কোলের শিশুকে রেখে করোনাযুদ্ধে চিকিৎসক দম্পতি !!
আট বছর পর মেয়ে সন্তানের বাবা হয়েছেন তিনি। ফুটফুটে মেয়েটির বয়স এখন মাত্র ১৫ মাস। দুধের শিশুটির নাম রিদামনি। মানুষের চিকিৎসা সেবা দিতে দুধের শিশুকেও ছেড়ে থাকতে হচ্ছে তাদের।বরিশালের উজিরপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শওকত আলী ও ডা. নাদিরা পারভিন দম্পতি তাদের সন্তান রিদামনিকে রেখেই করোনায় চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
উজিরপুর হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে তারা রোগীদের পরম স্নেহ ভালোবাসা দিয়ে চিকিৎসা সেবা দেয়ার মাধ্যমে করোনা রোগীদের সুস্থ করে তুলছেন। দেশে মহামারি করোনাভা’ইরাস প্রাদুর্ভাবের প্রথম থেকেই ভয়কে জয় করে এ চিকিৎসক দম্পতি একটানা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।অনেকে যখন করোনাভা’ইরাস সন্দেহে রোগীর শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করতে ভয় পেত, সে সময় ডা. শওকত আলী একাই নির্ভয়ে রোগীর নমুনা নিয়ে টেস্ট করতে পাঠাতেন। করোনাভা’ইরাসে আ’ক্রান্ত হয়েছেন একথা শোনার পর অনেক ক্ষেত্রে স্বজনেরাও দূরে সরে যাচ্ছেন।
চারদিকে যখন এমন ঘটনা ঘটছে, সে মুহূর্তে মানবতার সেবায় এগিয়ে এসেছেন এ চিকিৎসক দম্পতি। জ্বর, সর্দি, কাশি শ্বাসকষ্টের মতো করোনাভা’ইরাসে উপসর্গ থাকা রোগীদের কাছে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করেন ডাক্তার শওকত আলী।উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, এখন পর্যন্ত হাসপাতালে ছয়জন করোনা আ’ক্রান্ত রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হয়। দুইজন করোনাকে জয় করে বাড়ি ফিরেছেন। একজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। দুইজন করোনা ইউনিটের আইসোলেশন কর্নারে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ বিষয়ে ডা. শওকত আলী জানান, নিয়ম অনুযায়ী একজন চিকিৎসক ১০ দিন চিকিৎসা সেবা প্রদানের পর ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। পরিবারের সঙ্গে ৬ দিন থাকতে পারে। তবে আমার বেলায় তা সম্ভব হয়ে উঠেনি কারণ নিয়ম ভেঙেই দুইজন করোনা আ’ক্রান্ত রোগীকে টানা ২১ দিন চিকিৎসা সেবা দিয়েছি।
তারা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে করোনাকে জয় করে বাড়ি ফিরেছেন। এখন এক রোগীকে টানা ১২ দিন পর্যন্ত করোনা ইউনিটে সেবা প্রদান করছি। আমার স্ত্রী ডা. নাদিরা পারভিনকে ছুটি নিয়ে একমাত্র দুধের শিশুর পাশে থাকতে বলি।সে বলে, দেশের এ ভয়াবহ পরিস্থিতিতে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাবে। হাসপাতাল ছেড়ে ছুটিতে যাবো না।ডা. নাদিয়া পারভিন বলেন, দেশের কল্যাণে মানবতার সেবক হয়ে কাজ করার সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছি। এ সুযোগ হাতছাড়া করতে চাই না। দুইজনে একসঙ্গে মানবতার সেবা করবো বেঁচে থাকি যতদিন ইনশাআল্লাহ।