সারাদেশে জোনভিত্তিক লকডাউন যেভাবে !!
করোনাভা’ইরাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া এলাকাগুলোকে জোনভিত্তিক লকডাউন করা-সংক্রান্ত স্ট্যান্ডার্ড অপারেশন প্রসিডিউর (এসওপি) অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার রাতেই এটি সংশ্লিষ্টদের হাতে পৌঁছেছে। ইতিমধ্যে এটি জেলা পর্যায়েও পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন স্বাস্থ্য অধিদফতর জোনের সংজ্ঞা নির্ধারণ করার পরই মাঠপর্যায়ে লকডাউন কার্যকর করার প্রক্রিয়া শুরু হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতর, আইসিটি মন্ত্রণালয় এবং ঢাকার বিভাগীয় কমিশনারের দফতর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
১ জুন সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া করোনাভা’ইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সারা দেশে জোনভিত্তিক লকডাউন করার। অর্থাৎ বেশি সংক্রমণ এলাকাকে রেড জোন, মাঝারি সংক্রমণ এলাকাকে ইয়েলো জোন এবং আ’ক্রান্ত নেই এমন এলাকাকে গ্রিন জোন হিসেবে চিহ্নিত করে লকডাউন করা হবে বলে ওই বৈঠক শেষে জানিয়েছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এর পরপরই কয়েক দিন ধরে জোনভিত্তিক লকডাউন নিয়ে নানা আলোচনা ছিল সারা দেশে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর, আইসিটি মন্ত্রণালয়, মাঠ প্রশাসনসহ বিভিন্ন পর্যায় থেকে বলা হয়েছিল, প্রাথমিকভাবে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের দুটি এলাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী ও গাজীপুরের তিনটিসহ মোট পাঁচটি এলাকাকে লকডাউন করা হবে। রবিবার থেকেই এ কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা বলেছিলেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দফতরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
কিন্তু এসওপি অনুমোদন না হওয়ায় এ কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। যদিও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন উদ্যোগী হয়ে পরীক্ষামূলকভাবে রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারকে মঙ্গলবার রাত থেকে লকডাউন করেছে। এদিকে তথ্য ও যোগযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব এন এম জিয়াউল আলম বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এসওপি অনুমোদন করেছেন। মঙ্গলবার রাতে আমরা এটা পেয়েছি। এখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতর এটি নিয়ে কাজ করছে। দু-এক দিনের মধ্যেই সবকিছু চূড়ান্ত হয়ে যাবে। তারপর রেড, ইয়েলো ও গ্রিন জোন ধরে এলাকাভিত্তিক লকডাউন কার্যকর করার প্রক্রিয়া শুরু হবে।’ আইইডিসিআরের একজন কর্মকর্তা জানান, এসওপি হচ্ছে একটা গাইডলাইন। কীভাবে, কাদের নিয়ে লকডাউন কার্যকর করা যাবে, এর একটা সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা। তিনি জানান, এখানে অনেক মন্ত্রণালয় ও দফতর জড়িত। এর মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, আইসিটি বিভাগ, পুলিশ, মাঠ প্রশাসন রয়েছে।
এসব দফতর ও সংস্থার কার কী কাজ তা এসওপিতে বলে দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, ইতিমধ্যে এসওপি প্রত্যেক জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জন, পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে পাঠানো হয়েছে। এর আলোকেই সবাই প্রস্তুতি নেবেন। ওই কর্মকর্তা আরও জানান, এখন রেড জোন, ইয়েলো জোন ও গ্রিন জোন চূড়ান্ত করার কাজ চলছে। এটি সমাপ্ত হলেই কোন এলাকা লকডাউন হবে বা হবে না তা জানা যাবে। তিনি জানান, এই ম্যাপিংটাও পরিবর্তনশীল। কারণ কোনো এলাকায় রোগী কমে গেলে সেটি আর রেড জোনে থাকবে না। ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী এসওপি অনুমোদন দিয়েছেন। এখন কাজ হচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের। তারা চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে কোন এলাকা রেড জোন, কোন এলাকা ইয়েলো জোন আর কোন এলাকা গ্রিন জোন।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতর জোনের সংজ্ঞা তৈরির কাজ করছে। এর পরই তারা জানাবে কোন এলাকা রেড জোন বা ইয়েলো জোন। বিভাগীয় কমিশনার জানান, এ সংজ্ঞা মহানগর ও জেলার ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা হবে। একই রকম হবে না। তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে মঙ্গলবার আমরা বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে সিরিজ বৈঠক করেছি। আমাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রেখেছি। এখন স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক্সপার্টদের তৈরি করা নির্দেশনার পরই কাজ শুরু করা যাবে।’ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদফতরের টেকনিক্যাল কমিটি নির্ধারণ করে দেবে কোন এলাকা রেড জোন হবে। তাদের কাছ থেকে লিখিত পাওয়ার পর আমরা প্রয়োজনীয় কাজ শুরু করব। করণীয় নির্ধারণ করব। মনে রাখতে হবে, এখানে অনেকগুলো কাজ। অনেক সংস্থাকে নিয়ে করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা জানার পর লকডাউন কার্যকর করতে কমপক্ষে ৭২ ঘণ্টা সময় লাগবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা রাজাবাজার থেকে অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করছি। সেটি কাজে লাগাব।’