নাতনিকে বিয়ে করে ভা’ইরাল হলেন নানা !!
বরের বয়স প্রায় ৬০ আর কনের ১৪। বর পেশায় রিকশাচালক ও ছয় সন্তানের জনক এবং কনে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। তারা দূর সম্পর্কের নানা-নাতনি। গত ১০ মে তাদের জেলা শহরে বিয়ে হয়। অসম বিয়ের বিষয়টি এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভা’ইরাল হয়েছে।
কনের বাবার দাবি, নানা প্রলোভনে তার মেয়েকে কৌশলে বিয়ে করেছেন রিকশাচালক শামছুল হক শামু। তবে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের দাবি, জন্মনিবন্ধন সনদ অনুসারে কনের বয়স ২০, তাই এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ নেই।এদিকে নববধূকে বাড়িতে না উঠিয়ে একই উপজেলায় একটি ভাড়া বাড়িতে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১০ মে জেলার লালমাই উপজেলার পেরুল দক্ষিণ ইউনিয়নের পেরুল গ্রামের শামছুল হক শামু একই গ্রামের পশ্চিম পাড়ার ইমাম হোসেনের মেয়ে মরিয়ম আক্তারকে ৫ লাখ টাকা দেনমোহর ও ১ লাখ টাকা উসুল দিয়ে বিয়ে করেন। মরিয়ম আক্তার স্থানীয় পেরুল উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। স্কুলে যাওয়া আসার সময় সে শামুর রিকশায় যাতায়াত করতো।
বিয়ে প্রসঙ্গে বর শামছুল হক শামু বলেন, মরিয়ম আক্তার সম্পর্কে আমার নাতনি। দীর্ঘদিন ধরে তাদের সঙ্গে আমার পারিবারিক সম্পর্ক। তাদের বিপদে আপদে আমি সব সময় পাশে ছিলাম। তাকে স্কুলে আনা নেয়ার পথে আমাদের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
নাবালিকাকে বিয়ে করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার বউ অপারেশনের রোগী। সংসারে কাজ করতে পারে না তাই বিয়ে করেছি। তাছাড়া আমাদের দুজনের সম্মতিতেই বিয়ে হয়েছে। ৫ লাখ টাকা দেনমোহর ও ১ লাখ টাকা উসুলে তাকে আমি বিয়ে করেছি। এক লাখ টাকা উসুলের মধ্যে আমি তাকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে একটি কানের দুল দিয়েছি এবং নগদ ১ হাজার ৫০০ টাকা দিয়েছি।
কনের বয়স প্রসঙ্গে বর শামসু আরও বলেন, মরিয়মের বয়স ২০ বছর তিন মাস। চেয়ারম্যান অফিসে যান, কম্পিউটারে গিয়ে দেখেন। চেয়ারম্যান সব বিষয়ে অবগত আছেন। তিনি ডেকে নিয়ে আমাদের কাছ থেকে সব জেনেছেন।তবে বিয়ে কাজী অফিস নাকি কোর্টে হয়েছে এসব বিষয় তিনি এড়িয়ে যান। বর শামসুল হক শামুর দুই মেয়ে ও চার ছেলের মধ্যে এক ছেলে ও এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে।
এদিকে অসম এই বিয়ের বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভা’ইরাল হয়ে পড়েছে। কেউ নেতিবাচক আবার কেউ কেউ রসালো মন্তব্য করছেন।মো. কাজী তৌহিদ লিখেছেন, ‘কী করলাম জীবনে।’সারিকুল বাশার সাকিব লিখেছেন, ‘ভাতিজাদের হক মারতেছে দেখ।’আলমগীর হোসাইন লিখেছেন, ‘ছাগলামি খবর, ক্লাস-৮ এ পড়া মেয়ের তো আইন অনুযায়ী বিয়ের বয়সই হয়নি, আর বিয়ে চ্যালেঞ্জ করলে এমনিই ভেঙে যাবে, যদি না পারিবারিক সন্মতি থাকে।’
বিয়ের বিষয়ে মরিয়মের বাবা ইমাম হোসেন জানান, শামু একজন রিকশাচালক। তার ঘরে স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে। সে আমার বাড়িতে কাজ করত। আমি ঢাকায় একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করি। আমার অনুপস্থিতিতে পরিবারে বিভিন্ন কাজ সে করে দিত। তাকে আমি খুব বিশ্বাস করতাম। সে আমার মেয়েকে নানা প্ররোচনা দিয়ে বিয়ে করেছে। এমন বয়স্ক একটা লোকের সঙ্গে আমার মেয়ে কীভাবে সংসার করবে। আমি গরিব বলে কারো কাছে বিচার পাচ্ছি না, তিনি এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
পেরুল দক্ষিণ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান সফিকুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বিয়েটি আইনগতভাবে হয়েছে। এটি কোনো বাল্যবিয়ে নয়। মেয়ের বয়স জন্মসনদ অনুযায়ী ২০ বছর তিন মাস। আমি ইউনিয়ন পরিষদে তাদের ডেকে এনে সব কাগজপত্র দেখেছি, যা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবগত করেছি। এখন মেয়ে সংসার করতে চাইলে আমাদের কী করার আছে?
এ বিষয় লালমাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইয়াসির আরাফাত বলেন, বিষয়টি আমি চেয়ারম্যানের কাছ থেকে শুনেছি, মেয়টির জন্মসনদ ২০০৮ সালের করা। তখনকার সময় এনালগ ছিল। জন্মসনদে কোনো কারসাজি আছে কিনা বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি।লালমাই থানার ওসি মো. আইয়ুব জানান, এ বিষয়ে থানায় কেউ অভিযোগ দেয়নি, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।