জামাল খাশোগির ভাগ্যে যা ঘটেছে, তোমার ভাগ্যেও তাই ঘ’টবে !!
লন্ডন-প্রবাসী সৌদি আরবের একজন মানবা’ধিকার কর্মী অভি’যোগ করছেন, তাকে প্রা’ণনা’শের হু’মকি দেয়া হয়েছে। আর তার বিশ্বাস, এই হু’মকি দিয়েছে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের অ’নুচ’রেরা। আলিয়া আবুতায়া আলহুয়েইতি নামের এই নারী বিবিসিকে জানিয়েছেন, ফোন এবং টুইটের মাধ্যমে তাকে এসব হু’মকি দেয়া হয়েছে।
কারণ, লোহিত সাগরের পারে চোখ ধাঁ’ধা’নো এক আধুনিক প্রযু’ক্তি-নির্ভর শহর গড়ে তোলার ব্যাপারে সৌদি সরকারের পরিক’ল্পনায় তার গো’ত্র বা’ধা দেয়ার পর তিনি এই বি’রো’ধিতার বিষয়টি আন্তর্জাতিক অ’ঙ্গনে তু’লে ধ’রেছিলেন। “তোমাকে আমরা লন্ডনে ধ’রতে পারবো,”আলহুয়েইতি তার টেলিফোন কলের হু’মকি সম্পর্কে বলছিলেন, “তুমি ভাবছো সেখানে তুমি নি’রাপদ রয়েছে। কিন্তু তুমি নি’রাপদ নও।”
আলহুয়েইতি জানান, তাকে যে হু’মকি দেয়া হয় তাতে বলা হয়, “জামাল খাশোগির ভা’গ্যে যা ঘ’টেছে, তোমার ভা’গ্যেও তাই ঘ’টবে।” এরপরই তিনি এই হু’মকির বিষয়টি লন্ডনের পুলিশকে জানিয়েছেন। সাংবাদিক এবং সৌদি যুবরাজের ক’র্মকা’ণ্ডের একজন ক’ড়া স’মালো’চক জামাল খাশোগিকে ২০১৮ সালে ইস্তাম্বুলের সৌদি কনসুলেটের ভেতরে সরকারি এ’জে’ন্টরা খু’ন করে এবং তার দেহ খ’ণ্ড খ’ণ্ড করে কে’টে ব্যা’গে ভ’রে নিয়ে যায়।
পশ্চিমা গোয়ে’ন্দা সং’স্থাগুলোর বিশ্বাস, এই খু’ন হয়েছিল যুবরাজ মোহাম্মদের আদে’শে। সৌদি সরকার অবশ্য এই অভি’যোগ অস্বী’কার করে। গত ১৩ই এপ্রিল আব্দুল রহিম আল-হুয়েইতি নামে এক ব্যক্তি অনলাইনে একটি ভিডিও পো’স্ট করেন। এতে তিনি অভি’যোগ করেন যে ‘নিওম’ নামে নতুন এক উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য নি’রা’পত্তা বাহি’নী তার এবং তার গো’ত্রের লোকজনকে বসতভি’টা থেকে উ’চ্ছে’দ করার চে’ষ্টা করছে।
একই গো’ত্রের সদস্য আলিয়া আলহুয়েইতি ঐ ভিডিওটি অনলাইনে ছ’ড়িয়ে দিয়েছিলেন। ঐ ভিডিওতে আব্দুল রহিম আল-হুয়েইতি জানান, সরকারের উ’চ্ছে’দ আদে’শকে তিনি মে’নে নে’বেন না। ভিডিওতে তিনি এক জায়গায় আ’শ’ঙ্কা প্রকা’শ করে বলেছিলেন যে তাকে দো’ষী বা’নানোর লক্ষ্যে নি’রাপ’ত্তা বাহি’নী হয়তো তার বাড়িতে অবৈ’ধ অ’স্ত্র রে’খে আসবে। এর পরপরই তিনি সৌদি নিরাপ’ত্তা বাহি’নীর হাতে নিহ’ত হন।
রাষ্ট্রীয় নি’রাপ’ত্তা বাহি’নীর এক বিবৃ’তিতে তার মৃ’ত্যুর কথা স্বী’কার করা হলেও বলা হয় যে তিনি নিরাপ’ত্তা বাহি’নীর ওপর গু’লি ছুঁ’ড়েছিলেন এবং তারা বা’ধ্য হয়েই পা’ল্টা গু’লি চা’লায়। মিস আলহুয়েইতি এই বিবৃ’তিকে নাক’চ করেছেন। তিনি জো’র দিয়ে বলছেন, মি. আল-হুয়েইতির কাছে কোন অ’স্ত্র ছিল না। গত বুধবার তিনি অনলাইনে কিছু ছবি ও ভিডিও ফু’টেজ পো’স্ট করেছেন যেখানে আল-খোরাইবা গ্রামে মি. আল-হুয়েতির জা’নাজার দৃ’শ্য দেখা গেছে।
আল হোয়েইতাত আরব বেদুইনদের একটি গো’ত্র যারা তাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে খুবই গর্বিত। অকু’তোভ’য় যো’দ্ধা হিসেবে ইতিহাসে এদের নাম লেখা রয়েছে। এই গো’ত্রটি ১৯১৭ সালের আরব বি’দ্রো’হের সময় টি. ই. লরে’ন্স (লরে’ন্স অফ অ্যারাবিয়া)-র পাশে দাঁড়িয়ে যু’দ্ধ করেছিল। এখন আল হোয়েইতাত-এর বেশিরভাগ সদস্যই মরুভূমির যাযাবর জীবন ত্যা’গ করে নিজেদের গ্রামে বসবাস করছেন।
“তারা নিওম উন্নয়ন প্রকল্পের বিরো’ধী না,” বলছেন আলিয়া আবুতায়া আলহুয়েইতি, “তারা যেটা চাইছেন সাতপুরুষের ভিটেমাটি থেকে তাদের যেন উ’চ্ছে’দ করা না হয়।” তিনি জানান, সরকারি উ’চ্ছে’দের প্রতি’বাদ করার দা’য়ে আব্দুল রহিম আল-হুয়েইতির সাতজন চাচাতো ভাইকেও গ্রেফ’তার করা হয়েছে। এরা চাইছেন পশ্চিমা মানবা’ধিকার কর্মীদের সহায়তায় সরকারি আদে’শের বিরু’দ্ধে আইনগত চ্যা’লেঞ্জ ছুঁ’ড়ে দিতে।
কিন্তু যুবরাজ মোহাম্মদে সৌদি আরবের তেলের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনতে চান। তার জন্য তিনি গড়ে তু’লতে চান আধুনিক শহর। কিন্তু এই উ’চ্চাকা’ঙ্ক্ষী পরিক’ল্পনায় বিরো’ধিতা করার জন্য একজন বি’ক্ষো’ভকারীর মৃ’ত্যু তার জন্য প্রথম কোন সম’স্যা না। জামাল খাশোগজির মৃ’ত্যুর ঘ’টনায় সৌদি রাজতন্ত্রের ওপর আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের বিশ্বাসের ভিত্তি অনেকখানি ট’লে গিয়েছে।
পাশাপাশি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান, যাকে মনে করা হয় রাজ’ত্বের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী, তার সম্পর্কেও তৈরি হয়েছে স’ন্দে’হ। সম্প্রতি করোনাভাইরাসের জন্য বিশ্ব অর্থনীতি ত’ছন’ছ হয়েছে এবং তেলের বাজার দারু’ণভাবে মা’র খেয়েছে। এখন অর্থনৈতিক পরিস্থি’তির নাট’কীয় উন্নতি না ঘ’টলে সৌদি আরব কীভাবে নিওম প্রকল্পে চার লক্ষ কোটি ডলার ব্যয় করবে তা পরিষ্কার নয়।
তবে রোববার সৌদি সরকারের এক সংবাদ বিজ্ঞ’প্তিতে দা’বি করা হয়েছে যে এই প্রকল্প ঠি’কঠা’ক চলছে। এবং ২০১৩০ সাল নাগাদ প্রথম শহরটি তৈরি হয়ে যাবে। তবে জু’লু’ম করে উ’চ্ছে’দ, বি’ক্ষো’ভকারীর সন্দে’হজ’নক মৃ’ত্যু এবং হু’মকি-ধ’মকির ঘ’টনা আন্তর্জাতিক মহলের কাছে এই প্রকল্পের ভাবমূ’র্তি কীভাবে উ’জ্জ্বল করবে তা বোঝা যাচ্ছে না। আর প্রকল্পটি আদৌ শেষ হবে কিনা তা নিয়েও এখন তৈরি হয়েছে গ’ভীর স’ন্দেহ।
সূত্র : বিবিসি বাংলা।