করোনা সন্দেহে রাস্তায় ফেলে যাওয়া বৃদ্ধা এখন ম্যাজিস্ট্রেটের মা !!
করোনায় আ’ক্রান্ত সন্দেহে এক বৃদ্ধা মাকে রাস্তায় ফেলে গেছেন সন্তানরা। খবর পেয়ে তার কাছে ছুটে গেলেন সাভারের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ।
একই সঙ্গে অসহায় ওই বৃদ্ধাকে ‘মা’ ডেকে তার সব দায়িত্ব নিয়েছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ। গতকাল শনিবার রাতে সাভার উপজেলার হেমায়েতপুর জয়নাবাড়ি এলাকা থেকে ওই বৃদ্ধাকে উদ্ধার করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এর আগে তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফখরুল আলম বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানালে তাকে উদ্ধারে ছুটে যান তিনি।
এরপর বিশেষ ব্যবস্থায় ওই বৃদ্ধাকে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। সেখানে ‘ম্যাজিস্ট্রেটের মা’ পরিচয়ে তার সেবা দেন চিকিৎসক ও নার্সরা।স্থানীয়রা জানায়, শনিবার রাতে ওই বৃদ্ধাকে দেখে তাদের সন্দেহ হয়। কেউ তার কাছে যাচ্ছিলেন না। মনে হচ্ছিল, তিনি না খেয়ে থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বিষয়টি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে জানানো হয়। পরে প্রশাসনের কর্মকর্তারা এসে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যান।
এলাকাবাসী জানান, ওই বৃদ্ধাকে রাস্তায় ফেলে রেখে পালিয়ে গেছে তার সন্তানরা। এলাকাটি করোনা আ’ক্রান্ত। তার ওপর ঝামেলা হওয়ার ভয়ে ওই বৃদ্ধা কার বাসায় ছিলেন সেটাও ভয়ে বলছেন না কেউ। সেই সঙ্গে সমাজের কাছে হেয় হবেন ভয়ে সন্তানদের পরিচয় জানাননি এই মা। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে বৃদ্ধার গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায়।সাভারের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ বলেন, প্রকৃতপক্ষে অসহায় ওই বৃদ্ধা করোনা আ’ক্রান্ত কি-না তা পরীক্ষার জন্য রোববার তার নমুনা সংগ্রহ করে রাজধানীর মহাখালীর জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে।
তিনি বলেন, করোনা আ’ক্রান্ত ভেবে সন্তানরা তাকে ফেলে চলে গেছেন। এখন তিনি আমার মা। ব্যক্তিগতভাবে তার সব দায়-দায়িত্ব এখন থেকে আমার। তার শরীরের নমুনা পরীক্ষার পর যদি করোনা পজিটিভ আসে, তবে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজধানীর কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে পাঠানো হবে। ইতোমধ্যেই তার পরিবারের খোঁজ নেয়া হয়েছে। যদি রিপোর্ট পজিটিভ আসে তাহলে উন্নত চিকিৎসা করাব। রিপোর্ট নেগেটিভ এলে তিনি আমার ব্যবস্থাপনাতেই থাকবেন। ব্যক্তিগতভাবে যা যা করা দরকার এই মায়ের জন্য সবকিছুই করব আমি।
সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ সায়েমুল হুদা বলেন, ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে কেমন সন্তান। সন্তান নামের কলঙ্ক। আমরা এই মায়ের পরীক্ষা করাব। মায়ের সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যসেবা আমরা নিশ্চিত করব। তিনি আমারও মা। এই মায়ের সব দায়িত্ব এখন আমাদের। সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী আজ থেকে বৃদ্ধা মায়ের ছেলে-মেয়ে হিসেবে সেবা করবেন।