খাদ্য সহায়তায় কর্মহীনদের ১০ হাজার টাকা দিলেন শেরপুরের ভিক্ষুক !!
নজিমুদ্দিন। বয়স ৮০ বছর। ভিক্ষা করে সংসার চালান। নিজের বসতঘর মেরামত করার জন্য দুই বছরে ভিক্ষা করে জমিয়েছেন ১০ হাজার টাকা।কিন্তু এ টাকা দিয়ে তার নিজের ঘর মেরামত না করে দান করলেন শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে কর্মহীনদের খাদ্য সহায়তার জন্য খোলা তহবিলে।মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে মালিঝিকান্দা ইউনিয়নের বাতিয়াগাঁও এলাকায় ইউএনও রুবেল মাহমুদের হাতে এ টাকা তুলে দেন নজিমুদ্দিন।
তিনি উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের গান্ধীগাঁও গ্রামের ইয়ার আলীর ছেলে।স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রা’ণঘাতী করোনাভা’ইরাস সংক্রমণ রোধে ঘরবন্দি হওয়া কর্মহীন মানুষদের সরকারি ও বেসরকারিভাবে খাদ্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে। গত রোববার ইউএনও রুবেল মামুদের নির্দেশে খাদ্য সহায়তার জন্য স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘দি প্যাসিফিক’ ক্লাবের সদস্য ও স্থানীয় ইউপি সদস্যরা কর্মহীন অসহায় দরিদ্রদের তালিকা প্রণয়নে গান্ধীগাঁও গ্রামে যান।
এ সময় নজিমুদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে তাকে ইউএনওর পক্ষ থেকে খাদ্যসামগ্রী দেয়ার কথা বলে তার জাতীয় পরিচয়পত্র দেখতে চান তারা। পরে ওই তালিকায় তার নাম না দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন তিনি।একই সঙ্গে নজিমুদ্দিন বলেন, নিজের বসতঘর মেরামত করার জন্য দুই বছরে ভিক্ষা করে ১০ হাজার টাকা জমিয়েছি। এ টাকা স্বেচ্ছায় বর্তমান পরিস্থিতিতে অসহায়দের খাদ্য দেয়ার জন্য দান করবেন তিনি।
পরে মঙ্গলবার ‘দি প্যাসিফিক’ ক্লাবের সদস্য ও স্থানীয় ইউপি সদস্য ওই ভিক্ষুককে ইউএনওর কাছে নিয়ে যান। সেখানে তার জমানো ১০ হাজার টাকা ইউএনওর হাতে তুলে দেন তিনি।এ সময় নজিমুদ্দিন গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে বলেন, ‘আমি ভিক্ষা করে খাইয়ে-খুইচরে দুই বছরে এ টেহা জড়ো করছি। আমার ঘরডা ভাঙ্গে গেছে গ্যা। এহন আর ঘর-দরজা দিলাম না। দশে এহন (মানুষ) কষ্ট করতাছে, আমি এ টেহ্যা ইউএনও সাহেবের হাতে দিলাম। দশেরে দিয়ে দেখ, খাইয়ে বাঁচুক।’
ইউএনও রুবেল মাহমুদ বলেন, করোনাভা’ইরাসের কারণে কর্মজীবী মানুষ কর্মহীনতায় ভুগছেন। এখানে কর্মজীবী মানুষের সংখ্যা বেশি। এর জন্য সরকারি চাল দেয়ার পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে তহবিল খোলা হয়েছে।তিনি বলেন, মঙ্গলবার একজন ভিক্ষুক, যিনি ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তিনি ভিক্ষাবৃত্তি করে উপার্জিত ১০ হাজার টাকা আমাদের তহবিলে দিয়েছেন। এ কাজের জন্য নজিমুদ্দিনকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। এটা মহানুভবতার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।তিনি এ দুর্যোগের সময় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে সমাজের বিত্তশালীদের প্রতি আহ্বান জানান।