৪ মাসের বাচ্চা বাসায় রেখে করোনাযুদ্ধে ডা. আফরোজা !!
ফুটফুটে সন্তান। বয়স মাত্র ৪ মাস ৭ দিন। মায়ের বুকের দুধই যার একমাত্র খাবার। প্রতিটি ক্ষণ-মুহূর্ত যার মায়ের পরশে থাকার কথা। সময়-অসময়ে কান্নায় মায়ের বুকই যার জন্য পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আশ্রয়। এই মায়ের এখন অন্যতম যুদ্ধ সন্তানকে আদর-আহ্লাদে বড় করা। কিন্তু সেই মা বৈশ্বিক ম;হামারীর এই সময়ে নিজের মমতাময়ী সন্তানকে রেখে যাচ্ছেন আরেক যুদ্ধে।নবীন চিকিৎসক ডা. মাহমুদা সুলতানা আফরোজা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সন্তানকে বাসায় রেখে হাসপাতালে করোনাভা’ইরাসে আ’ক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে।
ডা. আফরোজা চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের জেনারেল সার্জারি বিভাগের মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত। গত ৫ ফেব্রুয়ারি তার কোল জুড়ে আসে এক পুত্র সন্তান-আজমাইন রহমান জেইন। গত বৃহস্পতিবার তিনি হাসপাতালের পরিচালক বরাবরে মাতৃত্বকালীন ছুটি বাতিলের আবেদন করেন। আবেদনে এ হাসপাতালে নতুন করে প্রস্তুত করা করোনা ওয়ার্ডের রোগীদের চিকিৎসার আগ্রহ প্রকাশ করেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রথমে ইতস্ততবোধ করলেও পরে ওই চিকিৎসকের আগ্রহের কারণে আদেবন গ্রহণ করে বলে জানা যায়।
ডা. মাহমুদা সুলতানা আফরোজা বলেন, ‘বর্তমানে যে বৈশ্বিক ম’হামা’রী চলছে, একজন চিকিৎসক হিসেবে ঘরে বসে থাকাটা সমীচীন মনে করছি না। চিকিৎসা না দিলে নিজের মধ্যে অপরাধবোধ কাজ করছে। বিবেকের তাড়ানায় আমি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এমন কঠিন মুহূর্তে চিকিৎসা না দিয়ে কি করে বসে থাকব। তাছাড়া করোনাকালীন এসময়ে চিকিৎসক সংকটও আছে। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি মাতৃত্বকালীন ছুটি বাতিল করে করোনা ওয়ার্ডের রোগীদের সেবা করার। পারিবারিকভাবেই আমি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
মা ও শিশু হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির ট্রেজারার রেজাউল করিম আজাদ বলেন, ‘বিষয়টি অত্যন্ত মানবিক, সঙ্গে চ্যালেঞ্জেরও। নিজের মমতাময়ী সন্তানকে রেখে ঝুঁকি নিয়ে করোনা ওয়ার্ডে কাজ করাটা অনেক বড় বিষয়। উন্নত মানসিকতা লালন করেন বলেই তিনি এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছেন। সাধুবাদ জানাই এ সিদ্ধান্তকে। এটি আমাদের সকলের জন্যই মানবিকতার প্রোজ্জল দৃষ্টান্ত। তবে সন্তানের স্বার্থে বিষয়টি এখনো বিবেচনাধীন।’
মা ও শিশু হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ডা. মাহমুদা সুলতানা আফরোজা ২০১৬ সালে এমবিবিএস পাস করেন। ২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর তিনি হাসপাতালের জেনারেল সার্জারি বিভাগের মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগ দেন। গত ৫ ফেব্রুয়ারি তিনি এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। বর্তমানে তিনি মাতৃত্বকালীন ছুটিতে আছেন। তার স্বামী ম. মাহমুদুর রহমান শাওন মা ও শিশু হাসপাতালের আজীবন সদস্য।