নিজ ধর্মের লোকদের বাধা – শিক্ষকের লা’শ সৎকার করল মুসলিম যুবকরা !!
ছিলেন জনপ্রিয় শিক্ষক। প্রায় ৩০ বছরের শিক্ষকতা জীবনে শিক্ষার আলো দিয়ে গড়েছেন বহু ছাত্রকে। বেঁচে থাকতে হয়তো কোনদিনই ভাবেননি, মৃত্যুর পর তিনি হবেন পরিবার ও সমাজের পাহাড় সমান বোঝা।
বাস্তবে এমনটাই ঘটেছে গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার চুপাইর উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হরিলাল দেবনাথের (৫৫) বেলায়। উপজেলার মোক্তারপুর ইউনিয়নের মৈশাইর গ্রামের বাসিন্দা ওই শিক্ষক করোনা উপসর্গ নিয়ে গত ১০ জুন বুধবার রাতে স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে মারা যান। মৃত্যুর পর তাঁর লা’শ সৎকার নিয়ে দেখা দেয় বিপত্তি। পরদিন সকালে সৎকারের কথা থাকলেও পরিবার, নিকট আত্মীয়-স্বজন এমনকি স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বী কোন সংগঠনও এগিয়ে আসেনি লা’শ সৎকারে।
জানতে পেরে মানবতার প্রশ্নে এগিয়ে আসেন শিক্ষকের গ্রামেরই বাসিন্দা কবির হোসেন পালোয়ান নামে এক যুবকের নেতৃত্বে কয়েকজন মুসলিম যুবক। উদ্যোগ নেন প্রিয় শিক্ষকের লা’শ সৎকারের। মুসলমান যুবকদের হিন্দু শিক্ষকের লা’শ সৎকারের বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শনিবার ভা’ইরাল হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই শিক্ষকের পরিবারের এক সদস্য জানান, মৃত্যুর পর হরিলাল দেবনাথের লা’শ ধর্মীয় রীতিতে সৎকারের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছিল। কিন্তু করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়ায় সন্দেহে এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাধার মুখে পড়ে তার পরিবার। লা’শ সৎকারে সনাতন ধর্মের কোন ব্যক্তি বা সংগঠন এগিয়ে আসেনি। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত লা’শ বাড়ির উঠানে পড়েছিল। পরে বাঁধা উপেক্ষা করে এগিয়ে আসেন কবির হোসেন পালোয়ান। তিনি আরো কিছু যুবক মিলে বিকালে লা’শ সৎকার করেন। এটি আমাদের জীবনে অনেক বড় শিক্ষা বলেও মনে করেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে কবির পালোয়ানের বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম। আর প্রধান শিক্ষক হরিলাল দেবনাথ একজন ভালো মানুষ ছিলেন। তাই নিজের দায়িত্ববোধ থেকেই স্থানীয় কিছু মুসলিম ভাইকে নিয়ে মানবিক কাজে এগিয়ে এসেছি।
কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ ছাদেকুর রহমান আকন্দ বলেন, শিক্ষক হরিলাল দেবনাথ করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন এমন খবর পেয়ে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। আইইডিসিআর থেকে পাওয়া প্রতিবেদনে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।