অন্য দেশের নেতারা যুদ্ধের ময়দানে – আমাদের নেতারা ঘরের ভেতরে !!
হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে যেকোনো ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। তিনি বলেন, ‘লন্ডনে প্রধানমন্ত্রীর পর্যন্ত করোনা হয়েছে, আজকে শুনেছি রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর করোনাভা’ইরাস হয়েছে। আমরা এমন দুর্ভাগা দেশ এখন পর্যন্ত কোন এমপি সাহেবের করোনা হয়েছে শুনছেন নাকি আপনারা। খালি সব গরিবের করোনা হবে দেখবেন। এর মানে বোঝেন, অন্য দেশের নেতারা চলে গেছে যুদ্ধের ময়দানে, আর আমাদের নেতারা চলে গেছেন ঘরের ভেতরে।’ শুক্রবার (১ মে) নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে লাইভে এসে এ আশ্বাস দেন তিনি। সুমন বলেন, ‘চুনারুঘাটের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের কোনো লোক যদি মনে করেন, আমার থেকে কোনো সহযোগিতা লাগবে, আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি যে, এই দুর্যোগকালীন সময়ে দেব।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন যে, আমি এক মাস ধরে এই বাড়িটার মধ্যে লকডাউনে আছি। আমার এলাকায় যারা অভাবি, দরিদ্র মানুষ তাদের সেবা করে যাচ্ছি। আমি আজ আমাদের এলাকার মসজিদের সব ইমাম এবং মুয়াজ্জেম সাহেবের উদ্দেশে দুইটা কথা বলতে চাই। আপনাদের আমি দাওয়াত দিয়ে নিয়ে এসেছি। আপনাদের এখানে দু’টি কারণে এনেছি, একটি আপনারা জানেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সাড়ে আট কোটি টাকা শুধু কওমি মাদরাসার ছাত্র এবং শিক্ষকদের জন্য বরাদ্দ দিয়েছেন। আপনারা এর মধ্যে খবর পেয়ে যাবেন।’
ব্যারিস্টার সুমন বলেন, ‘এলাকার সবারই যে যার অবস্থান থেকে সহযোগিতা করা একটা দায়িত্ব। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আপনাদের মধ্যে যারা অসহায় আছেন তাদের পাশে দাঁড়াতে চাই। আপনাদের মধ্যে সবাই অসহায় না। অনেকেই আছেন অসহায়, তাদের পাশে দাঁড়াতে চাই। আমি প্রতি বছর ইফতারি করাই, এবার তো ইফতারি করানোর তো সুযোগ নেই। আমি কিছু ইফতার সামগ্রী এবং কিছু উপহার সামগ্রী প্রস্তুত করে রেখেছি।’
ইমাম এবং মুয়াজ্জিনদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের একটা কথা বলতে চাই যে, বিপদের সময় একজন আরেকজনের পাশে দাঁড়ানো হলো মুমিন মুসলমানের দায়িত্ব। যে যখন বিপদে পড়বে তার পাশে দাঁড়াতে হয়।’
সুপ্রিম কোর্টের এ আইনজীবী বলেন, ‘মানুষের যদি জায়গা নিতে হয়, তাহলে সেটা নিতে হয় হৃদয়ে। চেয়ারে কিন্তু জায়গা নিলে সেটা বেশিদিন থাকে না। তাই মানুষের হৃদয়ে যদি জায়গা নেয়া যায় সেটা বেশিদিন থাকে। আমি আজকে আপনাদের একটি ঘোষণা দিতে চাই। আমার ব্যক্তিগত এবং ফাউন্ডেশনের যত সম্পদ আছে তা নিয়ে আমার চুনারুঘাট এলাকার যত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে আছে তাদের পাশে আছি।’
সুমন তার বাড়ির পাশে স্কুল দেখিয়ে ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের উদ্দেশে বলেন, ‘এই স্কুলে ১২ টন চাল এনে রেখে দিয়েছি। যে টাকা ঢাকা থেকে নিয়ে এসেছিলাম, সেই সম্পূর্ণ টাকার চাল এখানে আছে, তিন-চার লাখ টাকার ডাল আছে, ঈদের সময়ের জন্য প্রয়োজনীয় সেমাই এনে রেখেছি। এগুলো হলো- গরিব অসহায় মানুষের জন্য। আমার কাছে আরও কিছু টাকা জমা আছে।’
তিনি বলেন, ‘ইমাম-মুয়াজ্জিমদের প্রতি আমার একটি দুর্বলতা আছে। আমার নানা এখানে উপস্থিত। আমি ছোটবেলায় নৈতিকতা শিখেছি তাদের কাছ থেকে। যে জায়গার উপর দাঁড়িয়ে আমাকে ৩৫ লাখ লোক ফলো করেন। এই কারণে ফলো করেন না যে, আমি কোনো এমপি বা মন্ত্রীর ছেলে। আমাকে ফলো করার কারণ, মানুষ মনে করে তার কথার মধ্যে কোনো না কোনোভাবে একটা নৈতিকতার জায়গা আছে।’
তিনি বলেন, ‘নৈতিকতার শিক্ষা যেটুকু নাকি স্কুল থেকে পেয়েছি, তার চেয়ে বেশি পেয়েছি এইখানে মসজিদ-মক্তব থেকে। বহু ওয়াজ মাহফিলে গিয়েছি। মাহফিলের যে কথাগুলো মানুষের মানবিকতা শেখায় সেই কথাগুলো এখনও আমার কানে বাজে।’
সুমন বলেন, ‘মানুষের মধ্যে তিনিই উত্তম যিনি মানবতার পথে বাইর হোন। আমি মনে করি, মানুষের মধ্যে তিনিই উত্তম যিনি মানুষকে বলেন, কোনটা ঠিক আর কোনটা ঠিক না। আমি কেমন ঘরের সন্তান, সেটা আপনারা জানেন এবং চিনেন। আমি আমার মায়ের কাছ থেকে শিখেছি, এটা আমার বড় শিক্ষা। যদি কারও উপকার করতে না পার কিন্তু ক্ষতি করো না। আমি সারা জীবনে এটুকু শিখেছি।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন আমি ব্যারিস্টার। আমি চাইলে মানুষের মাঝে প্যাঁচ লাগাইয়া মামলা করতে পারি। আমাকে আল্লাহ যখন ক্ষমতা দিয়েছে তখন আমি বেশি দুর্বল হয়ে গেছি। আমার কাছে মনে হয়েছে, আল্লাহ যখন কারও ক্ষমতা দেয় তখন তার মাটির দিকে নেমে যাওয়া উচিত।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এমন এক সময়ে এসেছি, আপনাদের কাছে দুঃখের কথা কী বলব? আমাদের দেশে ৭০ হাজার ডাক্তার। এর জন্য মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ও টেকনোলজিস্ট দরকার হলো সাড়ে তিন লাখ। এর মধ্যে সারা বাংলাদেশ আছে মাত্র পাঁচ হাজার। এসব হতাশার কথা বলতে চায় না। মহামারি করোনায় আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেভাবে মানুষ মারা যাচ্ছে এর ফিফটি পার্সেন্টও (৫০ শতাংশ) যদি আমাদের ধরে তাহলে আমাদের কোনো হাসপাতাল কভার করতে পারবে না। এতো লাশ পড়ে থাকবে আপনারা চিন্তাও করতে পারবেন না। একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আমাদেরকে বাঁচানোর আর কোনো লাইন আমরা দেখি না।’
ইতালির উদাহরণ টেনে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, ‘আমেরিকা কানাডা যা দেখেছে। ইতালির প্রেসিডেন্ট বলেছেন, দুনিয়াতে যত ধরনের চিকিৎসা ছিল সব চিকিৎসা আমরা দিয়েছি, এখন আকাশের দিকে তাকিয়ে ছাড়া আমাদের আর কোনো পথ নেই। ইতালির মতো দেশ এত অসহায় হয়েছে। দুনিয়াতে অনেক পাপ আমরা করেছি, এই পাপের ফল আমরা ভুগতেছি। আমরা কী পাপ করিনি? যত ধরনের পাপ আছে আমরা করেছি। দেশের গাছ কাটছি, বালু নিয়া রাস্তা রাস্তাঘাট বন্ধ করছি। আমরা যেসব দুর্নীতি করেছি, দুর্নীতির কথা বলার কারণে হয়তো মানুষ আমার কথা শুনে।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন, আমি আওয়ামী লীগ করি। আওয়ামী লীগের যত দুর্নীতিবাজ আছে তাদের বিরুদ্ধে প্রথম আমি মুখ খুলেছি। মুখ খুলে বলেছি একসঙ্গে আদর্শ এবং দুর্নীতি থাকতে পারে না। তুমি যদি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ কর, তাহলে তুমি চুরি করতে পারবে না। মানুষের দুর্যোগের মুহূর্তে তুমি এলাকা ছেড়ে ঢাকায় গিয়ে বসে থাকতে পারবে না। এটাকে আদর্শের কথা বলে না?’
এ আইনজীবী বলেন, ‘আমরা মুসলমান হিসেবে হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর উম্মত। তার আদর্শ অনুসরণ করে থাকি। আর আমরা বাংলাদেশি হিসেবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অনুসরণ করি। কিন্তু মেইন হলো গিয়ে আমরা মুসলমান হিসেবে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ অনুসরণ করে থাকি। হযরত মোহাম্মদ (সা.) এর আদর্শ ধারণ করলে কেউ কখনও মানুষের বিপদে দূরে সরে যেতে পারে না।’
তিনি বলেন, ‘আমেরিকা লন্ডনে যারা মারা যাচ্ছে, তাদেরকে রোগ থেকে বাঁচানো যাচ্ছে না। আর আমরা করোনায়ও মরব, অভাবেও মরব। আর দুই মাস যদি এভাবে সব বন্ধ থাকে আমার মতো মধ্যবিত্ত লোকেরই ১২টা বেজে যাবে। আমি জানি না অন্যান্য লোকের কী অবস্থা?’
সুমন বলেন, ‘আপনারা দেখুন, কেন আমি দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলি, আজকে দুর্নীতিবাজরা চার তলা, পাঁচ তলা বিল্ডিংয়ের মধ্যে বসে বলছে, লকডাউনে তোমরা বাইরে বের হইও না। এরা তো টাকা জমিয়ে নিয়েছে, তাদেরতো ব্যাংকে হাজার হাজার কোটি টাকা। দেখেন, আজকের এই মহামারিতে বাপে পোলার লাশ ধরে না। কেউ তাকে দেখতে চায় না। যে স্থানে করোনা হয়, বাড়িটাকে রেড সাইন দিয়ে বন্ধ করে রেখে দেয়। এখন আপনাদের কাছে একটা কথাই বলি, আপনারা সকলেই দোয়া করবেন। আর করোনায় নৈতিকতার শিক্ষা দেবেন। আর করোনা পরবর্তীতে কে বাঁচে কে মরি জানিনা, যারা বেঁচে থাকেন, তারা যখন নতুন বাংলাদেশ গড়বে, তখন যেন দুর্নীতিমুক্ত সমাজ দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়তে পারে। আপনারা এই দোয়া করবেন পরবর্তী প্রজন্মের জন্য।’
তিনি বলেন, ‘আরও কথা বলি, এই কথা বললে তো আমার চাকরি থাকে না, লন্ডনে প্রধানমন্ত্রীর পর্যন্ত করোনা হয়েছে, আজকে শুনেছি রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর করোনাভা’ইরাস হয়েছে। আমরা এমন দুর্ভাগা দেশ এখন পর্যন্ত কোন এমপি সাহেবের করোনা হয়েছে শুনছেন নাকি আপনারা। খালি সব গরিবের করোনা হবে দেখবেন। এর মানে বুঝেন অন্য দেশের নেতারা চলে গেছে যুদ্ধের ময়দানে, আর আমাদের নেতা চলে গেছেন ঘরের ভেতরে।’
তিনি বলেন, ‘আমি চাই না, কোনো নেতার করোনা হোক। কিন্তু আমি চাই, আল্লাহ যেন সবাইকে মুক্তি দেন। এখন পর্যন্ত দেশে ৮-১০ হাজার মানুষের করোনা আ’ক্রান্ত হয়েছে এখন পর্যন্ত শুনিনি কোনো নেতা বা আমার মত ব্যারিস্টারের করোনা হয়েছে। এ ধরনের অভিজ্ঞতা আপনাদেরকে আমি দিলাম। আমরা সবাই নষ্ট হয়ে গেছি, কিন্তু আপনাদের হাতে যারা শিশুরা আছে তাদেরকে নৈতিক শিক্ষা দেবেন এই আশা রেখে বিদায় নিচ্ছি।’
সূত্রঃ বিডি২৪লাইভ