে পড়ে। সহযাত্রীরা গাছের ডালের উপরে শুইয়ে তাকে সুস্থ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। সন্ধ্যার দিকে গ্রিসের দালালের এক লোক সেখানে যান। ফয়সলের লাশ সেখানে রেখেই দালালের লোক তাদের নিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশে হাঁটা শুরু করলে পথে আরও ভয়াবহ বিপদের সম্মুখীন হন তারা।
মাফিয়ারা পিছন থেকে বৃষ্টির মতো গু’লি ছুঁড়লে তাদের এগিয়ে নিতে আসা ওই দালাল সহযোগীর পায়ে গু’লি লাগে। তখন প্রাণে রক্ষার্থে তারা কখনও জঙ্গলে আবার কখনও বরফের পাহাড়ে আশ্রয় নেন। ভোরের দিকে একটি ঘরের ভেতর নিয়ে তাদের ব’ন্দি করে রাখা হয়। বন্দি থাকাবস্থায় দালাল তার চুক্তির টাকা আদায় করে নেয়। গ্রিস যাত্রার আগেই সেই টাকা জামানত রেখেছিলেন তারা। বন্দিখানায় তাদের মানসিক নির্যাতন করে ভয় দেখিয়ে তাদের সঙ্গে থাকা মোবাইল, ডলার, দামি কাপড়, হাতের আংটি ও গলার চেইন দালালের লোকজন ছি’নিয়ে নেয়। যে মোবাইল দিয়ে ফয়সলের মৃ’তদেহের ছবি তোলা হয়েছিল প্যান্টের ভিতর লুকিয়ে সেটি রক্ষা করেন তারা। সূত্র: যুগান্তর