করোনায় মারা গেলেন দেশের যেসব খ্যাতনামা ব্যক্তিরা !!
প্রা’ণঘা’তী করোনাভা’ইরাসে এখন পর্যন্ত দেশে মোট মারা গেছেন ৫৪৪ জন। এই মৃত্যুর তালিকায় রয়েছে অসংখ্য শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, চিকিৎসক, পুলিশ, সেনাসদস্য, ব্যবসায়ী, আমলা, ব্যাংক কর্মকর্তা, দুদক কর্মকর্তা, সাংস্কৃতিক অঙ্গনের ব্যক্তিত্বরা। আসুন জেনে নেই তাদের নামগুলো-
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান
গত ১৪ মে মারা যান বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত একুশে ও স্বাধীনতা পদক এবং ভারত সরকার প্রদত্ত পদ্মভূষণপ্রাপ্ত অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। তিনি ছিলেন শিক্ষাবিদ, লেখক ও জাতীয় অধ্যাপক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ইমেরিটাস অধ্যাপক ছিলেন। তিনি ভাষা আন্দোলন (১৯৫২), উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান (১৯৬৯) ও ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে কুদরাত-এ-খুদাকে প্রধান করে গঠিত জাতীয় শিক্ষা কমিশনের সদস্য ছিলেন।
নিলুফার মঞ্জুর
২৪ মে মারা যান সানবিমস স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা নিলুফার মঞ্জুর। তিনি ১৯৭৪ সালে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সানবিমস স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। দেশ-বিদেশে এই স্কুলের হাজার হাজার শিক্ষার্থী বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও অ্যাপেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর স্ত্রী।
ফারইস্ট ইউনিভার্সিটির ভিসি ড. নাজমুল করিম
৭ মে মারা যান ফারইস্ট ইউনিভার্সিটির ভিসি ড. নাজমুল করিম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য। ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকেও তিনি কাজ করেছেন।
রাজনীতিবিদ:
সাবেক এমপি মকবুল হোসেন
২৪ মে মারা যান সাবেক এমপি মকবুল হোসেন। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে ঢাকার ধানমণ্ডি-মোহাম্মদপুর আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন এই নেতা। একই সাথে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, সিটি ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা। এ্যমিকো ল্যাবরেটরিজ, পান্না টেক্সটাইল, মোনা ফিন্যান্সসহ কয়েকটি কোম্পানির স্বত্তাধিকারী। তার ছেলে আহসানুল ইসলাম টিটু টাঙ্গাইল-৬ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য।
সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী আনোয়ারুল কবির
১০ মে মারা যান সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী আনোয়ারুল কবির। বিএনপি জোট সরকারের আমলের সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী। বিএনপির সাবেক মহাসচিব ব্যারিস্টার আবদুস সালাম তালুকদারের ভাতিজা। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ও লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সাবেক রাজনীতিবিদ। তিনি জামালপুর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য।
আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ মফচ্ছিল আলী
১৪ এপ্রিল মারা যান আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ মফচ্ছিল আলী। সৈয়দ মফচ্ছিল আলী মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও মৌলভীবাজার মিনিবাস মালিক সমিতির চেয়ারম্যান, সমাজসেবী ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ছিলেন।
সরকারি কর্মকর্তা:
দুদক পরিচালক জালাল সাইফুর রহমান
৬ এপ্রিল মারা যান দুদক পরিচালক জালাল সাইফুর রহমান। বিসিএস ২২তম ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা জালাল সাইফুর রহমানের গ্রামের বাড়ি ফেনী জেলায়। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে তাকে দুদক পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
অতিরিক্ত সচিব তৌফিকুল আলম
২২ মে মারা যান অতিরিক্ত সচিব তৌফিকুল আলম। বিসিএস অষ্টম ব্যাচের (১৯৮৬) এই কর্মকর্তা সর্বশেষ তথ্য কমিশনের সচিব ছিলেন। গত ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি পিআরএলে যান।
পুলিশ কর্মকর্তা
১৮ মে পর্যন্ত বাংলাদেশ পুলিশের ৯ সদস্য করোনা যুদ্ধে মারা গিয়েছেন।
ব্যাংক কর্মকর্তা
২৭ মে করোনা উপসর্গ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম ব্যবস্থাপক আশরাফ আলী (৬০) মারা যান। রাজধানীর উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এছাড়া ১৮ মে মারা যান রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার (পিও) মাহবুব এলাহী।
চিকিৎসক:
হেমাটোলজিস্ট অধ্যাপক মনিরুজ্জামান
৩ মে মারা যান হেমাটোলজিস্ট অধ্যাপক মনিরুজ্জামান। ড. মো. মনিরুজ্জামান আনোয়ার খান মডার্ন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চিফ হেমোটোলজিস্ট ছিলেন।
ইবনে সিনার রেডিওলজি বিভাগ প্রধান মোকারিম
১৩ মে মারা যান ইবনে সিনার রেডিওলজি বিভাগ প্রধান মোকারিম। অধ্যাপক মেজর (অব.) আবুল মোকারিম মো. মহসিন উদ্দিন ঢাকার ইবনে সিনা হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগের প্রধান ছিলেন। ডা. আবুল মোকারিম মেডিনোভা হাসপাতালেও কাজ করতেন।
ডা.মঈন
১৫ এপ্রিল মারা যান ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডা.মঈন। দেশে কোন ডাক্তার হিসেবে প্রথম তিনি মারা যান। সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ছিলেন। করোনায় প্রথম মৃত্যুবরণকারী চিকিৎসক।
সাংবাদিক:
সাংবাদিক সুমন মাহমুদ
২২ মে মারা যান সাংবাদিক সুমন মাহমুদ। প্রবীণ সাংবাদিক ও দৈনিক ভোরের কাগজের সাবেক সহকারী সম্পাদক। এনটিভির সাবেক বার্তা সম্পাদক।
সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর খোকন
২৮ এপ্রিল মারা যান সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর খোকন। দৈনিক সময়ের আলোর নগর সম্পাদক এবং ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সিনিয়র সদস্য। ঢাকাস্থ কুমিল্লা সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি। দৈনিক মানবজমিন, আমাদের সময়সহ কয়েকটি পত্রিকার সাবেক সাংবাদকর্মী।
ব্যবসায়ী:
২২ মে মারা যান এস আলম গ্রুপের পরিচালক মোরশেদুল আলম। এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের বড় ভাই ও পরিচালক। এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের পরিচালক, এস আলম সুপার এডিবল অয়েল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চেমন ইস্পাত লিমিটেডের চেয়ারম্যান।
খেলোয়ার/সাংস্কৃতিক কর্মী:
১৫ মে মারা যান নৃত্যশিল্পী হাসান ইমাম। টেলিভিশন নৃত্যশিল্পী সংস্থার সাবেক সভাপতি, দেশের বিশিষ্ট নৃত্যশিল্পী এবং নৃত্য পরিচালক।
রেফারি জুয়েল
২৬ মে মারা যান এশিয়ান কারাতে ফেডারেশনের রেফারি জুয়েল। এশিয়ান কারাতে ফেডারেশনের রেফারি, বাংলাদেশ কারাতে ফেডারেশনের সদস্য হুমায়ুন কবীর জুয়েল।
এছাড়া যেসব বিশিষ্টজন করোনায় আ’ক্রান্ত হয়েছেন:
*গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি, বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।*এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ।*সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও অ্যাপেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী।*শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের ছোট ভাই ও চট্টগ্রামের প্রয়াত সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে বোরহানুল হাসান চৌধুরী সালেহীন।*ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ চৌধুরী প্রমুখ।