তিন হাজার টাকা কেজিতে আম কিনছে যে দেশের মানুষ !!
আজ এসেছি স্টকহোম শহরে বাজার করতে। এখানে দুইটি বিশেষ বাজার আছে যাদেরকে স্যালুহল বলা হয়। একটির নাম ওস্টেরমাল্ম স্যালুহল অন্যটির নাম হোতরিয়েত স্যালুহল। এগুলেতে সিলেক্টিভ পণ্যদ্রব্য বিক্রি হয়। জিনিসপত্রের দাম একটু বেশি তবে কোয়ালিটি ভালো।
আমার আবার ছোটবেলার অভ্যাস একই জায়গায় বাজার করা। যেহেতু পরিচিত মুখ সেহেতু হাই হ্যালো বলা, তাছাড়া বিক্রেতারা জানে আমি কী পছন্দ করি। সব মিলে আমার ভালোই লাগে এখানে বাজার করতে।ছোটবেলা যখন গ্রামে থেকেছি ঠিক একইভাবে নির্দিষ্ট দোকান থেকে পণ্যদ্রব্য কিনেছি। যেমন নারানকুরি খুড়োর দোকান থেকে মিষ্টি, আমার প্রিয় চাচা আতিয়ার শিকদারের দোকান থেকে অন্যান্য জিনিস কেনা, সঙ্গে একটু আড্ডা মারা ছিল বাজার করার সঙ্গে কিছুটা বাড়তি বিনোদন। এ কারণে বাজার করাকে কাজ বলে মনে হয়নি কখনই।
আমি আবার আম, কাঁঠাল এবং লিচুর পাগল। ভালো লিচু অথবা আম পেতে লন্ডন পর্যন্ত যাই। কারণ বাংলাদেশ থেকে ফলগুলো সরাসরি লন্ডনের লাইম হাউজের আশপাশে সিলেটি ভাইদের দোকানে পাওয়া যায়। কিন্তু এবার সে সুযোগ নেই। কী করা!তবে সুইডেনে লিচু আর কাঁঠাল হয়ত মিলবে না, তবে আম পাওয়া যায়। এখানে নানা দেশ থেকে ফল আমদানি করা হয়। সুদূর আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, পেরু, এছাড়া এশিয়ার বিভিন্ন দেশর নানা বর্ণ এবং নানা স্বাদের আম এখানে পাওয়া যায়।
আমরা বলি ফলের রাজা আম, কারণ যেমন এর স্বাদ তেমন মিষ্টি। কয়েকদিন আগের ঘূর্ণি’ঝ’ড় আ’ম্পা’নে বাংলাদেশে আম চাষে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে যা দেখেছি খবরে, বেশ খারাপ লেগেছে। এই ঝড়ের কারণে সেই ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল। তখনও কিন্তু ঝড়ে আম পড়ে অনেক ক্ষতি হতো।যাইহোক আজ স্টকহোমের হোতরিয়েত স্যালুহলে কিছু ভিন্ন ধরনের আম চোখে পড়ল। এগুলো এসেছে পেরু এবং জাপান থেকে, দামও খুব চড়া। পেরুর আমের কেজি দুইশো পঞ্চাশ ক্রোনার এবং জাপানি আমের কেজি তিনশো ক্রোনার (এক ক্রোনা=১০ টাকা মানে তিন হাজার টাকা)।
একোলোজি (জীবজগৎ ও পরিবেশের বিজ্ঞান সম্মত সামঞ্জস্যের নাম একোলজি) উৎপাদিত পণ্য মানে একেবারে গাছপাকা এবং বিশেষ যত্ন করে আমগুলো গাছ থেকে পাড়া হয়েছে। আমের গায়ে ছোট করে লেখা রয়েছে তার জন্মের ইতিহাস।জীবনে কত আম খেয়েছি এবং টুকটাক ইতিহাস জেনেছি সত্য, তবে এই ধরণের আমের ইতিহাস এর আগে কখনও ভাবনাতে আসেনি। যেমন জাপানি আমের গায়ে লেখা রয়েছে তার নাম “এগ অফ সান।”
এই আম জাপানের বিশেষ জায়গায় উৎপাদিত হয়। প্রথম যে আমগুলো পাকে তা সেখানে নিলামে বিক্রি হয়। সুইডেনেও অবশ্য এমনটি হয়ে থাকে। যেমন বছরের প্রথম গোলআলু যখন বাজারে আসে তার দাম পাঁচশো থেকে আটশো ক্রোনার প্রতি কেজি হয়ে থাকে (সাধারণ সময় যার দাম দশ ক্রোনার)।
যেহেতু প্রথম বাজারে এসেছে তাই অনেকে সখ করে এগুলো কিনে থাকে এবং এর ওপর নিউজ, লিখালিখিও হয়। আমি যে আমগুলো সুইডেনে কিনি তা সাধারণত থাইল্যান্ড, পাকিস্তান মাঝে মধ্যে পেরু এবং স্পেন থেকে আসে।আজ জাপানের একটি আম কিনলাম। দেখতে অর্ধেক লাল, অর্ধেক হলুদ। এ আমগুলো জাপানেও রেয়ার, যার কারণে দাম একটু বেশি।
আমরা বাংলাদেশে যেভাবে ফলমূল সহজ উপায়ে উৎপাদন করি সেভাবে বিশ্বের অন্যান্য দেশে ফলমূল উৎপাদিত হয় না। কারণ বাংলাদেশের মাটি সেই গানের কথায় “ও ভাই খাঁটি সোনার চেয়ে খাঁটি, আমার দেশের মাটি।”সেক্ষেত্রে অতি সহজে আমরা যা ফলাই মাটিতে তাই ফলে কিন্তু অন্যান্য দেশে ফুল এবং ফলের চাষ করতে চাষিকে অনেক সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। যেমন জাপানে প্রতিটি আম গাছে থাকা অবস্থায় তা সুন্দর করে জালে জড়িয়ে রাখা হয়।
তারপর আমগুলোকে নির্দিষ্ট পরিবেশে রাখা হয় যাতে করে সূর্যের আলো আমের একটি নির্দিষ্ট অংশে পড়ে। অন্যদিকে ঠিক একইভাবে পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, পেরু এবং স্পেনের আম উৎপাদনেও এরা যথেষ্ট সময় ব্যয় করে থাকে।সুইডেনে যেহেতু বিভিন্ন দেশের ফলমূল পাওয়া যায়, সেহেতু দাম একটু বেশি হলে ক্ষতি কি? আমি আম ভালোবাসি। তারপর সেটা যদি খেতে ভালো হয় স্বাদে ও গন্ধে তাহলে তো কোন কথাই নেই। তবে ছোটবেলায় যেসব আম খেয়েছি সে স্বাদের সঙ্গে তুলনা করার মত আম এখানে আজও খাইনি।