মুসলমানদের জন্য রমজানে আজহারীর কয়েকটি পরামর্শ !!
বাংলাদেশের জনপ্রিয় ইসলামী বক্তা মিজানুর রহমান আজহারী বর্তমানে প্রবাসে জীবনযাপন করছেন। দেশের বাইরে থেকেও প্রতিনিয়ত দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। করোনায় দরিদ্রদের পাশে দাঁড়িয়ে দেশ প্রশংসা পেয়েছে দেশের মানুষের। প্রতিনিয়ত দেশের মুসলমানদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভালো ভালো উপদেশ দেন এই আলোচিত ইসলামী বক্তা। এবার করোনা মহামারীর মধ্যে আসন্ন পবিত্র রমজান মাসের আমল নিয়ে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। সোমবার (২ এপ্রিল) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে এসব পরামর্শ দেন আজহারী। আজহারীর স্ট্যাটাসটি বিডি২৪লাইভের পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে দেয়া হলো-
‘রমাদান পরিকল্পনা
এ বছর রমাদানের শুরুতেই, আপনার যাকাত আদায়ের পরিকল্পনা করে ফেলুন। আপনার যাকাতবর্ষ পূর্ণ হতে কয়েক মাস বাকী থাকলেও, সম্ভব হলে এ রমাদানেই যাকাত আদায় করে দিন। যাকাত অগ্রিম আদায় করা যায়। তাই, করোনা পরিস্থিতিতে অভুক্ত ও অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে, আপনার যাকাতের অর্থ পৌঁছে দিন তাদের হাতে। কাজকর্ম সব বন্ধ থাকায়, খাদ্যাভাবে কঠিন সময় পার করছে শ্রমজীবি স্বল্প আয়ের এই মানুষগুলো। এমন সংকটাপন্ন মূহুর্তে এর চেয়ে ভালো কোন সৎকর্ম আর হতে পারে না। পাশাপাশি, বিগত বছরের অপরিশোধিত যাকাত থাকলে সেটাও এই রমাদানে আদায়ের পরিকল্পনা করুন। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করছেন- “এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায়, পবিত্র অন্তরে যে যাকাত তোমরা দিয়ে থাকো, তা বহুগুণে বৃদ্ধি পায়”। (আল-রুম: ৩৯)
কুরআনুল কারীম কেন্দ্রীক রমাদানে বিশেষ প্ল্যান করুন। খতম উঠানোর জন্য উঠেপড়ে না লেগে, বিশুদ্ধ তিলাওয়াত নিশ্চিত করুন এবং তাদাব্বুর তথা বুঝে বুঝে এবং অনুধাবন করে, কুরানিক ম্যাসেজ গুলো হৃদয়ঙ্গম করার চেষ্টা করুন। তাড়াহুড়ো করে অনেকগুলো খতমের চেয়ে বুঝে পড়া ও তিলাওয়াতের গুণগত মান নিশ্চিত করা বেশী জরুরী। রমাদান আসার আগেই কুরআনের বিশেষ কিছু অংশ বা কয়েকটি সুরা মুখস্ত করার পরিকল্পনা করুন। পরিবারের সবাই মিলে মুখস্তকৃত অংশগুলো একে অপরকে শুনাতে পারেন। কোয়ারেনটাইনকে কুরআন টাইম বানান। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করছেন- “এরপরও কি ওরা কোরআন নিয়ে গভীর ধ্যানে নিমগ্ন হয়ে তা অন্তরে ধারণ করবে না? নাকি ওদের মনের দরজায় তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে?” (মুহাম্মাদ: ২৪) যেহেতু লকডাউন চলছে, সবাইকে বাসায় থাকতে হচ্ছে, হাতে এখন প্রচুর সময়। সময়গুলো প্রোডাক্টিভ কাজে বিনিয়োগ করুন। বাসায় ইসলামি হালাক্বার আয়োজন করতে পারেন, যেখানে পরিবারের সদস্যরা সবাই মিলে কুরআনের সরল বংঙ্গানুবাদ, মর্মার্থ ও সংক্ষিপ্ত তাফসির কিংবা রিয়াদুস সলিহিন এর মত যে কোন হাদীস গন্থের উপর বিষয় ভিত্তিক সামস্টিক পাঠের ব্যবস্থা থাকবে। বিভিন্ন ইসলামিক স্কলারদের লেকচারগুলো ইউটিউব থেকে শুনুন, তাদের লাইভ প্রোগ্রামগুলোতে জয়েন করুন এবং এগুলো স্যোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন। নলেজ শেয়ারিং অনেক বড় সাদাকাহ। রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- “আমার পক্ষ হতে একটি বাণীও যদি তোমার জানা থাকে, তবে তা অন্যের কাছে পৌঁছে দাও”। (বুখারী)
তারাবির সালাতের ক্ষেত্রে, রাকাত বিতর্ক এড়িয়ে চলুন। ধীরেসুস্থে, একাগ্রচিত্তে এবং তা’দিলুল আরকান মেনটেইন করে সালাত আদায় করুন। বিশ রাকাত পড়তে পারাটাই উত্তম। আবার, রাসূল (সা:) এর আট রাকাতের হাদিসের বর্ননাও স্বত:সিদ্ধ। তাই, কোয়ান্টিটি নিয়ে বিতর্ক না করে, কোয়ালিটি সালাতের দিকে মনযোগী হোন। ইসলামি শারি’য়ায় যে ব্যাপারগুলোতে প্রশস্ততা রয়েছে সেগুলো নিয়ে বাড়াবাড়ি করা উচিত নয়। তাছাড়া, কুরআনে সুন্দর আমলের কথা বলা হয়েছে, বেশী আমলের কথা নয়। তাই, সত:স্ফূর্ত ও প্রানবন্তভাবে রাতের সালাত দুই রাকাত দুই রাকাত করে যত বেশী আদায় করা যায় ততোই সাওয়াব। নিষ্প্রাণ সালাত আল্লাহ তায়ালার কাছে মূল্যহীন, যদিও তা সংখ্যায় বেশী। রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- “তোমাদের সাধ্যে যতটুকু কুলায় ততটুকুই ইবাদত কর। আল্লাহর শপথ, নিশ্চই আল্লাহ কখনো ক্লান্ত হবেন না বরং তোমরাই ক্লান্ত হয়ে পড়বে”। (মুসলিম) সারা বছর হয়তো অনেকেরই তাহাজ্জুদ পড়ার সুযোগ হয়ে উঠেনা। এ মাসে এই বিশেষ সুযোগটি কাজে লাগানো যেতে পারে। সাহুর খাওয়ার জন্য তো আমাদেরকে উঠতেই হবে। তাই, প্রতিরাতে সাহুর খাওয়ার আগে অথবা পরে, দু্ চার রাকাত তাহাজ্জুদ আদায় করার পরিকল্পনা করুন। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- “আর রাত্রির কিছু অংশ তাহাজ্জুদে কুরআন পাঠ সহ জাগ্রত থাকুন। এটা আপনার জন্যে অতিরিক্ত। অচিরেই আপনার পালনকর্তা আপনাকে এক প্রশংসনীয় মাকামে অধিষ্ঠিত করবেন”। (বনি ইসরাইল: ৭৯)
পরিমিত ইফতার ও সাহুর গ্রহনের পরিকল্পনা করুন। মাত্রাতিরিক্ত ইফতার ও সাহুর গ্রহনের ফলে অলসতা তৈরি হবে এবং সারাদিন কুরআন তিলাওয়াতে ও রাতে কিয়ামুল্লাইলে আপনি মজা পাবেন না। তাই, রমাদানে হেলথি ডায়েট মেনটেইন করার চেষ্টা করুন। এতে আপনার প্রোডাক্টিভিটি অনেক গুণে বেড়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- “ পাকস্থলীর এক তৃতীয়াংশ খাবারের জন্য, এক তৃতীয়াংশ পানির জন্য এবং এক তৃতীয়াংশ থাকবে শ্বাস প্রশ্বাসের জন্য” (তিরমিযি) ক্বদর বা ভাগ্যরজনী তালাশের জন্য, রমাদানের শুরু থেকেই সিরিয়াসলি পরিকল্পনা নিয়ে রাখুন। প্রয়োজনে ক্যালেন্ডারে তারিখগুলো মার্ক করে রাখুন যাতে করে, কোন ভাবেই এ রাতের বারাকাহ মিস না হয়ে যায়। রমাদানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোর যে কোন একটি রাত হল- সেই বহু প্রতিক্ষীত ক্বদরের রাত। যে রাতে পবিত্র কুরআনুল কারীম নাযিল হয়েছে, যে রাত হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ, যে বরকতময় রাতে আরশের মালিকের রাজকীয় ব্যবস্থাপনায় প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিজ্ঞোচিত ফায়সালা দেয়া হয়, আর সে রাতে ফজর উদিত হওয়া অবদি গোটা দুনিয়ায় শান্তির সমীরণ বহে। সকল ব্যস্ততাকে ছুটি দিয়ে, ইবাদতে মশগুল থাকুন এ মহিমান্বিত রজনীতে। রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- “যে ব্যক্তি ক্বদরের রাতের মাহাত্ম অর্জন থেকে বঞ্চিত হল, সে আসলেই দুর্ভাগা”। (নাসাঈ)’