রাজশাহীতে করোনায় সুস্থ হয়েছেন ৮৪ বছর বয়সী শিক্ষক !!
রাজশাহীর মোহনপুরে করোনা ভাটইরাসের সাথে যুদ্ধে জয়ী হয়ে প্রায় ৩৫ দিন পর স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন ৮৪ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মনসুর রহমান। আ’ক্রান্ত হওয়ার পর থেকে তিনি বাড়িতে হোম আইসোলেশনে ছিলেন। গতকাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁকে বিশেষ সংবর্ধনা ও করোনা মুক্ত হওয়ার ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। এর আগে গত ২৮ মে করোনা যুদ্ধে জয়ী আরও তিনজনকে আনুষ্ঠানিকভাবে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। এরা হচ্ছেন উপজেলার কেশরহাট পৌর এলাকার হরিদাগাছী গ্রামের জেসমিন (২৪) ও আলামিন (২৫) জাহানাবাদ ইউনিয়নের তশোপাড়া গ্রামের ইঞ্জিনিয়ার ফারুক হোসেন (২৮)। তারা তিনজনই ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-গাজীপুর-ঢাকা ফেরত। তবে মনসুর রহমান বাড়িতে থেকে করোনা আ’ক্রান্ত হয়েছিলেন।
সোমবার (১ জুন) করোনা জয়ী মনসুর রহমানকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান উপজেলাা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আরিফুল কবীর। এসময় তাকে ফলমূলসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রীও উপহার দেয়া হয়। একই সময়ে মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে তাকে অভিনন্দন জানানো হয়। এসময় মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকেরাসহ তার পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। গত রোববার (৩১মে) মনসুর রহমানকে করোনামুক্ত ঘোষণা করেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. এনামুল হক।ছাড়পত্র দেওয়া শেষে মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আরিফুল কবীর সাংবাদিকদের বলেন, গত ২৫ এপ্রিল নমুনা সংগ্রহণ করা হয়। ২৬ এপ্রিল পরীক্ষায় তাঁর শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। তারপর বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিয়ে তিনি সুস্থ হয়েছেন। কয়েক দফা পরীক্ষা শেষে ৩৫ দিন পর তিনি করোনামুক্ত হয়েছেন।
মনসুর রহমানের বাড়ি উপজেলার জাহানাবাদ ইউনিয়নের নওনগর গ্রামে। তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। তাঁর এক ছেলে ও চার মেয়ে। ছেলের সঙ্গে তিনি গ্রামের বাড়িতে বসবাস করেন। করোনা জয় করে প্রথম প্রতিক্রিয়ায় অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মনসুর রহমান বলেন, ‘আমি যদি রোগ-শোক নিয়ে এই বয়সে করোনা থেকে মুক্ত হতে পারি, তাহলে মনোবল থাকলে সবাই এই রোগে জয়ী হতে পারবেন।’ মনসুর মাস্টার জানান, করোনা শনাক্ত হওয়ার পর তাঁকে একা থাকতে হয়েছে। এই বয়সে একা থাকাটা তাঁর জন্য একটু কষ্টই ছিল। তবে পরিবারের লোকজন, চিকিৎসক ও উপজেলা প্রশাসন এবং মোহনপুর থানার পুলিশ সময় তার পাশে ছিলেন। সেজন্য ভয় অনেকটা কেটে যায়। মানুষ মানুষের পাশে থাকলে এ রোগেও কোনো ভয় নেই। মনসুর রহমান আরও জানান, তিনি তাঁর সুস্থতার জন্য, পাশে থাকার জন্য মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক, ইউএনও এবং পুলিশ প্রশাসনসহ পরিবারের সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
পরিবার ও চিকিৎসকেরা জানান, মনসুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত অসুখে ভুগছেন। গত ১৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। চিকিৎসকেরা তাঁকে ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে (করোনা পর্যবেক্ষণ ওয়ার্ড) ভর্তি করেন। এরপর তাঁর এক্স-রে ও ইসিজি করার পর শারীরিক অবস্থা ভালো জানিয়ে ২১ এপ্রিল দুপুরে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। পরিবারের লোকজন সেদিন তাঁকে বাড়ি নিয়ে যান। এরপর ওই বৃদ্ধের জ্বর, শ্বাসকষ্টসহ শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে ২৫ এপ্রিল তাঁকে মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান পরিবারের সদস্যরা। ওইদিন স্বাস্থ্যকর্মীরা তাঁর নমুনা সংগ্রহ করে চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। ২৬ এপ্রিল রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ল্যাবে নমুনা পরীক্ষায় তাঁর করোনাভাটইরাস শনাক্ত হয়। মনসুরের ছেলে আল-আমিন সরকার জালাল জানান, বাবা এই বয়সে করোনা জয় করলেন। এটা এখন তাঁদের এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। করোনায় আ’ক্রান্ত ব্যক্তিকে কাছে রেখে সেবা দিলে খুব সহজেই সুস্থ হয়ে যাবে বলে মনে করি।
মনসুরের পুত্রবধূ শামীমা পারভীন বলেন, তাঁর শ্বশুরের করোনা শনাক্ত হওয়ার পর তাঁরা একটু বিপদেই পড়ে যান। আশপাশের লোকজন তাঁকে বাড়িতে রাখতে দিতে চাননি। তাঁরা বিভিন্ন সময় হুমকি দিয়ে বলেন, করোনা রোগীকে এখানে রাখা যাবে না। রাখলে বাইরে থেকে তালা দিয়ে দিব। ওই অবস্থায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, চিকিৎসকেরা ও মোহনপুর থানার পুলিশ আশপাশের লোকজনকে বুঝিয়ে শান্ত করেন। এমনকি চিকিৎসকেরা বাজার পর্যন্তও করে দিয়েছেন। এ জন্য তিনিও সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান। মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আরিফুল কবীর বলেন, তাঁর সুস্থ হওয়াটা অনেকের কাছে বিস্ময়কর লেগেছে। তিনিই সম্ভবত বাংলাদেশে সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে একজন, যিনি এই বয়সেও করোনামুক্ত হলেন। তিনি আগে থেকেই হৃদরোগসহ নানা অসুখে ভুগছিলেন। এ অবস্থায় এই বয়সে তিনি করোনা যুদ্ধে জয়ী করে সুস্থ্য হয়ে উঠেছেন। মোহনপুরে করোনা শনান্তের সংখ্যা ৭ জন। এর মধ্যে ৪ জন সুস্থ্য হয়েছেন।